• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক স্থাপত্যে নির্মিত ৪০০ বছরের পুরনো ‘বরুণা মসজিদ’


মুস্তাকিম আল মুনতাজ জুলাই ২৭, ২০২১, ০২:০৪ পিএম
ঐতিহাসিক স্থাপত্যে নির্মিত ৪০০ বছরের পুরনো ‘বরুণা মসজিদ’

ঢাকা : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫নং কালাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বরুণা গ্রামে অবস্থিত আনুমানিক ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বরুণা বড় জামে মসজিদ। মসজিদটির স্থাপনা নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও এলাকার স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ মসজিদটি সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটা জানতে পারেন যে, আনুমানিক ৪০০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১০০০ বাংলা মোতাবেক ১৫৯৩ইং সনে (উক্ত সন মসজিদের প্রধান ফটকে লেখা রয়েছে)  মসজিদটি স্থাপিত হয়। প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত মসজিদের চার কোণায় বিরাটাকায় ৪টি ও বারান্দায় ৮টি পিলার এবং মসজিদের উপরে ৩টি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ফুট, প্রস্থ প্রায় ৭০ফুট, দেয়াল ৪ফুট প্রস্থ। মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ও উভয় পাশে মাত্র ২টি জানালা রয়েছে। প্রায় ৭০০জন মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মসজিদটির নির্মাণশৈলী ও অবকাঠামো নির্মাণে পোড়ামাটি, চুন, ইট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আশ্বর্যের ব্যাপার হলো-মসজিদটি নির্মাণে কোনো রড ব্যবহার করা হয় নি!

বিগত ২০১৬ সালে মসজিদের প্রবেশপথে মসজিদ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য দৃষ্টিনন্দন মিনার নির্মাণ করা হয়। মসজিদের চারপাশে সবুজ গাছগাছালি এবং বিভিন্নরকমের ফলফলাদির গাছপালায় ভরপুর। মসজিদের সম্মুখে রয়েছে বিরাটাকায় কেন্দ্রীয় শাহী ঈদগাহ। যেখানে একসাথে প্রায় ২-৩ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়াও মসজিদের পেছনে ঐতিহাসিক স্থাপনায় রয়েছে সানদার পুকুর ঘাট।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা বলেন, “মসজিদটি কখন, কবে স্থাপিত হয়েছে এবিষয়ে আমরা কিংবা আমাদের পূর্বসূরি কেউই জ্ঞাত নয়। তবে মসজিদটি স্থাপনের পর থেকে বরুণার পীর শায়খ লুৎফুর রহমান হামিদী (রহ.)-সহ সিলেটের বরেণ্য আলেমরা এখানে দীনের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন এবং পথহারা মুসলমানদের সঠিক পথের দিশা দেখিয়েছেন। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি রমজানে সিলেটের বরেণ্য বুজুর্গ আল্লামা ফুলতলী সাহেব ক্বিবলা (রহ.)-এর হাতে গড়া কেরাত প্রশিক্ষণ সেন্টার দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট কর্তৃক প্রায় ৫ শত ছেলেমেয়েদের কোরআনের শিক্ষা দেওয়া হয়।’ এলাকার তরুণ আলেম মুফতি ফাহিম আল হাসান জানান, ‘মসজিদটি স্থাপনের ব্যাপারে আমাদের পূর্বসূরিদের থেকে আজ অবধি সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। কিন্তু অনেকেই ধারণা করেন মসজিদটি গায়বি। তবে এই ধারণা আধো সত্য নয়। সরকারি তত্ত্বাবধানে মসজিদটির স্থাপত্য নিয়ে পর্যবেক্ষণ কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি এর সঠিক তথ্য উদঘাটন করা যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা ঐতিহাসিক এই মসজিদের সঠিক তথ্য জানবে বলে বিশ্বাস রাখি।’

এছাড়াও মসজিদের পশ্চিমাংশ থেকে পড়ন্ত বিকেলে বরুণা অঞ্চলের হাইল হাওর ও সূর্যাস্তের শোভা-সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। যা উপভোগ করতে স্থানীয় লোকজন প্রতিনিয়ত এখানে এসে ভিড় জমান।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ছন্দপাতা
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!