• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় আতঙ্ক লঞ্চে!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৬, ২০২২, ০২:০১ পিএম
ঈদযাত্রায় আতঙ্ক লঞ্চে!

ঢাকা : ঈদ এলেই নাড়ির টানে ফিরতে হবে বাড়ি। সব বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়েন লাখো মানুষ। তবে এবারো ঈদযাত্রা কতটা নির্বিঘ্ন হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফেরি-সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো লঞ্চ সার্ভিস ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী ভোগান্তির বিষয়টিও সামনে আসছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যদিও অনেক সিট ফাঁকা রেখেই টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো। তবে লঞ্চে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মকানুন। এনআইডি ছাড়াই মিলছে লঞ্চের টিকিট। আর ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে লঞ্চগুলো।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি বলেছে, এবার কালবৈশাখী ঝড়ের সময় লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন লাখো মানুষ। কিন্তু লঞ্চগুলোতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসামগ্রী। এমনকি অনেক লঞ্চে নেই অগ্নিনির্বাক ব্যবস্থা। লঞ্চের ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে।  

এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। তবে প্রতিবারের মতো এবারো ঈদে ফিটনেসবিহীন একটি লঞ্চও চলতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

ঈদুল ফিতরের বাকি আরো ৬ বা ৭ দিন। ঈদ উদ্যাপন করতে ইতোমধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। রেলপথ ও নৌপথে যাত্রীর চাপ থাকলেও এখনো বাসে সেই চাপ নেই।

রোববার ২২ রমজানেও সকাল থেকে রাজধানীর সদর ঘাট, কমলাপুর রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে নানা চিত্র। ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের প্রতীক্ষায় ঠাঁই ছিল না কমলাপুরে।

ট্রেনের ২৮ এপ্রিলের টিকিট পেতে কমলাপুরে শনিবার বিকাল থেকেই মানুষের লাইনে সিরিয়াল দেওয়া শুরু করে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। এই লাইনে কেউ দাঁড়িয়েছেন গতকাল সন্ধ্যায়, রাতে, কেউবা ভোরে এসে যুক্ত হয়েছেন। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সময় এই লাইন আরো দীর্ঘ হয়ে একে বেঁকে বাইরের রাস্তায় চলে যায়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে ফিরে গেছেন খালি হাতে।

কাউন্টার থেকে একটা টিকিট দিতে চার থেকে পাঁচ মিনিট লাগছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। কেউ কেউ বলছেন-আরো বেশি সময় লাগছে। তারা বলছেন, একটা টিকিট দিতেই যদি এত সময় লাগে তাহলে হাজার হাজার যাত্রীকে টিকিট দিতে কত সময় লাগবে।

কমলাপুর রেলস্টেশনে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের কাছাকাছি থাকা এক যাত্রীর অভিযোগ করে বলেন, সেই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি, এখনো কাউন্টারের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। একটা টিকিট দিতেই অনেক সময় নিচ্ছে।

হাসান নামের আরেক যাত্রীর অভিযোগ, ওই পিলার থেকে এখানে আসতে সময় লেগেছে কয়েক ঘণ্টা। লোকটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে পিলারের দূরত্ব আনুমানিক ৫-৭ মিটার হবে। তিনি বলেন, যারা টিকিট দিচ্ছেন অনেক স্লো কাজ করতেছেন।

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও মিলছে লঞ্চের টিকিট। লঞ্চে ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করে লঞ্চমালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত ২০ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করলেও সে নির্দেশনার কিছুই পালন করছেন না লঞ্চমালিকরা। অনেক লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।

ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভীসহ তিনটি লঞ্চেই সিঙ্গেল কেবিনে ১০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। ডাবল কেবিনে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ২৬০০ টাকা, ডেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। ভিআইপি হাজার টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। আবার একই ভাড়ায় ডেকে ও ছাদে যাত্রী পরিবহন করছে লঞ্চগুলো।

