ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলে দীর্ঘ বন্দিজীবন শেষে ঘরে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজায় ফিরে পরিবার–পরিজনকে দেখে অনেকে আবেগে ভেঙে পড়ছেন। কিন্তু ফিরে আসার আনন্দ ছাপিয়ে যাচ্ছে বন্দিদশার ভয়াবহ স্মৃতি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মুক্তিপ্রাপ্তদের বর্ণনায় এক অমানবিক কারাগারের চিত্র। তাদের ভাষায়, এটি কোনো সাধারণ কারাগার নয়, যেন এক জীবন্ত নরক।
বন্দিরা জানিয়েছেন, কারাগারে তাদের রাখা হতো কসাইখানার মতো পরিবেশে। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না, নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতে হতো। ঘুমানোর জন্য দেওয়া হতো না তোশক বা বিছানা। প্রতিটি দিন কাটত অপমান, অনাহার ও শারীরিক যন্ত্রণায়।
দীর্ঘ ১৯ মাস বিনা অভিযোগে আটক থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাংবাদিক ইব্রাহিম আল–খালিলির ভাই মোহাম্মদ আল–খালিলি। তিনি জানিয়েছেন, পুরো বন্দিজীবন ছিল এক ভয়াবহ সংগ্রাম। নিয়মিত মারধর, অপমান ও অনাহারে কাটাতে হয়েছে তাদের। তার অভিযোগ, বন্দিত্বের পুরো সময়ই কারাগারের পরিবেশ ছিল অমানবিক।
ইসরায়েলি হেফাজতে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই তাকে রাখা হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ প্রশাসনিক আটক হিসেবে গণ্য।
মুক্তিপ্রাপ্তদের কেউ কেউ বলেছেন, জেল থেকে বেরিয়ে সূর্যের আলো দেখা, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ানো-এ যেন নতুন জীবন পাওয়ার সমান।
গাজায় ফিরে আসা বন্দিদের মধ্যে ছিলেন অন্তত ৫৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে ২৪ জন নার্স, সাতজন চিকিৎসক ও দুইজন প্যারামেডিক। মানবাধিকার সংস্থা হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচ জানিয়েছে, এসব স্বাস্থ্যকর্মীর অনেককেই দখলদার বাহিনী হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়েছিল যখন তারা দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, এখনো ১১৫ জন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ইসরায়েলের হেফাজতে রয়েছেন।
সংস্থার পরিচালক মুয়াথ আলসের বলেছেন, চিকিৎসক ও নার্সদের এভাবে আটক রাখা সরাসরি যুদ্ধাপরাধের শামিল। এতে শুধু চিকিৎসা অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়নি, ধ্বংস করা হয়েছে মানবতার ন্যূনতম সীমারেখা।
এদিকে ১৯ বছর পর মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনি ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক বাসিম খানদাকজি। তবে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েও ফিরতে পারেননি নিজের মাতৃভূমিতে। ইসরায়েল তাকে নির্বাসিত করেছে মিসরে। ৪১ বছর বয়সী এই লেখক কারাগারে থেকেই লিখেছেন একাধিক উপন্যাস ও প্রবন্ধ। তার লেখা A Mask, the Color of the Sky গত বছর পেয়েছে আন্তর্জাতিক আরবি সাহিত্য পুরস্কার।
আল জাজিরার তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২৫০ জন আজীবন সাজাপ্রাপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি গাজা যুদ্ধ চলাকালীন আটক ১ হাজার ৭১৮ জনকেও মুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘ তাদের ‘জোরপূর্বক নিখোঁজ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের চোখে এখনো ভয়, কিন্তু বুকভরা আশা-একদিন তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পাবেন, কোনো কারাগার নয়, মুক্ত আকাশেই থাকবে তাদের জীবন।
এসএইচ







































