• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

শীত গরিব অসহায়দের বিপৎসংকেত


আকিব হোসাইন ডিসেম্বর ৭, ২০২০, ০৩:২৪ পিএম
শীত গরিব অসহায়দের বিপৎসংকেত

ঢাকা : এখন শীতের মৌসুম। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় প্রভাবিত সারা দেশে প্রচণ্ড শীতের আমেজ। গ্রীষ্মের বিদায় আর শীতের আগমন ডেকে আনে গরিব অসহায়দের বিপৎসংকেত। শীতকাল গরিব অসহায়দের জন্য দুর্দিনও বটে। কেননা উত্তরের সেই হাড় কাঁপানো শীতে গরিব অসহায়দের পক্ষে জীবনযাপন করাটা খুবই দুষ্কর। আমাদের দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার বেশি। বেশিরভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। শীতে গরিব অসহায়দের শীতের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক জেলাতে দরিদ্র পরিবার বিদ্যমান। শীতকালে তাদের অসামর্থ্যের কারণে তারা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করে থাকেন। তন্মধ্যে কেউবা অতি প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে জীবিকার তাগিদে শীতকে উপেক্ষা করে রিকশা চালানো, কৃষিকাজ করা, কামারের কাজ করা কিংবা পরিবারের খরচ সামলাতে বিভিন্ন কলকারখানায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। জীবন তাদের পথে নামায়, প্রকৃতি তাদের পরিহাস করে। তারা কাঁপতে কাঁপতে রিকশার হাতল ধরে, কাস্তের মুঠি ধরে।

শীতকালে রাস্তার পাশে পথশিশুদের অর্ধাহারে-অনাহারে জর্জরিত জীবনের চিত্র প্রত্যক্ষ করে থাকি। অনেকে ছাউনি তৈরি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনোরকম জীবনযাপন করে থাকে। কাউকে প্রতিবন্ধী কিংবা দেউলিয়ারূপে রাস্তার পাশে অবস্থান করতে দেখা যায়। শীতে এসব নিম্ন পর্যায়ের পরিবারগুলো ডাইরিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি এবং নানান রোগে আক্রান্তের শিকার। শীতে বিশেষ করে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে এসব রোগের বিস্তার ঘটে বেশি। কী নির্মম এই বেঁচে থাকা, কী পরিহাস এই জীবনের! কষ্ট করে বাঁচে, নষ্ট হয়ে বাঁচে!

আমাদের দেশে গরিব অসহায়দের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে থাকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। শীতকালে গরিবদের মাঝে শীতের পোশাক, কম্বল, গরম খাবার ও আর্থিক সহায়তা করার প্রবণতা লক্ষণীয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য বটে, আমাদের দেশে গরিবদের সহযোগিতায় খুব কম লোকই পাওয়া যায়, যারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে সক্ষমতা বোধ করে। আবার গরিব অসহায়দের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু এসব সহযোগিতার মাঝে স্বজনপ্রীতি উপস্থিত কিংবা সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডও ঘটতে দেখা যায়, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের প্রত্যাশার হতাশা, এর থেকে কি উত্তরণের কোনো পথ নেই? এই কলঙ্ক মোছার কোনো ইরেজার নেই?

কথিত রয়েছে, সেবাই পরম ধর্ম। কিন্তু সে সেবায় আমাদের নিজেদের মাঝে আত্মসচেতনতা থাকতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য এটার মর্মার্থ বুঝে গরিব অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। সামর্থ্যানুযায়ী প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও বিভিন্ন ধরনের সংগঠন কিংবা মানবিক সংস্থা কর্তৃক গরিব অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে যদি আমাদের সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন তাহলে এসব মানুষের মুখে হাসি ফোটানো খুবই সহজলভ্য হবে।

আমরা শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারি। কেননা শীতে নিম্ন পর্যায়ের পরিবারগুলো হাঁড়কাপানো শীতে অতি কষ্টবোধ করে জীবনযাপন করে থাকেন। বলা হয়, মাঘের শীতে বাঘে পালায়। আমাদের দেশে এখন শীতের তীব্রতা যদিও কম কিন্তু এই স্বল্প শীতের তীব্রতা দেশের উত্তরাঞ্চলে খুবই ব্যাপক আকারে বাড়ছে। শীতের আগমন হয়েছে অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। আর এই শীতের প্রভাব চলমান থাকবে মার্চ কিংবা এপ্রিল মাস পর্যন্ত। কয়েকদিন পর কুয়াশা আর হালকা বৃষ্টিপাত দেখা যাবে। তখন শীত তীব্র থেকে তীব্রতর হতে দেখা যাবে। ঘন ঘন কুয়াশা আমাদের চোখের দৃষ্টিকে সংকীর্ণ করে থাকে।

সর্বোপরি বলা যায়, গরিব অসহায়দের কষ্টকে অনুভব করে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। গরিব অসহায়দের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার মাধ্যমেই সম্ভব তাদের দুঃখ-দুর্দশার দূরীকরণ। তাই বলি, আসুন গরিব অসহায়দের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই। কেননা এটা আমাদের জন্য মানবিক কর্তব্যও বটে।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ শাখা

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!