• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধুত্ব-ভালোবাসা আল্লাহর জন্যই


মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার মার্চ ৯, ২০২১, ০৪:৩৪ পিএম
বন্ধুত্ব-ভালোবাসা আল্লাহর জন্যই

ঢাকা : বন্ধুত্ব-ভালোবাসা আল্লাহর হাজারো নিয়ামতের অন্যতম। কিন্তু এই স্বার্থপর  পৃথিবীতে সত্যিকার বন্ধু খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। উপলব্ধি করার মতো মন আর অনুভব করার মতো উদার হূদয় নেই বললেই চলে। প্রত্যেকের বুকেই একটা হূদয় আছে। কিন্তু কোমল হূদয়ের বড় অভাব। বন্ধুত্ব কথাটা খুব ছোট হলেও এর বিশালতা আকাশ সমান। গভীরতা সমুদ্রের মতো আর উচ্চতা হিমালয় ছাড়িয়ে যায়। জীবনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন অপরিসীম। ভালো-মন্দের রাস্তাগুলো বন্ধু ছাড়া চলা প্রায় অসম্ভব। আর বন্ধুহীনা জীবনটা কেমন যেন অপরিপূর্ণ।

পুরো পৃথিবীটাই একটা মায়ার জালে আবদ্ধ। প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা-সৌহার্দ্য এগুলো পৃথিবীর শুরু থেকেই চলে আসছে। প্রেম-ভালোবাসা বন্ধুত্ব  আছে বলেই পৃথিবী আজো সুন্দর। বর্তমান পৃথিবীতে ৭৫০ কোটি মানুষ। যদি একে অপরের প্রতি সহনশীল না হতো, যদি বিলীন হয়ে যেত ভালোবাসা- বন্ধুত্ব; তবে পুরো পৃথিবী অশান্তির দাবানলে জ্বলতে থাকতো। পুরো পৃথিবীজুড়ে বিরাজ করতো; অশান্তি, অনৈতিকতা আর অরাজকতা। একে অপরের প্রতি থাকতো না কোন ভ্রাতৃপ্রেমী ও মমতাবোধ। প্রতিটি মানুষই ভালোবাসার গুণ নিয়েই দুনিয়াতে আসে। একে অপরের প্রতি একটা টান প্রতিটি হূদয়ে লালন করে। পৃথিবীর সর্বশ্রেণীর মানুষ এই প্রেম ভালোবাসায় জড়িত। তবে বিপত্তি ঘটে তা প্রকাশের ভঙ্গিমায়। আল্লাহতায়ালা মানুষের অন্তরে প্রেম ভালোবাসা দেওয়ার সাথে সাথে তার ব্যবহার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। বৈধ অবৈধ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কে কাকে, কীভাবে, কেন ভালোবাসবে তা বাতলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদিসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কাকে বেশি, কেন ও কীজন্য  ভালোবাসতে হবে। কার সাথে কেমন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে।

প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালোবাসাকে ঈমানের সাথেও তুলনা করেছেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট তার পিতা মাতা, সন্তান-সন্ততি ও দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হবো। (বুখারি ) অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে  দেব না, কি করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৯৮) আবার কাউকে ভালোবাসলে তাকে অবহিত করার কথাও হাদিসে উল্লেখ্য রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইকে ভালোবাসে, তার উচিত তাকে তাঁর ভালোবাসা সম্পর্কে অবহিত করা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১২৪) তবে সকল ভালোবাসা বন্ধুত্ব  হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। বৈধ পদ্ধতিতে। এ সম্পর্কে হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তার ঈমান পরিপূর্ণ। (মিশকাত)

বর্তমান সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন। ভালোবাসা-বন্ধুত্ব আছে। আছে একে অপরের প্রতি মমতাবোধও। কিন্তু তা শুধু লোক দেখানো আর পার্থিব লাভের আশায়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন আজ তেমন চোখে পরে না। প্রতিটি সম্পর্ক আজ স্বার্থের বেড়াজালে আবদ্ধ। যার কারণে, ভালোবাসা-বন্ধুত্ব থাকা সত্বেও পৃথিবী আজ অশান্ত।  হিংসে-বিদ্বেষে ভরা। ঠুনকো অজুহাতেই ভেঙে যায় সযত্নে গড়া ভালোবাসা-বন্ধুত্ব। যার ফলে শত্রুতা আর হিংস্রতায় ছেয়ে আছে আমাদের চারপাশ। বন্ধুত্বের পথ ও পদ্ধতি দেখতে পাই নববী আদর্শে। আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালো বন্ধু ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)। যা মানব জাতির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত অনুপম আদর্শ হয়ে থাকবে। বন্ধুত্ব কেমন হবে তা দেখিয়ে দিয়েছেন হজরত আবু বকর রা.। কঠিন বিপদ। চারদিকে কাফেরদের অত্যাচার নির্যাতনের ভয়াল চিত্র! মক্কার অলিগলিতে ঘোষণা হয়েছে আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদকে মৃত বা জীবিত ধরতে পারলো পুরস্কৃত করা হবে। পুরস্কারে আশায় চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে পিচাশ কাফেরের দল। বিপদ আসন্ন। ধরা পরলে নির্ঘাত মৃত্যু। তবুও পথ চলছেন বন্ধুর সাথে। যত বিপদ আসুক বন্ধুকে একা ফেলে কখনো কোথাও যাওয়া যাবে না। আশ্রয় নিলেন পাহাড়ের গুহায়। গুহার সকল মুখ বন্ধ করে নিজের পা দিয়ে আটকিয়ে রাখলেন অন্য মুখটি। হঠাৎ সাপের ধ্বংসাত্মক ছোবল। বিষে কাতর শরীর। তবুও নিশ্চুপ, নির্বিকার। মুখে কোনো কথা নেই। প্রিয় বন্ধুর ঘুম ভেঙে যাবে। বন্ধুর কষ্ট হবে ভেবে।

নবীজির আরেকজন বন্ধু হজরত আলী (রা.) নিশ্চিত মৃত্যু যেনও বিছানায় শুয়েছিলেন হিজরতের রাতে। কারণ, তাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসা ছিল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে বন্ধুত্ব হয় শুধু স্বার্থের জন্য। স্বার্থ শেষ বন্ধুত্বও শেষ। যার ফলে হিংসা, অহংকার আর মহামারী প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রগতিশীলরা এমন বিবাহবহির্ভূত অবৈধ মেলামেশাকে ভালোবাসা-বন্ধুত্বের নামে নামকরণ করে যিনা-ব্যভিচারকে সহজলভ্য করে তুলছে। যার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণী-যুবতীরা নিজেদের সতীত্বকে বিলিয়ে দিচ্ছে একদল লম্পটদের কাছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির এই ভয়াল আগ্রাসন থেকে আমাদের সন্তানকে বাঁচাতে চাইলে মুখরোচক ভালোবাসা-বন্ধুত্বের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকায় ভালোবাস-বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে।

সকল স্বার্থের পরাজয় ঘটিয়ে ধারণ  করতে হবে নববী আদর্শের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের। পৃথিবী ছেয়ে যাক বন্ধুত্বের শীতল ছায়ায়। বন্ধুত্ব গড়ে উঠুক মহান আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করতে। আসুন আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলূম  হাটহাজারী মাদরাসা চট্টগ্রাম

 

Wordbridge School
Link copied!