• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১০ লাখ প্রবাস ফেরত কর্মী এখনো বেকার


বিশেষ প্রতিনিধি মে ২, ২০২১, ১২:২৩ এএম
১০ লাখ প্রবাস ফেরত কর্মী এখনো বেকার

ঢাকা : বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। করোনা মহামারী শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া বছরে বাংলাদেশ থেকে ১১ থেকে ১২ লাখ কর্মী বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে তিন লাখ কর্মীকেও বিদেশ পাঠানো সম্ভব হয়নি। এসব কর্মীরা বিদেশ যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের পাসপোর্ট ইস্যু ও জমা এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিংও সম্পন্ন করেছিল।

এছাড়া দেশে এসে আটকা পড়ে আর যেতে পারেনি এবং অপেক্ষায় আছে এমন কর্মীর সংখ্যা আরো প্রায় ২ লাখ। এর বাইরে বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে কর্মরত আরো কয়েক লাখ কর্মী এখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেনি।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুসারে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছে। কিন্ত গত বছর থেকে করোনা মহামারী শুরু পর জনশক্তি রপ্তানি ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। গত বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরে জনশক্তি রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসেও গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি কর্মী গেছেন বিদেশে। এ হিসাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান চালু থাকলে গত বছর শেষ ৭ মাসে নতুন করে অন্তত পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল।

এছাড়া এ বছর প্রথম চার মাসে আরো প্রায় তিন লাখ কর্মী যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেনি। এরসঙ্গে দেশে এসে আটকে পড়ে কর্মহীন রয়েছে আরো দুই লাখ কর্মী। বিদেশগামী ও ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের পাশাপাশি বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও চরম বিপদে পড়েছেন। কাজ না থাকায় তাদের আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে।

গন্তব্য ও উৎস দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শ্রমবাজার স্বাভাবিক হবে না। গন্তব্য দেশগুলোতে ইতোমধ্যে কিছুটা উন্নতি হলেও আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি। এটি বিলম্বিত হলে শ্রমবাজার চালু আরো হুমকির সম্মুখীন পড়বে।

দেশে ফেরা প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে জরিপ করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। তিন সংস্থার জরিপেই প্রবাসীদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। প্রবাসীদের দ্রুত সহযোগিতা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে সংস্থাগুলো।

আইওএম সম্প্রতি এক হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত কর্মীর ওপর জরিপ করে বলেছে, জীবিকা সংকটে আছেন দেশে ফেরা ৭০ শতাংশ প্রবাসী কর্মী। প্রায় ৭৫ শতাংশ জানায়, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে যে দেশে কাজ করতেন, সে দেশেই আবার অভিবাসনে ইচ্ছুক।

তবে জরিপে ৫৫ শতাংশ বলেছে, তাদের ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে বা নতুন করে বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চিত্রটি বেশ বিপরীত। বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ছুটিতে আসেন দুই লাখের বেশি প্রবাসী। তারা ফিরতে পারছেন না। সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে পারেননি এক লাখ নতুন কর্মী। এই তিন লাখ কর্মী প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন এবং বিপন্ন হয়ে পড়েছে তাদের পরিবার।

বিদেশ থেকে প্রবাসীরা ফিরে আসছেন, ছুটিতে আসা প্রবাসীরা যেতে পারছেন না কিংবা নতুন করে প্রবাসে কর্মসংস্থান হচ্ছে না এ নিয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, এ খাতে আমাদের অভাবনীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখের বেশি কর্মী কর্মহীন আছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা হয়তো এখন বোঝা যাচ্ছে না। আগামী কয়েক বছরে এই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকবে।

তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানিখাতে এখন আমাদের উচিত হবে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া।

তিনি বলেন, আমাদের এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ ছিল অসচেতনতা। জনগণ সচেতন থাকলে এবং এরসঙ্গে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়তো না। জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোও আমাদের প্রবাসীদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিত না। এটা না হওয়ায় জনশক্তি রপ্তানিখাতসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

যদিও সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতায় বেশকিছু শ্রমিক আবার মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে যেতে পেরেছেন।

তবে সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছে। দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না তারা। পাচ্ছেন না কোনো সাহায্য। অনেকে ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!