• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

‘ওসমান হাদি, ভাই আমাদের ছেড়ে যাইস না’


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম
‘ওসমান হাদি, ভাই আমাদের ছেড়ে যাইস না’

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শুয়ে আছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি। গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে তিনি এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। কিন্তু হাসপাতালের দেয়াল পেরিয়ে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। মসজিদে মসজিদে, জায়নামাজে বসে চলছে তাঁর জন্য প্রার্থনা। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতা-দলমত নির্বিশেষে এক কণ্ঠে কামনা করছেন তাঁর সুস্থতা।

অনেকে তাঁকে সন্তান বলে ডাকছেন, কেউ অভিভাবক, কেউ ভাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা উচ্চারণ-ওসমানই বাংলাদেশ, ওসমানরা প্রতিদিন জন্মায় না, যুগে যুগে কদাচিৎ আসে। কেউ কেউ নিজের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে ওসমান হাদির জীবন ভিক্ষা চাইছেন।

শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার সময় আবেগের সেই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অ্যাম্বুলেন্সের চারপাশে দাঁড়িয়ে একদল তরুণ হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তাঁদের কণ্ঠে একই আর্তি-ওসমান, আমাদের ছেড়ে যাইস না। ভাই, আমাদের ছেড়ে যেও না।

সেই সময় ওসমান হাদির দৃশ্য ছিল রক্তেভেজা। মাথা সাদা কাপড়ে ঢাকা, মুখমণ্ডলে জমাট রক্ত, চোখ বন্ধ। তিনি সেই আর্তনাদ শুনেছেন কি না, তা অজানা। তবে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগ পর্যন্ত চারপাশে ছিল স্বার্থহীন বেদনার নীরব কান্না।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা ফিরে এলেও তাঁর অবস্থা এখনো উদ্বেগজনক। মেডিকেল বোর্ডের মতে, তিনি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নন। গণমাধ্যমের পর্দায় সবাই অপেক্ষা করছে একটি ভালো খবরের।

এই অপেক্ষার ভেতর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নানা শ্রেণির মানুষ। এক চিকিৎসক লেখেন, হাদি মানে আমার সন্তান, আমার জন্মভূমি। কোনোদিন দেখা হয়নি, কথাও হয়নি, তবু তাঁর জন্য বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।

এক ভক্ত লিখেছেন, ইতিহাসের টিপু সুলতানের মতো ওসমানও একজন বীর। অন্যায়ের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। আরেকজন কবি ও সংগঠক লিখেছেন, বিপ্লব আমাদের কাছে অমরত্বের কবিতা, ওসমান আমাদের ভাই, ওসমানই বাংলাদেশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লেখেন, হাদি যদি বাঁচে, সে আরও শক্ত হয়ে ফিরবে। আর যদি না বাঁচে, ঘরে ঘরে জন্ম নেবে হাজারো হাদি।

গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রিকশায় করে গন্তব্যে ফিরছিলেন ওসমান হাদি। রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল থেকে খুব কাছ থেকে তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গুলিটি মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে পরিবারের সিদ্ধান্তে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আজ ওসমান হাদি শুধু একজন ব্যক্তি নন। তিনি হয়ে উঠেছেন অনেকের কাছে প্রতিবাদের প্রতীক, ইনসাফের ভাষা। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা এই মানুষটির দিকে তাকিয়ে আছে একটি দেশ-কখন তিনি ফিরবেন, কখন আবার শোনা যাবে তাঁর তেজদীপ্ত কণ্ঠ।

এসএইচ 

Wordbridge School
Link copied!