ঢাকা : দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন ‘মেট্রোরেল’র আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা আড়াইটায় উদ্বোধন করবেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম মেট্রোরেলরুট পূর্ণরূপ পাবে।
এই রুটের বর্ধিতাংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুরে ট্রেন চলাচল করবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটারের দূরত্ব ১২টি স্টেশনে থেমে পাড়ি দেবে ৩১ মিনিটে। পরে সব স্টেশনে, অর্থাৎ ১৭টি স্টেশনে থেমে মতিঝিলে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট।
শনিবার (৪ নভেম্বর) উদ্বোধনের পর আগামীকাল রবিবার থেকে ৩ মাসের মধ্যে সব স্টেশন চালু করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
১০০ কিলোমিটার গতিবেগের এ ট্রেন উভয় দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার করে দিনে ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করবে। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া গড়ে ৫ টাকা, আর এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
২০১৭ সালের ২ আগস্ট মাস র্যাপিড ট্রানজিট-৬ বা এমআরটি-৬ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আর মেট্রোলাইনের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেক এমআরটি-৬ প্রকল্প অনুমোদন করে। এমআরটি-৬ কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয় ২০১৯ সালে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বেলা আড়াইটার দিকে আগারগাঁও স্টেশনে উপস্থিত হবেন। এরপর মতিঝিলগামী মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। আর পরের ট্রেনে চড়ে যাবেন মতিঝিল স্টেশনে। সেখানে নামফলক উন্মোচন করবেন এবং এমআরটি-৫-এর (নর্দান রুট) উদ্বোধন করবেন। সেখান থেকে আরামবাগে গিয়ে সমাবেশে বক্তৃতা করবেন।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘শনিবার আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য শনিবার মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধ থাকবে। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করবে। শুরুতে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করবে। মতিঝিল অংশের ৩টি স্টেশনসহ মোট ১২টি স্টেশনে থেমে উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩১ মিনিট। সব স্টেশন চালু হলে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর স্টেশন ছেড়ে যাবে মেট্রোরেল।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিকভাবে আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল স্টেশনে থামবে। বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনসহ বাকি স্টেশনগুলো তিন মাসের মধ্যে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
তারা জানান, মেট্রোর নতুন রুটের সেবার মান নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্পকর্তারা কর্মক্ষমতা পরীক্ষা, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন পরীক্ষা, ট্রায়াল রান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন চালাচ্ছেন। এরআরটি-৬-এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী এমআরটি-৫-এর (উত্তর রুট) নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন। মতিঝিলে এমআরটি-৬-এর উদ্বোধনফলকও উন্মোচন করবেন তিনি।
সতেরো স্টেশন : এমআরটি-৬-এর ১৭ স্টেশন হলো উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সব স্টেশন চালু হয়েছে। মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের পর ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন চালু হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশের উন্নয়ন করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম প্রকল্প এমআরটি-৬। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। শুক্রবার ছাড়া এই রুটের উত্তরা-আগারগাঁও অংশে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে। মতিঝিল অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ট্রেন চলাচল করবে। এই অংশে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। উত্তরা-আগারগাঁও অংশে এখন দৈনিক ৮০ হাজার যাত্রী চলাচল করছে।
এমআরটি-৬-এর ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার মধ্যে জাপানের ঋণ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এমআরটি-৬ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা সেন্টার স্টেশনসংলগ্ন ২৮ দশমিক ৬১ একর জমিতে টিওডি বা বহুমুখী বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। টিকিটের টাকা ও টিওডির টাকায় এমআরটি-৬ প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। উত্তরা উত্তর, আগারগাঁও, ফার্মগেট ও কমলাপুরে স্টেশন প্লাজা গড়ে তোলা হবে। এসব প্লাজায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ২০১৫-৩৫ মেয়াদে ৬টি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীবাসীর জীবনে ভিন্নমাত্রা ও গতি যোগ হবে, কর্মসংস্থান ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সময়সাশ্রয়ী যানে চলাচল করবে ৫০ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করে এই নগরযান নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী সবার উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে।
এমটিআই







































