• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
স্বাধীনতার সুবর্ণ সুবর্ণজয়ন্তী

দেশ নিয়ে খুশি, ফুটবল নিয়ে অখুশি কায়সার হামিদ


মো. আতিকুর রহমান ডিসেম্বর ১৬, ২০২১, ১১:৫৫ এএম
দেশ নিয়ে খুশি, ফুটবল নিয়ে অখুশি কায়সার হামিদ

ঢাকা: উন্নতির গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করল বাংলাদেশ। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বাংলাদেশের প্রস্তুতির মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার সুখবরটি আসে। আর স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এসেছে উদযাপনের দ্বিগুণ প্রাপ্তি হয়ে।

এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। “টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।” ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়লে মুক্তি মেলেনি বাংলার মানুষের। জীবন ছিল পাকিস্তানি শেকলে বাঁধা। সেই শেকল ভাঙার মন্ত্র দিয়ে বাঙালিকে জাগিয়ে তোলেন শেখ মুজিব। বাংলার মানুষ যাকে ভালবেসে নাম দেয় বঙ্গবন্ধু।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রবাণীর পর ২৫ মার্চ ঢাকায় যে বিভীষিকা নামিয়ে এনেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী; তা একটি প্রতিরোধ যুদ্ধের মুখোমুখি করে দেয় বাঙালিদের। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বেতারবার্তায় যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, সেই মুহূর্তে ঘোর অন্ধকার, হানাদারের গুলি আর বেয়নেটে ক্ষতবিক্ষত দেশ। চলে নয় মাসের তীব্র লড়াই। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে সেই স্বাধীনতা। তারপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা আসে স্বাধীনতার; পরম শ্রদ্ধায় তাকে জাতির পিতা হিসেবে বরণ করে নেয় নতুন দেশ।

দেশের এই গৌরবের দিন উপলক্ষ্যে দেশ এবং দেশের ফুটবল নিয়ে কথা হয় সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদের সঙ্গে। যিনি বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের এবং সম্মানের বিষয়। আমার যে উন্নয়নের ধারায় আছি সেই ধারা অব্যাহত থাকুক সেই কামনা করি।

সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে দেশ যতটা এগিয়েছে তাতে আমাদের খুশি না হয়ে কোনো উপায় নেই। সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে খুব শিগগিরই যেন স্বীকৃত উন্নয়নশীল দেশ হয়ে উন্নতির কাতারে চলে যেতে পারি। এমন দিনে যার কথা না বললেই নয় যিনি না থাকলে হয়তো বাংলাদেশেরই জন্ম হতো না। সেই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। যার অক্লান্ত চেষ্টা আর ভূমিকায় আমরা স্বতন্ত্র ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে গেছেন সেটার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।

দেশ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেও একজন সাবেক ক্রীড়াবিদ হিসেবে দেশের বর্তমান সময়ের ফুটবল নিয়ে ততটা খুশি নন কায়সার হামিদ। সোনালীনিউজকে জানান নিজের আক্ষেপের কথা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৭০-৮০ এর দশকে দেশের ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। চারদিকে শুধু ফুটবলের জয়ধ্বনি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে এরপর থেকে ক্রিকেটটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর ফুটবলের জনপ্রিয়তায় বেশ ভাটা পড়ে। এর কারণ হিসেবে তিনি ফুটবলের ভঙ্গুর অবস্থাকেই দায়ী করেন। 

সাবেক এই ফুটবলার আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমার মনে হচ্ছে ফুটবলে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এক সময় ভারতের সঙ্গে আমরা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতাম। শেষ পর্যন্ত লড়াই চলত আমাদের। আর এখন সেই ভারতের অবস্থান কোথায়। আর আমরা কোথায়। তারা এখন বিশ্ব ফুটবল র্যাঙ্কিংয়ে ১০৫ নম্বর দল। আর আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে ১৮০-১৯০ এর মধ্যেই উঠানামা করছি। যেই সময় আমরা নেপাল, মালদ্বীপদের মতো দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাতাম, ৮-১০ গোল করে দিতাম। তাদের বিপক্ষেই আজ আমাদের হারতে হচ্ছে। জয় পেতে কষ্ট হচ্ছে। তারা এখন আমাদের চেয়ে বেশ শক্তিশালী দল।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে কায়সার হামিদ বললেন, আমাদের বর্তমান ফুটবল নিয়ে আমি সত্যিই মর্মাহত। সবকিছু ক্রমান্বয়ে উপরের দিকেই ধাবিত হয়। আর ফুটবলের দিক থেকে আমাদের অবস্থা দিন দিন অবনমনই হচ্ছে। 
ফুটবলের এই অবস্থার জন্য কিছু দুর্নীতিবাজকে সরাসরি দায়ী করেন কায়সার হামিদ। তিনি বলেন, ফুটবলে অনেক দুর্নীতিবাজ বড় বড় আসন নিয়ে বসে আছে। কিন্তু ফুটবলের উন্নয়নে যা করার দরকার তার কানাকড়িও দেখছি না। ফুটবলের এই ভঙ্গুর অবস্থার জন্য কতিপয় এই দুর্নীতিবাজরাই দায়ী। 

অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার হামিদ জানালেন, প্রথমত ফুটবলকে ঢেলে সাজাতে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে। যোগ্য লোকদের কাছে ফুটবলের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে যারা ফুটবলের উন্নতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। শুধু তিনিই নন, বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবারটাই ক্রীড়াপ্রেমী। খেলাধুলার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যে ভূমিকা রেখেছিলেন তার সুযোগ্য কন্যা সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তবে এই মুহূর্তে ফুটবলের প্রতি তার বিশেষ নজর আশা করছি।

যাতে করে আমরা খুব শিগগিরই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। এবং খুব দ্রুতই বিশ্ব দরবারে ফুটবলের অন্যতম শক্তিধর একটি দেশে পরিণত হতে পারি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশনেত্রীর কাছে সাবেক ফুটবলার হিসেবে একটাই চাওয়া দেশের ফুটবলের উন্নয়নে যে যে পদক্ষেপগুলো খুব জরুরি হয়ে পড়েছে সেগুলো অতিসত্বর বাস্তবায়ন করতে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।   

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!