• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

কেমন চিকিৎসক হবেন তারা?


ইলিয়াস আরাফাত নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ০৬:৩৮ পিএম
কেমন চিকিৎসক হবেন তারা?

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মহসিন আলী(৭০) নামে এক ব্যক্তি। সকাল ভর্তি হয়ে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রোগীর স্বাজনরা চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তুলেন। নিহতের দুই ছেলে ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রামেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে যান। এরপরেই শুরু হয় তুলকালাম কাণ্ড। ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম (৪০) ও আনারুল ইসলাম (৩০) নামের দুই ভাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারপিট করে। পরে পুলিশ ডেকে তাদের ধরিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য পুলিশ বিকেলে তাদের ছেড়ে দেয়।

এতো গেলো সম্প্রতি একটি ঘটনার কথা। রোগীর স্বজনদের মারপিট করার ঘটনা এখন প্রায়ই ঘটছে রামেক হাসপাতালে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানুষ মারা যেতেই পারে। তা নিয়ে হতাশা থেকে তার চিৎকার করতেই পারে। তাই বলে চিকিৎসকরা দলবল নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রোগীর লোকজনকে পিটিয়ে আহত করবে এমনটা তো হতে পারে না।

অল্প সময়ের মধ্যে এমন ঘটনার নজির অনেক। গত ৬ নভেম্বর রামেক হাসপাতালে জয় নামে এক রোগী মারা যান। অভিভাবকদের অভিযোগ ছিল, জয়কে হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বারবার ডাকা হলেও তারা জয়ের চিকিৎসা দিতে আসেননি। পরে জয় মারা গেলে তার স্বজনরা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রামেক ছাত্রলীগের সহসভাপতি রায়হানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি তাদের ওপর চওড়া হন। এক সময় আরো ১০-১২ ছাত্রলীগের নেতাকে সাথে নিয়ে অস্ত্রের মুখে রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে।

গেল ১৫ এপ্রিল দুপুরে নগর শ্রমিক লীগ নেতা ও সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপুর শাখার কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন খান (৫৫) মৃত্যুর চিকিৎসকের অবহেলায় মারা যান বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে মৃতের স্বজনদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চিকিৎসা বন্ধ রেখে জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করে।

গত ৫ অক্টোবর হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্নি চিকিৎসক অপুর সঙ্গে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী জনি হোসেনের সঙ্গেও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কিছু সময়ের জন্য হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করেন।

এর আগে বছরেও ঘটেছে এমন বহু ঘটনা। গেল ২০১৫ সালে ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর বন্ধ গেটের পাশের একটি দোকানে বাকি খাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে এসব ছাত্রলীগ নেতাদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে মিন্টু নামের এক দোকানিকে রাস্তায় ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে অস্ত্রের মহড়া ও প্রায় তিন থেকে চার রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

গত ২০ ডিসেম্বর বন্ধ গেট এলাকায় মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে কয়েকটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেননি তেমন কোনো উদ্যোগ। উল্টো ওইসব ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির মুখে রোগির স্বজনদের উপরে নানান ব্যবস্থা নিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন জেষ্ঠ্য চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসকদের নানা কথা বলবে রোগী ও রোগীর স্বজনরা। এটা মেনে নেয়ার মানসিকতা না থাকলে চিকিৎসা পেশায় আসার কোনো মানে হয় না। কিন্তু সেই কাজটিই করছে এখনকার কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে করে চিকিৎসকদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমানাউল্লাহ জানায়, বাবা মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে হাসপাতালে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

এব্যাপারে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ জানান, কেউ যদি সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে এমন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রামেক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এমন ঘটনা ঘটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বিষয়টি জানায় নি। এমন ঘটনা খুব দুঃখজনক।

লেখক: সাংবাদিক, রাজশাহী

সোনালীনিউজ/এমএন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!