ফাইল ছবি
ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই দফায় ২৭২ আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এতে ‘ক্ষুব্ধ’ হয়েছে শরিকরা। শরিকদের সাথে সমঝোতা করতে শনিবার বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে কোনো ধরনের সমাধান ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়েছে শরিকদের সাথে। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির শরিকরা।
বিএনপির মিত্ররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে তারা একসঙ্গে রাজপথে ছিলেন, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছেন, সরকারি প্রলোভনও গ্রহণ করেননি; কিন্তু আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে বিএনপির তরফ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে পথচলার যে বিষয় ছিল, সেটি তারা খুঁজে পাননি। তারা আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী কিছুদিন ধরে তাদের বন্ধুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী দিনে যেখানে যুগপতের মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার, সেখানে বিএনপি মিত্র হারানোর পথে হাঁটছে; এটি জোটের ঐক্যের জন্য মোটেই শুভ নয়।
শরিকদের এমন ক্ষোভ ও তাগিদের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর এই দুদিন যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি ও মিত্রদের প্রত্যাশা, ওই বৈঠকের মধ্য দিয়ে আসন সমঝোতাসহ অন্য ইস্যুগুলোর সন্তোষজনক সুরাহা হবে। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। অন্যদিকে, শরিক দল ও জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, তানিয়া রব ও শহীদুল্লাহ কায়সার; ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ এহসানুল হুদা ও আহসান হাবিব লিংকন; জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গোলাম মওলা চৌধুরী, খন্দকার লুৎফর রহমান, এসএম শাহাদাত; গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদ, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান ও রাশেদ খান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মাওলানা একেএম আশরাফুল হক প্রমুখ।
বিএনপি ২০১৮ সালে শরিকদের জন্য ৫৯টি আসন ছেড়েছিল। সেবার জামায়াতকে ২২টি আসন ছাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনে দলটি এবার বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই শরিকদের জন্য বিএনপির এবার আসন ছাড়ের সংখ্যা কমে ১৫-তে দাঁড়াতে পারে।
জানা গেছে, আসন সমঝোতা প্রশ্নে সংশোধিত আরপিওর বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিএনপিকে। কারণ, আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও ভোট করতে হবে নিজ নিজ দলের প্রতীকে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী এবং আরপিও বিবেচনায় নিয়ে শুধু বিজয়ী হতে পারার মতো শরিকদেরই আসন ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।
নির্বাচন সামনে রেখে এখন পর্যন্ত দুই দফায় মোট ২৭২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফলে ফাঁকা রয়েছে আরও ২৮ আসন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই ফাঁকা আসনগুলোতে মূলত শরিকরাই নির্বাচন করবেন। অবশ্য জোট নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ দল ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকে আসন ছাড়েনি বিএনপি।
গতকালের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতীতে একসঙ্গে যাদের নিয়ে আন্দোলন করেছে, তাদের নিয়ে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার এবং পথ চলার কথা বলেন। তিনি বলেন, চলার পথে সমস্যা থাকবে, সমাধানও আছে। আমরা আজকে বসতে পারলাম, এটা বড় অগ্রগতি। কিন্তু ২৯টি দলকে একত্রে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক হবে না, সম্ভবও না। এজন্য শরিক দল ও জোটের সঙ্গে আমরা আলাদাভাবে বসব। যার যে সমস্যা, আমরা একান্তে আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্টা করব। প্রচারণায় বাধা প্রসঙ্গে শরিকদের আশ্বস্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামনে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকবেন। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পিএস







































