ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবি: ৬৮ জন অভিবাসীর মৃত্যু

ঢাকা: ইয়েমেন উপকূলে অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৭৪ জন। নিহতদের সবাই আফ্রিকার নাগরিক।

সোমবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেন উপকূলে আফ্রিকার অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নৌকাটিতে মোট ১৫৪ জন যাত্রী ছিলেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।

আইওএম-এর ইয়েমেন শাখার প্রধান আবদুসাত্তার এসোয়েভ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আবিয়ান প্রদেশের খানফার জেলায় ৫৪ জনের মরদেহ ভেসে ওঠে এবং আরও ১৪ জনের মরদেহ কাছাকাছি এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ইয়েমেনের স্বাস্থ্য বিভাগও নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিহতদের দাফনের জন্য শহরের শাকরা এলাকার কাছে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জাঞ্জিবার শহরের স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল কাদের বাজামিল। তিনি বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল থেকে ইয়েমেন হয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের জন্য এ সমুদ্রপথটি দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী এক রুট হিসেবে পরিচিত।

২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এই পথ ধরে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। যদিও ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে হুথি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির ফলে সহিংসতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং মানবিক পরিস্থিতি সামান্য উন্নত হয়েছে।

তবে সংঘাতপীড়িত সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো দেশ থেকে এখনো অনেকে ইয়েমেনের মাধ্যমে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে যাত্রা করছেন। আইওএমের মতে, এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন রুট।

নৌকাগুলোতে প্রায়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বোঝাই করা হয়, যা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।

আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইয়েমেন পৌঁছেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ২০০। সংস্থাটি বলছে, সমুদ্রপথে নজরদারি বাড়ার ফলে চলতি বছর এই সংখ্যা কমেছে।

গত দুই বছরে এই রুটে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ৫৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া গত এক দশকে অন্তত ২ হাজার ৮২ জন নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৯৩ জনের ডুবে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

বর্তমানে ইয়েমেনে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী অবস্থান করছেন বলে আইওএম জানিয়েছে।

ওএফ