• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থের অভারে ছাত্রছাত্রীসহ স্কুল বিক্রি করতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ১৬, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম
অর্থের অভারে ছাত্রছাত্রীসহ স্কুল বিক্রি করতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস

আলোর ভুবন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়

ঢাকা : ১০০ জন ছাত্রছাত্রীসহ একটা স্কুল বিক্রির ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নামে এক স্কুল পরিচালক। আলোর ভুবন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে স্কুলটি দক্ষিণ জাঙ্গালিয়া, জলছত্র, মধুপুর, টাঙ্গাইলে।

মঙ্গলবার (১৬ স্কুলটি বিক্রি করা জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির। 

জাহাঙ্গীর কবিরের স্ট্যাটাসটি সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

‘প্রিয় দেশবাসী 
আমার সালাম /আদাব গ্রহণ করবেন। আমি জাহাঙ্গীর কবির। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার দক্ষিণ জাঙ্গালিয়ার সন্তান। পর সমাচার এই যে, আমি ২০০৮ সালে অত্র এলাকায় দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আমার সাথে আমার এলাকার তরুণ বন্ধুরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিদ্যালয়টি এগিয়ে চলার ১৪ বছর ছুয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলে আমাদের বিদ্যালয়ও বন্ধ রাখা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ ছিল বাংলাদেশের স্কুল কলেজ। যেহেতু মহামারী তাই আমরা আমাদের শিক্ষকদের ছাটাই না করে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছি যতদিন যতটুকু দেয়া সম্ভব হয়েছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আমরাও করোনা পরবর্তী বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করেছি। করোনার কারণে দেশের শত শত বেসরকারি স্কুল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু আমাদের এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই এবং এটিই একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় তাই আমরা এলাকার শিশুদের কথা চিন্তা করে স্কুলটি বন্ধ করে দেইনি। দীর্ঘ ১৪ বছরে বনাঞ্চলের এই বিদ্যালয় থেকে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। এই বিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হওয়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রী এখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।

আলোর ভুবন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়

 ভবিষ্যতেও অসংখ্য আলোকিত মানুষ বের হবে এখান থেকে। গত ১৪টি বছর আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এই বিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেছি। আমার অস্তিত্ব বলতে আমি কেবল আলোর ভুবন স্কুলকেই ভেবেছি। কখনোই নিজের শখ আহ্লাদের কথা চিন্তা করিনি। বিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য আমি একটা প্যান্ট দিয়েই বছর পার করে দিয়েছি। কোন রকম একটা শার্ট, এক জোড়া জুতা হলেই বছর পার করে দিয়েছি। জব করে যা বেতন পেতাম তার সিংহভাগই আমি ব্যয় করেছি এই স্কুলের পিছনে। বিদ্যালয় নিয়ে আমার স্বপ্নটা থাকতো মায়ের কাছে সন্তান যেমন থাকে।  বহু ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আজকের এই সুন্দর অবকাঠামো। এর পিছনে আপনাদের অনেকের সাহায্য সহযোগিতা রয়েছে। যারা সারাজীবন আলোর ভুবনের পাশে ছিলেন তাদের প্রতি আবারো চির কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

১৪ বছর আগে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ফুটপাতে ক্লাস করতো। তখন এত সুন্দর কিছুই ছিলো না। আমি মানুষের ভাঙ্গা বাড়িতে বাচ্চাদের ক্লাস নিয়েছি, ক্লাস নিয়েছি চায়ের দোকানের বেঞ্চগুলিতে, পরিত্যক্ত ক্লাব ঘরে। ধীরে ধীরে আজকের এই নয়নাভিরাম স্কুল। নিজেদের উদ্যোগে ১৪ বছর একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তবুও আমরা এতদূর আসতে পেরেছিলাম। 

বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাবে, এটা ভাবতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য ইতিমধ্যে আমি অসংখ্য মানুষের কাছে বিদ্যালয়ের সংকটের কথা জানিয়েছি। দ্বারে দ্বারে গিয়েও পাশে দাড়ানোর মত কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য মাসে প্রায় ২৫ হাজারের মত টাকা লাগে। এই বিশাল পরিমাণ অর্থের যোগান দেয়া আমার একার পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। অপর দিকে এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। দিন এনে দিন খায়। কারোর পক্ষেই বেতন ভুক্ত স্কুল হিসেবে ২০০/৩০০ টাকা মাসিক বেতন দেয়া সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেতন করলেও মাসে দেখা যাবে সর্বসাকুল্যে  ৪/৫ হাজারের মত উত্তোলন হচ্ছে, যা একজন শিক্ষকের বেতনেরও   কম। দীর্ঘ দিন টেনেটুনে, শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে বেশ কিছু লোন হয়ে আছে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখার মত কোন উপায় আমার জানা নেই। 

আলোর ভুবন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালেকর স্ট্যাটাস

যেহেতু ১৪ বছরেও কোন সরকারি সহযোগিতা আমরা পাইনি তাই সরকারি সহযোগিতার আশাও বাদ দিয়েছি। কোন হৃদয়বান ব্যক্তি, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি বিদ্যালয়টির দায়িত্ব নিতে চাইলে বর্তমান পরিচালক হিসেবে আমার কোন আপত্তি নেই। যদি কোন প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়টির সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করতে আগ্রহী হয় তাতেও আমি স্বাগতম জানাবো। তবুও আমার মননে মস্তিষ্কে, রক্তে মিশে থাকা  বিদ্যালয়টি চলমান থাকুক। বিদ্যালয়হীন বনাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক । প্রাণচঞ্চল থাকুক মানুষ গড়ার কারখানাটি। আমি ১৪ বছর এগিয়ে এনেছি। জানিনা কতটুকু করতে পেরেছি। সীমাবদ্ধতার জন্য অনেক কিছুই করা হয়নি। ইচ্ছে ছিল অনেক কিছুই করার। এই দীর্ঘ ১৪টা বছর আপনারা অনেকেই আমাকে সাপোর্ট করেছেন, পাশে থেকেছেন, সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। বিদ্যালয়ের এই নিদারুণ ক্রান্তিকালে আপনাদেরকেও এই সিদ্ধান্তটি জানানোর প্রয়োজন মনে করেছি। 

জাহাঙ্গীর কবির 
পরিচালক 
আলোর ভুবন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় 
দক্ষিণ জাঙ্গালিয়া, জলছত্র, মধুপুর, টাঙ্গাইল।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!