• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‌‘জনতার জিয়ায়’ ক্ষুব্ধ হেলাল হাফিজ


ফেসবুক থেকে ডেস্ক নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ০৫:৪৩ পিএম
‌‘জনতার জিয়ায়’ ক্ষুব্ধ হেলাল হাফিজ

ঢাকা: বঙ্গবন্ধুকে স্বৈরাচারী বলে কটাক্ষ এবং জিয়াউর রহমানকে প্রশংসা করে লিখা কবিতা ‘জনতার জিয়া’ নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড় চলছে। যৌবনের কবি খ্যাত হেলাল হাফিজ ‘জনতার জিয়া’ শিরোনামে এই কবিতাটি লিখেছেন বলে ফেসবুকে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে। 

এর পর এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যেন থামছেই না। একটি পক্ষ হেলাল হাফিজকে নিয়ে বিভিন্ন কুৎসা রটানো শুরু করে। অন্য একটি পক্ষ হেলাল হাফিজের পক্ষ নিয়েছেন। কিন্তু কবি হেলাল হাফিজ নিজেই তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জনতার জিয়া’ শিরোনামে যে কবিতাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে তা তিনি লিখেননি।

শুধু কি তাই, কথিত ওই ‘জনতার জিয়া’ শিরোনামের কবিতাটি পরে গান হিসেবে বিটিভিতে আবৃত্তিরও অভিযোগ ওঠে আওয়ামী ঘেষা শিল্পী ফকির আলমগীরের বিরুদ্ধে। তবে কখন তিনি এ কবিতা আবৃত্তি করেছেন, তার কোনও সঠিক প্রমাণ মেলেনি।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার গণভবনে সাক্ষাৎ করে আসেন কবি হেলাল হাফিজ। প্রধানমন্ত্রীও অসুস্থ কবির সব চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। এর কিছুদিন পরই ‘জনতার জিয়া’ কবিতাটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বলা হচ্ছে, এটি নাকি হেলাল হাফিজেরই লিখা কবিতা। 

এই সময় বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করে কার লেখা কথিত কবিতাটি ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদি এই কবি সত্যিই এমন কোনো লেখা লিখেন তাহলে তাকে কেন প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা সহায়তা দেবেন- সে প্রশ্ন করছেন অনেকেই।

স্বনামধন্য এ কবির নাম জড়ানোর কারণেই বিষয়টি বেশি আলোচনায় আসে। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন হেলাল হাফিজ। এ ধরনের প্রচারের পর ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে হেলাল হাফিজের হাতে লিখা একটি চিরকুট ভেসে বেড়াচ্ছে।

ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘যিনি বা যারা আমাকে নিয়ে অসত্য প্রচারণা করছেন, আমি তাদেরও আন্তরিক মঙ্গল কামনা করি।’ এ বক্তব্যের নিচে কবির স্বাক্ষর রয়েছে। হেলাল হাফিজ স্বাক্ষরিত সেই পত্রটিও হেলাল হাফিজের নয় বলে দাবি করছেন কেউ কেউ।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে কবি হেলাল হাফিজ দাবি করেছেন, ওই কবিতা তিনি লেখেননি। দৈনিক দেশ পত্রিকায় তার নামে কবিতা ছাপার বিষয়টিও মিথ্যা বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি জিয়া পরিষদের সভাপতি ছিলেন বলে প্রচার আছে তাও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন হেলাল হাফিজ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যে ফকির আলমগীরও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, যে গানটির কথা ছড়ানো হয়েছে, তার গাওয়া গানের ভাষা এমন ছিল না। আর তিনি যে গান তখন গেয়েছেন, সেটিও হেলাল হাফিজের লেখা না। 

গত শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ‘জনতার জিয়া’ শিরোনামে কোনও কবিতা কবি হেলাল হাফিজ লিখেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করে ফেইসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে ঘিরে বিষয়টি সামনে চলে আসে। পরে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয়। এরপর তা আরও ছড়িয়ে যায়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফকির আলমগীর  বলেন, ‘এখন হেলাল হাফিজকে সরকার কিছু টাকা পয়সা দিচ্ছে তো, তাই তার নামে বদনাম ছড়াচ্ছে কেউ কেউ।’

হেলাল হাফিজ (জন্মঃ ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে। ওই গ্রন্থটির ১২টি সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিস্পৃহতা দেখা যায়। 

২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’;- এ কবিতার দুটি পংক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। দেরীতে হলেও ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার । আর মাতার নাম কোকিলা বেগম। ১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন । সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। কবিতার জন্য পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা প্রভৃতি। কবিতায় তিনি ২০১৪ সালের বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!