• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকটে বহুমাত্রিক সমস্যায় বাংলাদেশ


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নভেম্বর ১১, ২০১৭, ০৭:০৪ পিএম
রোহিঙ্গা সংকটে বহুমাত্রিক সমস্যায় বাংলাদেশ

ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য চলতি অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে অন্তত ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে। যা বাংলাদেশের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশ। যা মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

শনিবার(১১ নভেম্বর) ‘রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। সেমিনারটির আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি)। এতে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অংশগ্রহণ করেন।

এরমধ্যে আইএমএফ প্রধান, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মান, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়ও একশন এইড, সেভ দ্যা চিল্ড্রেন ও কয়েক এনজিওর প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে সিপিডি ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থারি একটি যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এই তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত কোন দেশ একজন রোহিঙ্গাকেও নিতে চায়নি। তৃতীয় কোনো পক্ষও এগিয়ে আসেনি। এজন্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হবে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এরপরও শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। মিয়ানমার সফরে গিয়ে ২৩ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নেপিদো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তিটা হবে।

সাবেক নির্বাচ কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে আগে বুঝতে হবে সমস্যাটি বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের, নাকি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের। বাংলাদেশকে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে দাবি জানাতে হবে, রোহিঙ্গাদের আদিবাসি জাতি হিসেবে মিয়ানমারকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আগে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই স্বীকৃতি না দিলে আলোচনা করে খুব একটা সফল হবে না। সমস্যা যেভাবে প্রকট আকার ধারণ করেছে তাতে আগামী বিশ বছরেও এ সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন তিনি।

রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এই তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন। সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উচ্চতর পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর জোর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সংকট সমাধানে প্রথমে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিবো কি-না সে বিষয়ে। বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকট ১৯৭০ বা ১৯৯০ সালের মতো নয়। এখনকার পরিস্থিতি খুবই ক্রিটিক্যাল। বাঙালি বলে পরিচয় দিয়ে তাদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। একটি সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এই গণহত্যা। এটা আর্ন্তজাতিক ইস্যু। এ সমস্যা সমাধানে যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে তা আরও জোরালো করতে হবে।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে সিপিডি’র চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সব ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিভাবে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করা যায়, বিষয়টি নিয়ে আরও সিরিয়াস চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কেননা, রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে অবস্থান করলে আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়বে। রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিশ্বব্যাপী ৬৫ মিলিয়ন মানুষ এখন উদ্বাস্তু। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বোচ্চ উদ্বাস্তু আশ্রয়দাতা। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বিরাট বোঝা বলা যায়। এটা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নিতে হবে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী উদ্যোগ।

অধ্যাপক ড. সুকমল বড়ুয়া বলেন, এটি একটি মানবজাতির সমস্যা। মানবতার সমস্যা। মুসলিম বা বুদ্ধ বলে তাদের আখ্যায়িত না করে মানুষ হিসেবে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সিপিডির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বলা হয়। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!