• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেই দেওবন্দের নাম বদলে দিতে চায় বিজেপি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ১৮, ২০১৭, ১২:২২ পিএম
সেই দেওবন্দের নাম বদলে দিতে চায় বিজেপি

ঢাকা: ভারতের প্রখ্যাত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম যেখানে প্রতিষ্ঠিত, সেই দেওবন্দের নাম বদলে দেয়ার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব তুলেছেন এক বিজেপি নেতা।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিজেশ সিং এই কথা জানান।

তার মতে, মহাভারতে ওই এলাকার নাম ছিল আগে ‘দেওভৃন্দ’। আশপাশের এলাকাগুলিও মহাভারতে জায়গা পেয়েছে। সেই আদিকালের নামেই এখন দেওবন্দকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান বিজেপি বিধায়ক ব্রিজেশ সিং।

অন্যদিকে দারুল উলুমের এক প্রাক্তন কৃতী ছাত্র বলছেন, শুধু ইসলামী শিক্ষার জন্য নয়, ওই প্রতিষ্ঠান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেও বহুল পরিচিত। দেওবন্দের নাম বদল করা হলে তা ইতিহাস বিকৃতির শামিল হবে বলে মন্তব্য ওই মুসলিম নেতার।

উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ থেকে সদ্য নির্বাচিত বিজেপির বিধায়ক ব্রিজেশ সিং জানিয়েছেন যে তিনি নিজের অঞ্চলের নাম বদল করতে চান। নতুন বিধানসভায় সরকারের কাছে তিনি যে প্রথম প্রস্তাব দেবেন, সেটাতেই দেওবন্দের নাম বদল করে দেওভৃন্দ রাখার অনুরোধ জানাবেন তিনি।

তিনি বলেন, ওই এলাকার উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। তখন জায়গাটার নাম ছিল দেওভৃন্দ। পরে দেওবন্দ নামটা এসেছে বলেও তিনি মনে করেন।

তিনি আরও জানান, ‘দেওবন্দ এলাকার উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে - দেওভৃন্দ নামে। এর পাশে একটি এলাকা আছে রণখন্ডী। সেখানে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের রণখণ্ড তৈরি হয়েছিল। আরেকটি গ্রাম আছে জঠওয়ালা- মহাভারতে যেটার নাম ছিল যক্ষশালা। এছাড়াও দেওবন্দে বহু প্রাচীন শক্তিপীঠ রয়েছে। এসব কারণেই ভোটের প্রচারের সময়ে সাধারণ মানুষ অনুরোধ জানিয়েছিল যাতে দেওবন্দের নাম বদল করে দেওভৃন্দ রাখা হয়। সেই প্রস্তাবটাই নতুন সরকারের কাছে রাখতে চাই আমি।’

মহাভারতে উল্লেখিত এলাকাগুলি আসলেই দেওবন্দ বা তার আশপাশের অঞ্চল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সারা পৃথিবীতে দেওবন্দ পরিচিতি পেয়েছে ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান দারুল উলুমের জন্য।

১৮৬৬ সালে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানে দেয়া ইসলামী শিক্ষা যেমন সারা পৃথিবীতে মান্যতা পায়, তেমনই এখানকার ধর্মীয় ব্যাখ্যা বা ফতোয়াও মান্যতা পায় ইসলামী সমাজে।

দারুল উলুমের প্রাক্তন কৃতী ছাত্র মৌলানা মুফতি এমদাদুল্লাহ এখন জমিয়তুল আ ইম্মা অল উলেমার সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টা তো সব ধর্মেই থাকে, মুসলমানদেরও আছে। সেক্ষেত্রে দারুল উলুমের অবদান তো আছেই। কিন্তু তার থেকেও বড় ভূমিকা থেকেছে দারুল উলুমের- সেটা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। এখন যদি কেউ স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমান নেতাদের ভূমিকাকে ভুলে যেতে চান, তিনি ভোটে জিতেছেন বলে, তা তিনি করতেই পারেন। যেভাবে মুসলমান নেতাদের নাম মুছে দেয়া হয়েছে, এবার জায়গার নামটাও বদলে ফেলা হবে। এ তো নোংরা রাজনীতি হচ্ছে।’

অনেকে মনে করছেন, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেওবন্দের নাম পরিচিত হয়ে গেছে বলেই এখন মহাভারতের যুগের নাম ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

কিন্তু শহরের নাম বদল এত সহজ হবে না বলেই মনে করেন অনেকে, কারণ দারুল উলুম আর দেওবন্দ শহর - এই দুটো অঙ্গাঙ্গিভাবে জুড়ে রয়েছে। সেখানকার হাজার হাজার দোকানদার হিন্দু, আর খদ্দেররা দারুল উলুমের হাজার পাঁচেক মুসলমান ছাত্র বা তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসা আত্মীয় স্বজন অথবা কয়েক শ শিক্ষক।

অর্থনৈতিকভাবে দুই ধর্মের মানুষ একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকলেও এমনিতে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস কিন্তু আলাদাই।

তবে ব্রিজেশ সিং অবশ্য দাবি করছেন যে, এলাকার নাম বদল হলেও তার এলাকার হিন্দু আর মুসলমান- সবার উন্নয়নের জন্যই তিনি পরিকল্পনা করবেন। সেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ আনবেন না বলেই তার দাবি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!