ঢাকা : ছয় দফা দাবিতে সারাদেশে একযোগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় স্মারকলিপি প্রদানে অংশ নেন দেশের সকল ভূমি কর্মকর্তাগণ।
দাবিতেগুলো হলো-
এক. ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাগণের উন্নীত বেতন স্কেল বাস্তবায়নের উপর ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করা।
দুই. ০৩ মাসের মধ্যে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার শূন্যপদে নব-নিয়োগ ও সুদীর্ঘ বছর যাবত কর্মরত ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান করা।
তিন. ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসে কম্পিউটার সামগ্রী ফটোকপি মেশিন, উন্নতমানের প্রিন্টার এবং কন্টিজেন্সী ভ্রমনভাতা বিল সরাসরি প্রদান করা।
চার. আইটি খরচের জন্য নামজারী এবং হোল্ডিং এন্ট্রির টাকা সরাসরি ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসে প্রদান করা।
পাঁচ. তদন্তকাজে মোটর সাইকেল সরবরাহ করা ও
ছয়. অফিসে রাত্রিকালীন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণসহ নিয়োগ বিধি প্রশাসনিক সকল কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে গত ৩০ মে ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের ০৭.০০.০০০০.১৬১.৩১.০২৮.১২(অংশ) ১২৪ নং স্মারকে অর্থ বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয় হতে অফিস স্মারক জারী করা হয়। উক্ত স্মারকের আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে গত ২২ জুলাই ২০১৩ খ্রিঃ তারিখে ৩১.০০.০০০০, ০৪৬.১২.২০৮.১২.৫০৭ ও ৫০৮ নং স্মারকে জিও জারী করলে বর্ণিত স্মারকের আলোকে মাঠ পর্যায়ে বেতন নির্ধারণ ও উত্তোলনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ভূমি মন্ত্রনালয় হতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারকসহ ভূমি মন্ত্রনালয়ের ৫০৭ ও ৫০৮নং স্মারক অনাকাঙ্খিত ভাবে ভূমি মন্ত্রনালয় হতে গত ২৫ জুলাই ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪৬.১২.২০৮, ১২, ৫২৬ নং স্মারকের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়। ফলে ২০১৩ খ্রিঃ হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারকের শর্তানুযায়ী নব নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে ২৩ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিঃ তারিখের সচিব কমিটির ২০১৮ সনের ৭ম সভায় উত্থাপিত হলে উক্ত সভার ২২ নং সিদ্ধান্তের ১নং অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের উন্নীত বেতন স্কেলের সাথে পুনঃ নির্ধারত জনবল নিয়োগ/ পদোন্নতি যোগ্যতা অনুযায়ী নতুন নিয়োগ বিধি প্রনয়ণ পূর্বক পদ দুটিতে নতুন জনবল নিয়োগ/পদোন্নতি কার্যক্রম চালু করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হলে সর্বশেষ ১৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা ২০২১ নিয়োগ বিধির গেজেট প্রকাশিত হয়, যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে ৩১. ০০.০০০০.০৬.২২ ০১৩.১৯-৩৮১নং স্মারকে কার্যকর করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার (সকল) জেলা প্রশাসক (সকল) মহোদয়গণকে নির্দেশ দেয়া হয়।
২০১৩ হতে এ পর্যন্ত অগণিতবার বেতন স্কেল এবং পদোন্নতি প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করলেও কার্যত কোনো পদপেক্ষ গ্রহণ না করার ফলে মাঠ পর্যায়ে একাধিক অফিসের দায়িত্বে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাগণ রয়েছেন, যাদের দীর্ঘ ১৯ (উনিশ) বছর পর্যন্ত পদোন্নতি নেই। অন্যদিকে মৃত্যুবরণ ও অবসরজনিত কারণে লোকবল প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এপর্যায়ে কর্মরতদের দাপ্তরিক কাজ প্রতিপালন করা কষ্টসাধ্য হওয়া সত্ত্বেও রাত দিন পরিশ্রম করে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ভূমি উন্নয়ন কর পাইলটিং করা, ই-নামজারী ইত্যাদি পরিবারের লোকজনদেরকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন করছে। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ জ্ঞাত থাকা সত্বেও কোনো প্রকার নিস্পত্তির পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বরং ভূমি মন্ত্রণালয় হতে ২৫ জুলাই ২০১৩ তারিখের ৩১,০০, ০০০,০৪৬.১২.২০৮.১২-৫২৬ নংস্মারকে উন্নীত বেতন স্কেল বাস্তবায়নের উপর জারীকৃত স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার না করে সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের ৩৮১নং স্মারকে চুড়ান্ত নিস্পত্তিকৃত বিষয়টিকে উপেক্ষা করে পূনরায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ০৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ৪২৩ নং স্মারকপত্র প্রদান করায় অত্র সমিতির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যায়ে কাল বিলম্ব না করে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যে বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি নেত্রকোণা জেলা শাখার পক্ষ হতে উক্ত ছয় দফা দাবী অনতিবিলম্বে কার্যকর করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করা হয়।
বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি জনাব মোতাহার হোসেন এবং মহাসচিব জনাব আসাদুজ্জামান আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন।
ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা গবেষক জনাব এনামূল হক পলাশ জানান, জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বাক্ষরিত গেজেট ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অদৃশ্য কারণে বার বছর ধরে স্থগিত রাখাটা চরম বিষ্ময়কর ও হতাশাজনক। দক্ষ ও সেবামূলক ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে একটি দক্ষ জনবল সময়ের দাবি।
জনবল সংকটের কারণে জনগণ তাদের প্রাপ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও জানান নিঃসন্দেহে ২৫ জুলাই ভবিষ্যতে ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে আখ্যায়িত হবে।
সোনালীনিউজ/এসএন







































