ঢাকা: আমি সবসময় একটু আলাদাভাবে থাকতে পছন্দ করি, বলতে পারেন আড্ডা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোথাও গুড়তে যাওয়া এসকল আমার পছন্দ নয়। তবে আমি যখন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাই, আমার কলেজ জীবনের বন্ধুরা আমার বাসায় চলে আসে।
বন্ধুদের একটি গুণ খুব ভালো ওরা কখনো আমার সাথে রাগ করে না, কারণ ওরা জানে আমি নিরবতা খুব পছন্দ করি হয়তো এই কারণে তাদের সাথে আড্ডা দেয়া হয়ে উঠে না।
অনেক দিন পর দেখা রুবেলের সাথে সে বিসিএস পরিক্ষা দিলো প্রিলিমানারি, সে আসার পর থেকে পরিক্ষা নিয়ে কথা হচ্ছে। রুবেলকে চা দিয়ে আমি পাশের রুম থেকে একটি চেয়ার এনে রুবেলের পাশে বসে বিসিএস এর প্রশ্ন দেখছিলাম, কিছুক্ষণ পর দেখি আমার বাসায় এসে হাজির মাহমুদুল, রাসেল, ফয়সাল, শাহিন, সকলকে এক সাথে দেখে প্রথম চমকে গিয়েছিলাম।
কারণ কখনো এক সাথে এমন ভাবে দেখা হয়নি, সবাইকে এক সাথে পেয়ে, ভালো লাগার আকাশ জেনো নিজের মাঝে পেয়েছি। সকলে বসে আড্ডা দিচ্ছে আমি সকলের জন্য চা আনতে গেলাম, চা খাওয়ার শেষে রুবেল ফিসফিস করে মাহমুদুলকে কিছু একটা বলছে। যা ওরা আমাকে শুনাতে চায় না, বেলা বারোটা বাঁজে যখন ফয়সাল বলছে আজ আমরা ঘুরতে যাবো এখনি, আমি কথাটি শুনে রেগে গেলাম মানে কী?
আমি কোথাও যেতে পারবো না কারণ আজ বছরের শেষ দিন, আমাকে বাসায় থাকতে হবে এছাড়াও আমার ব্যক্তিগত কিছু কাজ আছে। ওরা কেউ কিছু মানতে রাজি না, ওদের সকলের এক কথা আজ তোকে আমাদের সাথে ঘুরতে যেতেই হবে।
কোন ভাবে আমি বুঝাতে পারছিলাম না, যে আমি যেতে পারবো না। সকলের কথা মতো ঘুরতে বের হলাম তখন বিকাল শেষ হয়ে রাত হওয়ার সময়, আমরা কোথায় যাচ্ছি রুবেল, মাহমুদুল, আর মোজাহিদ ছাড়া কেউ জানে না।
কারণ তারা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শর্ত দিয়েছিলো আমরা কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করা যাবে না, রাত দশটা বাঁজে তখন একটি বাসায় গেলাম বাসাটি মনে হয় রুবেল বা মাহমুদুলের আত্মীয়র হবে। একজন এসে আমায় জিজ্ঞাসা করলো কেমন আছো, আমি বললাম ভালো আছি। তবে কন্ঠসুরটি আমার অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে, তবে কারেন্ট না থাকার কারণে মুখটি দেখা যাচ্ছিলো না বাতির আলোতে।
উনি চলে যাবার পর আমাদের সাথে নিয়ে ডাইনিং এ নিয়ে গেলো রুবেল। খাবার খাওয়া শেষে সবাই একটু নীরব হয়ে পরেছে, দেখে মনে হচ্ছে শরীরে ক্লান্তিতা চলে এসেছে, তবে আমার কিছু ভালো লাগছে না। কারণ আর কিছুক্ষণ পরে জীবন থেকে আরেকটি বছর চলে যাবে, এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে কণ্ঠস্বরটি কার এত পরিচিত মনে হচ্ছিল কেন? কেমন আছো? যখন জিজ্ঞেস করলো, তখন মনে হচ্ছিল এত আপন করে আমায় কেউ কখনো বলে নাই।