এছাড়া এবার কালবৈশাখী ঝড়ের সময় লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু  কোনো লঞ্চেই নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরেজমিনে গতকাল সদরঘাট লঞ্চঘাটে দেখা যায়, ঢাকা ছাড়া যাত্রীদের চাপ শুরু হয়ে গেছে। লঞ্চে খালি নেই কোনো কেবিন। ডেকে যাত্রী ভরে তোলা হচ্ছে ছাদেও। আর অধিকাংশ লঞ্চ চলছে পুরনো ফিটনেসে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের কয়েকদিনে একমুখী এত যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রয়োজনী সংখ্যক নৌযান নেই। ফলে লঞ্চের ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে।  এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এ অবস্থায় ঈদে বিড়ম্বনামুক্ত নিরাপদ নৌযাত্রার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

লঞ্চের ছাদসহ ডেকে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হলে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে।

ফলে নৌপথে নিরাপদ ঈদযাত্রার জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় নৌযানের সংখ্যা বাড়ানো, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ  তাদের।

যদিও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষর (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো. সেলিম রেজা বলেন, আমরা প্রতিটি লঞ্চকেই কালবৈশাখী রুলস ফলো করার জন্য বলেছি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যখন ২ নাম্বার সিগন্যাল দেওয়া হয় তখন আমরা এক ইঞ্জিনের লঞ্চগুলো বন্ধ করে দেই। ৩ নাম্বার সিগন্যালে আমাদের সব লঞ্চ বন্ধ থাকে। সে ব্যাপারে আমরা মোটামুটি কঠোর। আমরা মানুষের জীবন নিয়ে কোনো কিছু হতে দেব না। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। যখন দেখব যে আবহাওয়া ভালো না তখন আমরা এখান থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়ব না। আমাদের প্রতিটি নদীবন্দরে আসলে ওভাবেই সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে। আর অতিরিক্ত যাত্রী যেন বহন না করা হয় সেজন্যও আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।

অন্যদিকে গতকাল রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও  গাবতলী বাস টার্মিনাল গিয়ে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। প্রায় সব বাস কাউন্টারেই মিলছে অগ্রিম টিকিট। সেখানে খুব একটা চাপ দেখা যায়নি। অনেক বাসের ধোয়া-মোছা ও মেরামতের কাজ চলছে। ঈদযাত্রার জন্য টার্মিনালের পেছনের অংশে দূরপাল্লার বাস সারিবদ্ধভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

টিকিট বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতি বছর ঈদের যাত্রীদের ভিড় জমে থাকতো। তবে এ ঈদে বাড়ি যাওয়া যাত্রীর দেখা একদম কম। প্রতিটি কাউন্টারেই যাত্রীর সংখ্যা কম।

গাবতলী টার্মিনালের কাউন্টার মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়বে। তবে এখন থেকে ঈদযাত্রা ঘিরে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সালমান হোসেন নামে আরেক বাসযাত্রী বলেন, আমি আগেই আসছি গাবতলী বাস টার্মিনালে। ঈদে বাড়ি যাওয়ার অগ্রীম টিকিট কিনতে। গাবতলীতে এসে একটু ভালো লাগছে। আসা মাত্রই রাজশাহীর টিকিট পেয়ে গেছি।

মাহাখালী বাস টার্মিনালের যাত্রী ফুরকান আহমেদ বলেন, আমার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল।  এই টার্মিনালে যাত্রীর চাপ একদম কম। তাই অনেকটা সিট ফাঁকা রেখেই বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ঈদযাত্রার চাপ এখনো শুরু হয়নি। দিনে বাস টার্মিনালগুলোতে তুলনামূলক যাত্রী কম থাকে। তবে এক-দুই দিনের মধ্যে যাত্রী সংখ্যা বাড়ে। ফলে সব কাউন্টারে সার্বিক প্রস্তুতি রাখার জন্য বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!