• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাছে থেকো শাকিব-অপু, ভালো থেকো


নীল বুলবুল এপ্রিল ১২, ২০১৭, ১০:৫৮ পিএম
কাছে থেকো শাকিব-অপু, ভালো থেকো

ঢাকা: রাত দুটোয় ভাগিনার ফোন। মামা, আমাকে চিনতে পারছেন? আমি সোয়েব, বগুড়ার সোয়েব, আপনার ভাগিনা। আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এতো রাতে ফোন?

অবশেষে জানা গেল, ভাগিনা মধ্যরাতে বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করে; খালি হাত-পা নিয়ে; কল্যাণপুর বাস কাউন্টারে গিয়ে; ঠাঁয় বসে আছে। বাসার চাপে নিরূপায় হয়ে ভয়ে ভয়ে মামাকে ফোন দেয়া। কী আর করা? সোজা আসতে বললাম বাসায়। দারোয়ানকে ডেকে তুলে, অটোরিকশার ভাড়া মিটিয়ে ভাগনেকে ঘরে আনলাম।

এরপর শোনার পালা তার মধ্যরাতের ঘরছাড়ার শানে নুযুল। সার সংক্ষেপ হচ্ছে- ভাগিনা একটা ব্যান্ডের গিটারিস্ট। সঙ্গের বন্ধু ড্রামার। দুজনে একই ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকে। সমস্যা হচ্ছে- বন্ধুর সঙ্গে উঠতি কয়েকজন মডেল আর ডিজে পার্টিকন্যার বেশ মেশামিশি। প্রায়ই ড্রিংস আর শিশা পার্টি হয় ফ্ল্যাটে। সারারাত ধরে চলে ফ্যান্টাসি।

ভাগিনার এসব একদমই অপছন্দ। সে কারণে বন্ধুর চোখে সে ব্যাকডেটেড খ্যাত, গেঁয়ো। এ নিয়ে প্রায়ই হটটক। ঘটনার রাতে চার উঠতি মডেল গার্লকে বগলদাবা করে দুই তরুণ এসেছে ফ্ল্যাটে। শুরু হয়েছে সারারাতের শিশা উৎসব। এক পর্যায়ের সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে এ নিয়ে দুই বন্ধুর হুমকিধামকি..চিল্লাচিল্লি..ধাক্কাধাক্কি..অতঃপর...কল্যাণপুর।

কী ধরণের মডেল আসতো ভাগনে তোমাদের ওখানে? ভাগনে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, কী যে কন মামা? আপনি মিডিয়ার মানুষ..‘ই..শি...নি..’ এদের চেনেন না? আমি চমকে উঠলাম- একটি নাম শুনে। কিছুটা কঠির সুরে বললাম, ভুল বলছো না তো? ভাগনে এবার লজ্জিত হলো। বললো- শোবিজ নিয়ে আপনার আসলে কোনো ধারনাই নেই মামা। সত্য বলতে কি মামা, এসব আলোর নিচে অন্ধকার ছাড়া কিছুই নয়।

ভাগনের ঘটনা মধ্যরাতের আর অপু বিশ্বাসের ঘটনাটা সন্ধ্যার দিকের। তাই মাথায় আগেই জ্যাম হয়ে আছে অপুর টিভি লাইভ। টকশগুলোও শাকিব-অপুময়। চারদিকে কেমন ঘোরলাগা। সারারাত ঘুম হলো না ঠিকমতো।

বাংলা সিনেমার সেই স্বর্ণযুগ তাড়িত করছিল বার বার। ষাট থেকে আশির দশক। মাঝখানে একাত্তর। কত অমর ছবি আর চির আবেদনের গানে ভরপুর আমাদের সিনেমা শিল্প। স্বপ্নের এক সোনালী জগৎ। আজ সে জগতের একি অবস্থা?

শুধু কি সিনেমা? পুরো শোবিজ অঙ্গন আজ কেমন অস্থিতিশীল, লক্ষ্যহীন। এখানে তারুণ্য আর মেধার দাপট বেড়েছে সত্যি, তবে সৃজনশীলতা শিকড় গাড়তে পারেনি। তরুণদের স্বপ্নসৌধ নির্মাণ করতে পারছি না। পশ্চিমা সংস্কৃতি আমাদের অন্তর্গত মূল্যবোধের ইতিবাচক পরিবর্তনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে না। উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এতে শোবিজ তরুণরা দিকভ্রান্ত হচ্ছে।

সময়ের পরিবর্তনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, রীতিনীতি পাল্টে যেতেই পারে। নতুন করে গ্রহণ করতে হতে পারে প্রচলিত নৈতিকতাবোধও। তাই বলে পাল্টে কি যেতে পারে ভালোবাসা, বিশ্বাস, মাতৃত্ব, পিতৃত্ববোধ?

ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একদিকে পেশাদারিত্ব আরেকদিকে বাজেট- কোনোটারই কমতি নেই। হাউজফুলশো চলে সিনেমা হলগুলোতে। অনেক বিতার্কিক ভারতের ফিল্মের চেয়ে বাংলাদেশের ফিল্ম কোনো অংশেই কম নয় বলে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। শুধু কি ফিল্ম? ভারতের সিরিয়ালগুলো নিয়ে কত যে তর্ক-কুতর্কের ঝড় বইয়ে যায়। তবে নির্মোহভাবে বলা যায়, সমালোচনার ঝড়ে আক্রান্ত সেই সিরিয়ালগুলোতে যেভাবে-যতটুকু পরিমাণে জীবনকে উপস্থাপন করা হয়, আমাদের নাটকে তার কিছুই পাওয়া যায় না। এখানকার নাটক আদর্শনির্ভর গতানুগতিক; নাটকই যে দেখছি তা সব সময়ই মনে হয়। আর ওপারের নাটক জীবনধর্মী। নাটক নয়, জীবনকেই দেখছি বলে বিশ্বাস করতে হয়।

আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এখানে পা ফেলেছে মেধাবী উচ্ছল তরুণ-তরুণীরা। তারা অবদান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের গাইডলাইন দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব। শিল্প আর পুঁজির পাশাপাশি মানবিকমূল্যবোধ সম্পন্ন সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। যেন অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতার অন্ধকার তাদের বিবেকহীন করে তুলতে না পারে?

বিগ বাজেট, উন্নত প্রযুক্তি, মৌলিক গল্প আর বিশেষজ্ঞ ফিল্ম ডিরেক্টরের অভাব আমাদের রয়েছে। সীমিত সাধ্যে যে সিনেমা তৈরি হচ্ছে তা আমাদের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মেধার যোগ হচ্ছে আমাদের সিনেমা শিল্পে। তবে গাইডলাইন আর সিরিয়াস পেশাদারিত্বের অভাবের কারণে অনেকেই ছিটকে পড়ছে। এর মধ্যে শত বাধা উপেক্ষা করেও এ শিল্পকে টিকে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে অনেকেই। তাদের মধ্যে উজ্বল দুটো মুখ হিসেবে ধরতে পারি শাকিব আর অপুকে।

রূপালী পর্দায় প্রেমের অভিনয় করতে করতে তা এক পর্যায়ে বাস্তব জীবনেও আক্রান্ত হতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। তবে ‘স্বপ্ন বেচাকেনার’ সিনেমা শিল্পে নিজেদের ‘অন্যের করে’ তুলতে গিয়ে কত অন্ধকার যে সয়ে যেতে হয়, তা যারা ফিল্মে কাজ করেন তারাই ভালো জানেন। দর্শকদের মনে প্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করতে গিয়ে নিজেদের প্রেম যে চিরজীবনের মতো খোয়াতে হয় সে নজিরও আছে।

ফিল্মের নায়িকা কিংবা করপোরেট নারীই হোক না কেন- বাঙালি নারীরা যে শেষ অবধি স্বামী আর সন্তানের মোহেই সংসার সাগরে ডুব দিতে চায়, স্বামীকে কারো সঙ্গেই ভাগ করে নিতে চায় না- এটা দিবালোকের মতো সত্য। ঢাকাই সিনেমার হার্টথ্রব নায়িকা অপু বিশ্বাস তো এ বাস্তবতার বাইরে নন। সন্তানের পরিচয়, নিরাপত্তা আর স্বামী সংসারের জন্য এমন ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত যে কেউ-ই তো নিতে পারে।

অপুর চোখের পানি ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। হৃদয় আর্দ্র করেছে ফুটফুটে আব্রাহামও। শাকিবের যুক্তির কাছে হারও মেনেছি আমরা। এখন চাই- অপু-শাকিব আরো কাছাকাছি আসো। আব্রাহামকে যোগ্য করে তোলো। তোমাদের ভালো থাকার মধ্যেই স্বপ্নের পথে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে পারবে ফুটফুটে সন্তানটি।

লেখক: সংবাদকর্মী 

সোনালীনিউজ/এন  

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!