ফয়সালকে বললাম উনি কে? সে কোন উওর দেয়নি, রাত তখন ১১টা আমি বাহিরে এসে বসে আছি, আমার কাছে মনে হচ্ছিল পিছন থেকে কেউ আমায় দেখছে। তবে পিছনে ফিরে দেখি কেউ নেই তো হয়তো আমার মনের ভুল, বছরের শেষ দিন আমার অনেক কষ্ট হয়। মাকে আমি খুব মিস করি, ১০ বছর ধরে মাকে ‘মা’ বলে ডাকিনি। তবে বছরের শেষ দিন একা একা ঘরে বসে ‘মা’কে ডাকি।
মায়ের সাথে রাগ করে চলে গিয়েছিলাম দশ বছর আগে, সেই দিনটিই ছিল মাকে আমার শেষ দেখা। এর পর আর মায়ের সাথে দেখা নেই, তবে এই দশটি বছরে একমিনিটও মাকে স্মরণ না করে থাকতে পারিনি। কারণ ‘মা’ আমার জীবনের আকাশ, আমার চোখের আলো হয়ে সে আমার সাথে আছে।
আমার সামনে যখন কেউ মা বলে ডাকে তার মাকে তখন খুব রাগ হয়, হঠাৎ রাসেল পিছন থেকে ডাক দিলো এত রাতে বাহিরে বসে আছিস কেনো? ভিতরে আয়, চোখের কোণে যে জল জমেছিল নিজের অজান্তে তা মুছে রুমে গেলাম। তখন রাত বাঁজে ১২টা, সবাই চুপ হয়ে বসে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না আমার সাথে, আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তোরা সকলে এত চুপ কেন?
‘বাবা সজীব’ কে! কে! আমায় ডাকছে’ বাবা সজীব বলে, রুবেল কান্না করছে, ফয়সালও কান্না করছে, রাসেল বারান্দায় দাড়িয়ে আছে, শাহিন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে সকলের চোখের জল দেখে, ওদের কান্না দেখে আমার চোখ দিয়েও জল আসতে শুরু করেছে। আবার একি ডাক “বাবা সজীব” আমার কষ্ট আরো বেড়ে গেলো এত সুন্দর করে আমায় কে ডাকছে!
আমি চিৎকার করে বললাম আপনি কে? সামনে আসেন, আমি আপনাকে দেখতে চাই। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, এত সুন্দর করে আমায় বাবা বলে ডাকছেন কেন। অন্ধকারে আস্তে আস্তে রুমে আসলো, শরীর এর ঘ্রাণটি অনেক পরিচিত।
মনে হচ্ছিলো আমার মায়ের শরীর এর ঘ্রাণ, ফয়সাল বাতি নিয়ে আমার মুখের কাছে আসলো। আমি খাট থেকে নেমে উনার সামনে গেলাম, কাছে যাওয়ার পর মনে হলো আমি আমার মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছি।
রুবেল বললো, আন্টির মুখ থেকে কাপড়টি সরান, আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে বুকের ভিতর অনেক কষ্ট হচ্ছে। কাপড়টি সরানোর পর আমি যা দেখলাম, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস “আমার মায়ের মুখ” ঝুরে চিৎকার দিয়ে মায়ের বুকে পড়লাম, মা ওমা তুমি কোথায় থেকে এখানে, মাগো দেখো আমি তোমার ছেলে। মায়ের চোখের জল আমার গালে পড়ছে, আমার কথা বলার সুর হারিয়ে গেছে। মায়ের কান্না আর রুমের সকলের কান্নার শব্দে বছরের প্রথম দিনটি হয়ে উঠেছে, মায়ের ভালোবাসার দিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।







































