• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেইক আইডি বিড়ম্বনা


বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৩:৪৬ পিএম
ফেইক আইডি বিড়ম্বনা

ঢাকা : করোনায় স্থবির গোটাবিশ্ব। করোনাভাইরাসের ভয়ংকর থাবায় পৃথিবীর মানুষ আজ আতঙ্কিত। এরই মাঝে করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে সচেতন করতে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময় সকলে ঘরবন্দি জীবনযাপন করে একঘেয়েমি সময় পার করছে।

তবে করোনাকালীন সময়ে সবারই যেন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। যার মাধ্যমে মানুষ খুব অল্প সময়েই কাছে-দূরের, চেনা-অচেনা সবার সাথেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। এর মাধ্যমে অনেকের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠছে, যাদের চিনি না, নাম-ঠিকানা সত্যি কি না তাও জানি না। আবার এই প্ল্যাটফরমে নিজেদের মতামত, ইচ্ছে, প্রতিবাদ সবকিছু নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারি।

বছরেও যাদের সাথে দেখা বা কথা হয় না তা ফেসবুকের মাধ্যমে আমারা তাদের সাথে প্রতিনিয়ত দেখা বা কথা বলতে পারি। তবে ফেসবুক যেমন আমাদের উপকারে আসে তেমনি এর অপকারও রয়েছে, যা আমাদের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমরা মানুষ, তাই খুব সহজেই অচেনা কাউকে বিশ্বাস করে ফেলি। এতে করে উপকার হলেও কখনো কখনো আমাদের বিপদের মুখে ফেলে দেয়।

একটু খেয়াল করলে দেখা যায় ফেসবুকে এখন মানুষ নানারকম সমস্যা, যেমন প্রতারণা, ফেইক আইডি বিড়ম্বনা এবং আইডি হ্যাকজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এমন ফেসবুক বিড়ম্বনা এখন অহরহ ঘটে চলছে। মূলত নিজের দোষেই আমরা নিজের সমস্যা ডেকে আনি।

তার কারণ হলো অচেনা কাউকে ফ্রেন্ড বানানো, তাদের কাছে নিজের পার্সোনাল কিছু আদান-প্রদান করা, বিভিন্ন লিংক ওপেন করা, আইডি লগইন করে পাসওয়ার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করা। এভাবেই আমাদের আইডি হ্যাক হওয়ার কবলে পড়ে এবং প্রতারিত হই। তবে ইদানীং একটা জিনিস খুবই বাজেভাবে মানুষকে প্রতারণা করছে তা হলো ফেইক আইডি। আইডিতে ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, পরিচয়, লিঙ্গ, ব্যক্তিগত তথ্য, কর্মক্ষেত্র, ছবি, পড়াশোনার স্থানসহ  ব্যক্তিগত বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে মূলত সেগুলোকে ফেক আইডি বলা হয়ে থাকে। আইডির মালিক বুড়ো নাকি ছেলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না। বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়ে উভয়েই এই ফেইক আইডি খুলতে পারে।

ফেসবুকে একটু ভালোভাবে নজর দিলেই দেখা যাবে মানুষের নাম ব্যতীত বিভিন্ন নাম, যেমন কষ্টের পাহাড়, অবুঝ বালক, চাঁদের আলো, দুষ্ট মিষ্টি মেয়ে, নীল পরি, হালকা বাতাসে লুঙ্গি আকাশে, মন মানে না, বলো না তুমি আমার এমন ইত্যাদি নামে ফেসবুক আইডি খোলা। এমনকি মানুষের নামেও আইডি খোলা হয়। কিন্তু বোঝার উপায় নেই সেটা ফেইক নাকি রিয়েল আইডি। এমন ফেইক আইডির বিড়ম্বনার শিকার হয়ে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো মান-সম্মান হারিয়ে ফেলে। ফেইক আইডি বিড়ম্বনার পাশাপাশি নাম বিড়ম্বনার ঘটনাটিও নতুন না।

অনেক সময় না বুঝতে পেরে আমরা অনেককেই আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা দেই। একপর্যায়ে তাদের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক হয়ে ওঠে, এমনকি কেউ কেউ ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অথবা পরকীয়ার মতো জঘন্যতম কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এভাবেই পরিচয়  কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের বিভিন্ন পার্সোনাল কথাবার্তা, অশ্লীল ছবি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় আলাপচারিতা চালিয়ে যায়। শেষ পরিণতি হয় ব্ল্যাকমেইল নামক শব্দ। এমনও আছে পরিচয়ের একসময় কখনো কখনো কোনো প্রেমিকার অশ্লীল ছবি ভাইরাল করার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।

ফেইক আইডির পাল্টায় পরে এমন হাজারো হয়রানির শিকার হয় মানুষ। করোনাকালীন সময়ে মানুষ বিভিন্ন পণ্য ফেসবুক পেইজ কিংবা গ্রুপের মাধ্যমে অর্ডার করে। অনেক অসাধু ব্যবসা-সম্পৃক্ত লোক ফেইক আইডি খুলে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করে আর মানুষ হয় প্রতারিত। এমন অনেক ফেইক আইডির আড়ালে থাকা মানুষের সাথে সম্মুখীন হয়েছি আমি এবং বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছি।

তবে কিছুদিন আগে এক ছেলে আমার বান্ধবীর নামে ফেইক আইডি খোলে এবং সেখানে আমার বান্ধবীর নাম, ছবি, ঠিকানা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসহ  সবকিছু এড করেছিল এবং আমার বান্ধবীর পরিচিত সকলকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত, এমনকি অনেকের সাথে চ্যাটিং করত। বিভিন্ন উপায়ে আমার বান্ধবীর সাথে  ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করত। এতে করে আমার বান্ধবী অনেক ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল।

এর কিছুদিন আগে আমার আরেক ফ্রেন্ড অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে এক ফেইক আইডির কবলে পড়ে টাকা সেন্ট করে এবং তৎক্ষণাৎ সেই আইডি আমার ফ্রেন্ডকে ব্লক করে দেয় আর সে হয় প্রতারণার শিকার। এভাবেই হাজারো মানুষ এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ফেসবুকে ফেইক আইডি বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া কি সম্ভব?

আমার মনে হয় নিজে থেকে একটুখানি সচেতন হলেই ফেইক আইডি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। আমাদের উচিত অচেনা কাউকে ফ্রেন্ড লিস্টে জায়গা না দেওয়া, বিভিন্ন ব্রাউজারে ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন না করা, কোনো লিংক সম্পর্কে না জেনে তা ওপেন করা। অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারেও সচেতন হওয়া জরুরি। নিজের ফেসবুক আইডি অন্যের সাথে শেয়ার না করা। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে শেয়ার না করা। এভাবেই আমরা সচেতন হতে পারি আর প্রতারণা এবং ফেসবুকে ফেইক আইডি বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে পারি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!