• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, লজ্জা কার?


সেলিম আহমেদ জানুয়ারি ২, ২০১৯, ০২:৫৮ পিএম
স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, লজ্জা কার?

ঢাকা : নৌকায় ভোট না দেয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে মারধর ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ৩০ ডিসেম্বর রাতের। আর এই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা আওয়ামী লীগ সমর্থক। ভোটের দিন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অপরাধে গণধর্ষণ করা হয় ওই গৃহবধূকে।

ঘটনাটি যখন ঘটে ঠিক তখই পুরো বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ওই নৌকা প্রতীকের দল আওয়মী লীগ। দেশে ২৯৯টি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জোটগতভাবে ২৮৮ আসনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছে। হ্যাটট্রিক জয় করে রেকর্ড ভেঙে সরকার ঘটন করতে যাচ্ছে দলটি। দেশের জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিপুল প্রত্যাশা রেখে অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে। তারা আশা করেন, নতুন সরকার তাদের প্রত্যাশা পূরণে অবিচল থাকবে। নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। পরপর তিনবার শপথ নেয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন একজন, যা রেকর্ড। বিরোধী শিবিরের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু এ নির্বাচনে খুশি বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও।

জাতির এই আনন্দের মুহূর্তেই ন্যাক্কারজন এক ঘটনার জন্ম হল সুবর্ণচরে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ওই গৃহবধূকে পাংখার বাজার ১৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে হুমকি দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থকরা। পরে রাত ১২টায় তারা গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। দরজা খুললেই স্থানীয় সন্ত্রাসী মোশারেফ, সালাউদ্দিন, সোহেল, হেঞ্জু মাঝি, বেচু, আবুল কালামের ছেলে সোহেল, জসীম, আবু, স্বপন, আনোয়ার, বাদশা আলম, হানিফ, আমির হোসেনসহ ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী ওই গৃহবধূকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য গালাগালি করে এবং তার স্বামীও ছেলে-মেয়েকে বেঁধে ফেলে। পরে অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে গৃহবধূকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় এবং সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। মারধর করে তার স্বামী, সন্তানদেরও। সন্ত্রাসীদের চিনে ফেলায় তারা ওই গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করে। গৃহবধূকে ধর্ষণের এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এর বিচার হবে কিনা তা সবারই অজানা।

আমাদের দেশে বিচার হয় শুধু সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলে তার। সাংবাদিকরা যদি কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করেন তাহলেই তড়িৎগতিতে হাতকড়া পড়ানো হয় হাতে। নেয়া হয় রিমান্ডেও। এইতো বছরের ১ম দিন মঙ্গলবার ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্যাকে। নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সঠিক ও তথ্যভিত্তিক না হওয়ার অভিযোগে পত্রিকাটির খুলনা প্রতিনিধি হেদায়েৎ হোসেন মোল্যার বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন খুলনার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী। ওইদিন দুপুরেই খুলনা প্রেস ক্লাবের বাইরে থেকে সাংবাদিক হেদায়েৎ হোসেন মোল্যাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর সাংবাদিক পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক হেদায়েৎকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অথচ, এদেশের কত ব্যাংক লুটকারী, হত্যা মামলার আসামি, মাদক সম্রাট আর দুর্ধর্ষরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে। আইনের মারপ্যাচে পার পাচ্ছেন তারা। গ্রেপ্তার হন শুধু সাংবাদিকরা।

আমি সুবর্ণচনের ওই গৃহবধূ ধর্ষণের বিচার চাই না, চাইব না। কারণ, আমি সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার চেয়ে পাইনি। বিচার চেয়ে পাইনি তনু হত্যাকাণ্ডের, বিচার পাইনি মিতুসহ আরো শত হত্যাকাণ্ডের। বিচারতো দূরের কথা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত কারা বা কেন হত্যা করা সেই ক্লুও উদ্ঘাটন করতে পারেনি আমাদের প্রশাসন। অতীতের রেকর্ড বলে এ ঘটনার বিচার না পাওয়ারও সম্ভাবনা বেশি। তাই, এ গৃহবধূ গণধর্ষণের বিচার চাইব না। শুধু জানতে চাইব একটি প্রশ্নের জবাব। মাত্র একটি প্রশ্নের? এই গণধর্ষণে লজ্জা কার? লজ্জা কি শুধু ওই ধর্ষিতা গৃহবধূর পরিবার আর স্বজনদের? নাকি আপনার-আমার? নাকি এই রাষ্ট্রের?

লেখক: সাংবাদিক
ইমেইল : [email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!