• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

তুরস্কে রানঅফ ভোট শেষ, শুরুতে এগিয়ে এরদোগান


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ২৮, ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম
তুরস্কে রানঅফ ভোট শেষ, শুরুতে এগিয়ে এরদোগান

ঢাকা : নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে তুরস্কে রানঅফ ভোট শেষ হয়েছে। প্র‍াথমিক ভোটে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান আরও শক্তিশালী হয়ে রানঅফ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

কারণ, প্রাথমিক ভোটে তৃতীয় স্থান পাওয়া সিনান ওগান সরাসরি এরদোয়ানের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন। ওগান ৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

গত ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করছেন এরদোয়ান। তার নেতৃত্বে দেশটি ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে হেঁটেছে। তার বৈদেশিক নীতি পেশীবহুল এবং তিনি একরোখা ভাবে অপ্রচলিত উপায়ে দেশের অর্থনীতি পরিচালনা করে গেছেন।

পুরো বিশ্বের মত তুরস্ককেও রেকর্ড মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বরং অন্যান্য অনেক দেশের ‍তুলনায় সেখানে পরিস্থিতি নাজুক। তার উপর ভোটের তিন মাস আগে হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প, যা অর্ধলক্ষের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় যথাযথভাবে সাড়া দিতে না পারার জন্য দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হয় এরদোয়ান সরকারকে। তারা নিজেরাও তাৎক্ষণিক সাড়ায় দেরি করে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন।

ফলে ভোটের আগের জনমত জরিপগুলো ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ানের পরাজয়ের ইঙ্গিতই দিয়েছিল।

কিন্তু গত ১৪ মের ভোটে সেই হিসাব পাল্টে গেছে। প্রাথমিক ভোটে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিরিচতারোলুর থেকে প্রায় ৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। তবে অল্পের জন্য রানঅফ এড়াতে প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হন।

সেবার এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলন। ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন দেশটির তরুণ ভোটাদের পছন্দের প্রার্থী কিরিচতারোলু।

তুরস্কের নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত কার হাতে যাচ্ছে তা দেখতে শুধু তুর্কীরাই নয় বরং পুরো আন্তর্জাতিক অঙ্গন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

কারণ, বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে তুরস্ক।

রোববার (২৮ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (জিএমটি ০৫০০) থেকে রানঅফ ভোট গ্রহণ শুরু হয়। স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা (জিএমটি ১৪০০) পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।

সন্ধ্যা নাগাদ ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হতে শুরু করবে।

প্রাথমিক ভোটের দিনের তুলনায় আজকে ভোটকেন্দ্রগুলো অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রাথমিকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

আজকের ভোটে শুধু তুরস্কের নেতাই নির্বাচিত হবেন না। বরং নেটোর সদস্য সাড়ে ৮ কোটি মানুষের দেশটি কীভাবে পরিচালিত হবে সেটাও ঠিক হবে। জানা যাবে, দেশটির অর্থনীতি ভবিষ্যতে কোন পথে অগ্রসর হবে; যেখানে গত এক দশকে ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রার মূল্যমান ১০ গুণ পড়ে গেছে।

দেশটির বৈদেশিক নীতিই বা কী হবে, যেটাও এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরদোয়ানের তুরস্ক ক্রমে রাশিয়া ও পারস্য দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছিল, যা ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত করেছে পশ্চিমাদের।

এদিন দুপুরের দিকে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের এশিয়া অংশে তার বাড়ির কাছের একটি স্কুলে ভোট দেন। আগে থেকেই তার সমর্থকরা ওই ভোটকেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন। ভোট দেওয়ার আগে তিনি সমর্থকদের সঙ্গে করমর্দন করেন এবং কথা বলেন।

তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ভোট দিতে আসা নূরান বলেন, ‘‘ঈশ্বরের ইচ্ছায় তিনিই জয়লাভ করবেন। আমাদের দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। যদি কেউ একজন সেগুলো সমাধান করতে পারে, তিনিই পারবেন।”

রাজধানী আঙ্কারায় ভোট দিতে আসা ৩২ বছলের গুলচান দেমিরোজের মত অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন এই ভোট পরিবর্তন নিয়ে আসবে। না হলে তার বন্ধুরা উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে চলে যাবে, যেটা করার কথা তিনিও ভাবছেন।

বলেন, ‘‘এই দেশের আরো ভালো কিছু প্রাপ্য। আমাদের এমন একজনকে দরকার যার সকলকে একসাথে নিয়ে কাজ করার মনমানসিকতা আছে। একজন শক্তিশালী, শীতল এবং দূরের মানুষকে নয়, যিনি একা হাতে শাসন করেন।”

গুলচান টেক্সটাইল শিল্পে কাজ করেন। তিনি সরাসরি কিরিচতারোলুকে ভোট দেওয়ার কথা জানান।

এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী ৭৪ বছরের কিরিচতারোলু আঙ্কারায় ভোট দিয়েছেন। তিনি ছয় দলের বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তুরস্কের জাতির পিতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক এর দল রিপাবলিকান পিপুলস পার্টির (সিএইচপি) নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।

প্রাথমিক ভোটে এরদোয়ানের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও রানঅফ ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কিরিচতারোলু।

চরম মূল্যস্ফীতি, সংকটে থাকা অর্থনীতি এবং ভূমিকম্পকে ছাপিয়ে রানঅফ ভোটে বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছিল তুরস্কের শরণার্থীরা।

তুরস্কই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশটিতে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এই শরণার্থীদের পুঁজি করে কিরিচতারোলু ভোটাদের মন জিততে চেয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

যদিও কিরিচতারোলু ও তার জোট যেভাবে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের কথা বলেছেন সেটা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

আর এরদোয়ানের অভিযোগ, কিরিচতারোলু ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। বলেন, যদি কিরিচতারোলু জিতে যান তবে তা সন্ত্রাসীদের জন্য জয় হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!