• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বে সমান দুই দল


সোনালী বিশেষ সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭, ০১:৫১ পিএম
রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বে সমান দুই দল

ঢাকা : বাংলাদেশে আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের চালকের আসনে নারী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাদ দিলে গত আড়াই দশক ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে পর্যাক্রমে আছেন দুইজন নারী। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার জোরালো প্রতিফলন নেই।

জানা যায়, গত আট বছরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, বিএনপি ১৩ দশমিক ০৫ ও জাতীয় পার্টি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ কোটা পূরণ করেছে। অন্যান্য দলের মধ্যে সিপিবি ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ পদে এবং জাসদ (ইনু) ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ অর্জন করেছে। ছোট-বড় কোনো দলই এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব গঠনের কাছাকাছিও যেতে পারেনি। ২০০৮ সালে হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সব স্তরের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ‘নারী নেতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এশিয়া প্যাসিফিক আন্তঃসংলাপে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দেশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের নানা বাধা সত্ত্বেও প্রায় অপ্রদ্বন্দ্বীভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার হাত ধরেই রাষ্ট্রের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। সরকারি দলের সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের আসনে স্থান পেয়েছেন নারীরা।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রধান হিসেবে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে। তখন থেকে বিরোধীদলের নেতার পদটিতেও রয়েছেন নারীরা। এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের মাধ্যমে আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে নারী নেতৃত্বের নতুন ইতিহাস করেছেন।

এদিকে আবার, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সব কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্বের যে প্রতিবেদন দলগুলো নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একই পরিসংখ্যান এসেছে। তবে অধিকাংশই বর্তমান অবস্থান তুলে না ধরে ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
আর ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেয়নি পাঁচটি রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলে নারী প্রতিনিধিত্ব দিন দিন বাড়লেও পিছিয়ে আছে ইসলামী দলগুলো। অনেক ইসলামী দলে ১ ভাগও নারী নেই।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই তাদের সকল পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য থাকার কথা জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন নারী প্রতিনিধিত্ব ১৯ শতাংশ বলে দলটি জানিয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলগুলো নিবন্ধন নেওয়ার সময় এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে ১৩ জুন দলগুলোকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এজন্য ১০ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও অর্ধেকেরও কম দলের সাড়া পাওয়ায় তাগিদপত্র দেওয়া হয়। পরে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে এখনো পাঁচটি দল প্রতিবেদন দেয়নি বলে ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা জানিয়েছেন। এ দলগুলো হলো বিকল্পধারা বাংলাদেশ, গণফোরাম, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।

এদিকে যারা প্রতিবেদন দিয়েছে, তার অধিকাংশই বর্তমান অবস্থান তুলে না ধরে ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে বলে আশার কথা জানিয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বলেছে, তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১১ দশমিক ৯৯ ও জেলা কমিটিতে ৮ থেকে ১০ শতাংশ নারী সদস্য আছেন।

বিপাকে ইসলামী দলগুলো : নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলে ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধি রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসলামী দলগুলো। ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারলে দলগুলো নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। ইসি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলে নারী প্রতিনিধিত্ব দিন দিন বাড়লেও পিছিয়ে আছে ইসলামী দলগুলো। অনেক ইসলামী দলে ১ ভাগও নারী সদস্য নেই।

নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে এমন দলও আছে যাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। শর্ত পূরণে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ অবস্থায় ইসলামী দলগুলোর নেতারা বলছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় তাদের আরও সময় দিতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের বিকাশের প্রতি তাদের সমর্থন থাকলেও স্বল্পসময়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি ‘চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে তারা মনে করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো এখন সেই শর্ত পূরণ নিয়ে বিপাকে রয়েছে। তারা আদৌ এ শর্ত পূরণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!