• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তারা পায় পদোন্নতি, বঞ্চিত নিন্ম গ্রেডের কর্মচারীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৬, ২০২১, ০৯:২৯ এএম
কর্মকর্তারা পায় পদোন্নতি, বঞ্চিত নিন্ম গ্রেডের কর্মচারীরা

ঢাকা: প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে করোনার মধ্যেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় পদোন্নতি দেওয়া হয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৮ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে ৫ জুন যুগ্ম সচিব পদে ১২৩ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় সরকার। এ ছাড়া সারা বছরই চলে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির কাজ।

অন্যদিকে হতাশায় নিমজ্জিত নন ক্যাডার এবং ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীরা। এমনকি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সরাসরি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাকরিতে প্রবেশ করা কর্মকর্তারা বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি নিয়ে নানামুখী সংকটে আছেন। অনেকে ১৫-২০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতির দেখা পাচ্ছেন না। অঘোষিতভাবে এক রকম ব্লক পদে চাকরি করে জীবন পার করতে হচ্ছে। উপরন্তু, বিদ্যমান বেতন স্কেলে তাদের এন্ট্রি পদের বেতন গ্রেডে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৮ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। এই পদে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১২১। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত আছেন ৫১৩ কর্মকর্তা। এ পরিস্থিতিতে ৯৮ জনকে অতিরিক্ত সচিব করা হয়। এর ফলে এ পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ৬১১। হিসাব অনুযায়ী অনুমোদিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ৪৯০। সংগত কারণে পদ না থাকায় পদোন্নতি পাওয়া অধিকাংশ কর্মকর্তাকে আগের পদেই (ইন সিটু) কাজ করতে হবে অথবা ওএসডি থাকতে হবে।

এর আগে ৫ জুন উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পায় সরকারের ১২৩ কর্মকর্তা। বিসিএস ১৮তম ব্যাচের এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে শুক্রবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী পদোন্নতির পর বর্তমানে যুগ্ম-সচিবের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৩৯ জনে। যদিও স্থায়ী পদের সংখ্যা ৪১১টি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকরিজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই পদে কাজ করছেন মাঠ প্রশাসনের হাজার হাজার কর্মচারী। বঞ্চনার এই কষ্ট নিয়ে ৭০ শতাংশ কর্মচারীকেই যেতে হচ্ছে অবসরে কিংবা পরপারে। এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে দুই দশক ধরে নানাভাবে আন্দোলন করছেন তারা। পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন। এক পর্যায়ে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটি নির্দেশনা দেয়, সুপারিশ করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেই নির্দেশনা আজও বাস্তবায়ন করেনি।

অথচ এরই মধ্যে এই কর্মচারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে অনেক। তা ছাড়া মাঠ পর্যায়ে অন্যান্য দপ্তরে সমপদের ২১ ধরনের কর্মচারীর পদবি এবং গ্রেডও পরিবর্তিত হয়েছে। সচিবালয়ে সমপদের কর্মচারীদের পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে দুই যুগ আগে। অবশেষে এবার মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা।

কিন্তু এর পরও পদোন্নতি ও পদবি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

সারাদেশে মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী ও ভূমি কার্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির (১৩-১৬ গ্রেড) কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। এর মধ্যে প্রতিটি শাখায় কাজ করছেন পাঁচ থেকে আটজন অফিস সহকারী। কিন্তু প্রতি শাখায় উচ্চমান সহকারীর পদ আছে মাত্র একটি। ফলে মাঠ প্রশাসনের ৭০ শতাংশ কর্মচারী অফিস সহকারী থেকে পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন না। চাকরিজীবনের শুরুর পদ অফিস সহকারী হিসেবেই অবসরে যেতে হচ্ছে তাদের।

এর ফলে সামাজিকভাবেও উপেক্ষিত হচ্ছেন তারা। টাইমস্কেল পেয়ে তাদের চাকরির বেতন দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও পদবি পাল্টায়নি। তাদের পদবি পরিবর্তন ও পদোন্নতিতে সরকারের অর্থনৈতিক সংশ্নেষ না থাকলেও দীর্ঘদিনেও পদোন্নতি দেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, এসডিজি, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনে রাতদিন কাজ করছেন তারা।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!