• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও করণীয়


  ধর্মচিন্তা ডেস্ক এপ্রিল ১১, ২০২৪, ০৬:৫৮ এএম
ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও করণীয়

ঢাকা : অনাবিল শান্তি ও অবারিত আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদের এক ফালি চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ভেসে ওঠে, তখন সর্ব শ্রেণির মানুষের হৃদয় গহিনে বয়ে যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মৃদু দোলা। ঈদ বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় নেয়ামত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রিয় নবী (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনাবাসী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে দুইটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুইটি কীসের দিবস? তারা বললেন, এ দুই দিবসে জাহেলি যুগে আমরা খেলাধুলার করে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুইটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একটি হলো, ঈদুল আজহা এবং অপরটি ঈদুল ফিতর।’ -আবু দাউদ

‘ঈদ’ অর্থ যা ফিরে ফিরে আসে। ‘ফিতর’ অর্থ ভেঙে দেওয়া বা ইফতার (নাস্তা) করা। ঈদুল ফিতর মানে সে আনন্দঘন উৎসব, যা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে। নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির সীমানা পেরিয়ে সামষ্টিক কল্যাণ নিয়ে ঈদ আসে।

ঈদ আসে কৃচ্ছ্র ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে। তাকওয়ার (আল্লাহভীতি) শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন জীবনে ফেরার অঙ্গীকার নিয়ে ঈদ আসে। আর আল্লাহপাকের খাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে যে ঈদ আসে, তা হলো ঈদুল ফিতর। একজন রোজাদারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো খোদাতায়ালার আদেশ অনুযায়ী মাসব্যাপী রোজা রাখতে আল্লাহ তাকে তৌফিক দিয়েছেন। এ খুশি প্রকাশ করতেই রমজান মাস শেষ করে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদের আনন্দে মিলিত হয়।

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব : ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। যারা ঈদের নামাজ আদায় করে না তারা অবশ্যই গুনাহগার হবে। ঈদ আসে বিশ্ব মুসলিমের দ্বারপ্রান্তে বার্ষিক আনন্দের মহা বার্তা নিয়ে, আসে সীমাহীন প্রেম-প্রীতি বিলাবার সুযোগ নিয়ে, বিগত দিনের সকল ব্যথা বেদনা ভুলিয়ে দিতে, কল্যাণ ও শান্তির সওগাত নিয়ে। বছরে দুইদিন ঈদের নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য যে মহাসম্মেলনের ব্যবস্থা করেছেন তার মধ্যে রয়েছে ইসলামী সমাজ কায়েমের প্রেরণা। সমাজকে কলুষ কালিমা মুক্ত করার জজবা, মানবতা ও মনুষ্যত্ব বিকাশের এক বিশেষ অনুশীলন।

ঈদুল ফিতরের ফজিলত : ঈদুল ফিতরের দিনে অনেক ফজিলত রয়েছে। যারা ঈদের দিন যথারীতি ঈদগাহে গিয়ে যথানিয়মে ঈদের নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাদের অফুরন্ত পুরস্কার দানে ধন্য করেন। হাদিসে এসেছে, যারা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ঈদের ময়দানে একত্র হয়, আল্লাহতায়ালা তাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আজ এখানে সমবেত হয়েছে তাদের কী প্রতিদান দেওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, পুণ্যময় কাজের পুরোপুরি পারিশ্রমিক দেওয়াই উচিত। তখন আল্লাহতায়ালা তার ইজ্জতের শপথ করে বলেন, অবশ্যই তিনি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করবেন। এরপর আল্লাহতায়ালা ঈদের নামাজ সমাপনকারী তার নেক বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তোমাদের কৃত অতীত পাপকে সওয়াবে পরিণত করে দিলাম’ এ পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজ সমাপনকারীরা ঈদের মাঠ থেকে এমন অবস্থায় আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করল যেন তারা নিষ্পাপ শিশু।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পুণ্য লাভের আশায় দুই ঈদের রাত জেগে ইবাদত করে কিয়ামতের দিন তার অন্তর এতটুকু ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না যেমন অন্যদের অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত হবে।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য বিশেষ একটি পুরস্কার হচ্ছে, ঈদুল ফিতর। আর ঈদের তাৎপর্য অপরিসীম। হজরত মুহাম্মদ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন যখন আসে তখন আল্লাহতায়ালা রোজাদারের পক্ষে গর্ব করে ফেরেশতাদের বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ, তোমরাই বলো রোজাদারের রোজার বিনিময়ে আজকের এই দিন কি প্রতিদান দেওয়া যেতে পারে? সেই সমস্ত রোজাদার যাহা তাদের দায়িত্ব পুরোপুরি আদায় করেছে। তখন ফেরেশতারা আল্লাহকে বলেন, দয়াময় আল্লাহ, উপযুক্ত প্রতিদান তাদের দান করুন। কারণ তারা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা করেছেন, প্রাপ্য পারিশ্রমিক তাদের দান করুন।

তখন আল্লাহতায়ালা রোজাদারদের বলতে থাকেন, ‘হে আমার বান্দা, তোমরা যারা যথাযথভাবে রোজা পালন করেছ, তারাবির নামাজ পড়েছ, তোমরা তাড়াতাড়ি ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাও এবং তোমরা তোমাদের প্রতিদান গ্রহণ কর। ঈদের নামাজের শেষে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, হে আমার প্রিয় বান্দারা, আমি আজকের এ দিনে তোমাদের সকল পাপগুলোকে পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। অতএব তোমরা নিষ্পাপ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাও’। -বাইহাকি

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন যে, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে পুণ্যের প্রত্যাশায় ইবাদত-বন্দেগি করে, কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকদের অন্তর মরে যাবে, কিন্তু কেবল সেই ব্যক্তির অন্তর জীবিত থাকবে, সেদিনও মরবে না।’ -আততারগিব

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পুণ্যময় ৫টি রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ রয়েছে। আর সেই সুসংবাদটি হচ্ছে জান্নাত। পুণ্যময় ৫টি রাত হলো ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, লাইলাতুল কদর,  জ্বিলহজ্জের রাত, আরাফাতের রাত। -(বাইহাকী) এছাড়াও ঈদের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় সুন্নত : জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম’ অর্থাৎ আল্লাহ আমার ও আপনার যাবতীয় ভাল কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির ২/৫১৭

আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা ঈদের দিনের অন্যতম আমল। আনন্দ-বিনোদনের নামে কেউ যেন ইসলামী শরিয়ত পরিপন্থী কাজে লিপ্ত না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। 

ঈদের সুন্নাতসমূহ : ঈদের দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া, মিসওয়াক করা ও গোসল করা সুন্নাত। আতর ইত্যাদি সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। সকালে ইদগাহে গমন করা সুন্নাত। সুন্দর ও উত্তম কাপড় পরিধান করা সুন্নাত। ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে যাওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া (বা কোনো মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া) সুন্নত। -সহিহ বুখারি

ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক পথে যাওয়া এবং আসার সময় ভিন্ন পথে আসা সুন্নত। -সহিহ বুখারি

ঈদের নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা সুন্নাত। -ইবনে মাজাহ

ঈদগাহে আসা-যাওয়ার সময় তাকবির বলা সুন্নাত। তাকবির : ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ বলে ঈদের মোবারকবাদ প্রদান করা সুন্নত। ঈদের নামাজ খোলা মাঠে ঈদগাহে পড়া সুন্নাত। -সহিহ মুসলিম

ঈদের নামাজের জন্য মহিলারাও ঈদগাহে আসতে পারে। -সহিহ মুসলিম

ঈদের নামাজের জন্য আজান ও ইকামত নেই। -সহিহ মুসলিম

উভয় ঈদের নামাজে প্রথমে নামাজ অতঃপর খুতবা দেওয়া সুন্নত। -সহিহ বুখারি

ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে ঈদগাহে কোন নামাজ নেই। -সহিহ মুসলিম

ঈদের নামাজের পর ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব। -ইবনে মাজাহ

উভয় ঈদের নামাজ বিলম্বে পড়া অপছন্দনীয়। এশরাকের নামাজের সময় ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় হয়ে যায়। -ইবনে মাজাহ

 লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

Wordbridge School
Link copied!