• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যারাডোনা বেঁচে আছেন ফুটবলভক্তদের হৃদয়ে


ক্রীড়া ডেস্ক নভেম্বর ২২, ২০২২, ১২:০৩ পিএম
ম্যারাডোনা বেঁচে আছেন ফুটবলভক্তদের হৃদয়ে

ঢাকা : ১৯৮৬’র বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৮৩ মিনিটে জয়সূচক তৃতীয় গোলটি করে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন হোর্হে বুরুচাগা। বাকি দু’গোল এসেছিল হোসে ব্রাউন ও ভালদানোর পা থেকে। তবে কি সেবারের আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের নায়ক তারা? এমন প্রশ্নে বুরুচাগারাই হয়তো বিব্রত হতেন।

নিশ্চিত প্রশ্নকর্তাকে জোর ধমক দিয়ে বলতেন, ‘কী যে আবোল-তাবোল বকছো? ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে আমরা কেউ নায়ক না। নায়ক একজনই। লোকে তাকে বলে ফুটবলের ঈশ্বর। অনেকের কাছে তিনিই ফুটবল সম্রাট। আমাদের কাছে নেতা। তিনি ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা।’

কাতার বিশ্বকাপের বাঁশি বেজে গেছে। ভক্তদের আনাগোনা শুরু হয়েছে দোহার প্রতিটি প্রান্তে। আজ আর্জেন্টিনাও শুরু করে দিচ্ছে তাদের অভিযান। এমন মুহূর্তে তাবৎ দুনিয়ার শত-কোটি চোখ দোহার স্টেডিয়ামগুলোর ভিআইপি স্ট্যান্ডে শুধুই খুঁজে বেড়াবে শতাব্দীর সেরা ফুটবলারকে।

দু’বছর হয়ে গেল ম্যারাডোনা মিলিয়ে গেছেন অনন্তলোকে। ২৫ নভেম্বর তার জীবনাবসনের দু’বছর হয়ে যাবে। নাহ। তিনি পালিয়ে যাননি। বেঁচে আছেন ফুটবলভক্তদের হৃদয়ে। তাই দোহায় ঈশ্বরের দেখা যে মিলবে না, তা মানতেই চাইছেন না আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজ।

স্টার প্লাস টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘নির্দ্বিধায় বলতে চাই, তিনি এখানেই কোথাও না কোথাও থাকবেন। আমাদের উজ্জীবিত করবেন, পাশে থাকবেন, সারাক্ষণ সমর্থন দিয়ে যাবেন। তোমাকে সেভাবেই তাঁকে খুঁজে নিতে হবে।’

এর আগেই অবশ্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডিফেন্ডার বাস্তবতা মেনে বলেছিলেন, ‘যখনই ভাবি তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, ভীষণ শোকাহত হয়ে পড়ি। কঠিন সত্যটা হলো এই ধাক্কা আমরা এত সহজে কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’

১৯৮২ থেকে ১৯৯৪। চারটি বিশ্বকাপে ফুটবলবিশ্ব মোহিত হয়ে দেখেছে ম্যারাডোনার সব জাদুকরী কীর্তি। এটা হতে পারত ১৯৭৮ থেকেই। সেবার ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তাকে দলে না নেওয়ায় কোচ লুইস মানোত্তিকে সইতে হয়েছিল হাজারো সমালোচনা। সুযোগ না পেয়ে হয়তো তারও জেদ চেপেছিল। পণ করেছিলেন, আমি খেলব, আর জিতে নেব গোটা বিশ্ব। সেটাই করে দেখিয়েছেন ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে। চারবারের মধ্যে ওই একবারই বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। তবে ম্যারাডোনা তো হৃদয়ের মসনদ জিতে নিয়েছেন প্রতিবারই। ৮৬ বিশ্বকাপের পর তাকে নিয়ে বলা অনেক বাণীর একটি, ‘বিশ্বকাপ ফুটবল অনেকে খেলেছে, এর চেয়েও বেশি জিতেছে কেউ কেউ, কিন্তু এভাবে কেউ জিতেনি। দেখে মনে হতো, তিনি ১১ এর ১ নন, একাই ১১।’

৮৬’-তে সব জয়ের পরের দু’টি বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফাইনালে নাম লিখালেও হাঁটুর চোট বেশ ভুগিয়েছে তাকে। আর যুক্তরাষ্ট্রে পরের বিশ্বকাপে মাত্র ২ ম্যাচ খেলতে পারেন তিনি। এরপর গোটা বিশ্ব থমকে যায় ম্যারাডোনার ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসায়। অথচ শুরুটা করেছিলেন ঠিক নিজের মতো করে। গ্রিসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গোলের পর তার পাগলাটে উদযাপন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা উদযাপনের একটি। পরের ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দু’টি নিখুঁত ফ্রি কিকে দুই সতীর্থকে দিয়ে গোল করিয়েছিলেন। এরপরই ড্রাগ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে শেষ হয় তার ক্যারিয়ার।

এরপরও ঠিক রাজার মতোই ফুটবল বিশ্ব শাসন করেছেন ম্যারাডোনা। বুট জোড়া তুলে রাখার পরও। তিনি থেকেছেন আলোচনায়, সমালোচনায়, তর্কে এবং অবশ্যই নানা বিতর্ক জন্ম দিয়ে।

২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান হুলিও গ্রন্দোনা জাতীয় দল তুলে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনার হাতে। তাতেই মনে হচ্ছিল ঈশ্বর এবার মুখ তুলে তাকাবেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা-মেসি জুটিতে মিলবে সাফল্য। এমন একটা বিশ্বাস সঙ্গী হয়েছিল ভক্তদের। শুরুটাও হয়েছিল অসাধারণ। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনাকে থমকে দেয় জার্মানি। এরপর আর জাতীয় দলের দায়িত্বে দেখা যায়নি ম্যারাডোনাকে।

তবে ২০১১ সালে তাকে কোচ করে চমকে দেয় দুবাইভিত্তিক ক্লাব আল ওয়াসেল এফসি। ঠিক তখন থেকেই মূলত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ম্যারাডোনার সখ্যের শুরু। পরের বছর বরখাস্ত হলেও ২০১৭-তে সেখানে ফেরেন দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব ফুজাইরার দায়িত্ব নিয়ে। তবে তিনি পারেননি দলকে শীর্ষ লিগে তুলতে।

এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবে কোচিং ফেরি করে গেলেও সাফল্য সেভাবে ধরা দেয়নি। যাওয়ার বেলায় বয়স হয়েছিল মাত্র ৬০ বছর। বয়স হিসেবে মৃত্যুটা একটু তাড়াতাড়িই এসে হাজির হয়েছিল দু’বছর আগে ২৫ ডিসেম্বর। মদ-মাদক-অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারী জীবনে অভ্যস্ত ম্যারাডোনা চলে গেলেন অসময়ে।

গেলবার রাশিয়া বিশ্বকাপেও ছিলেন। আলোচনারও জন্ম দিয়েছিলেন সেন্ট পিটার্সবার্গের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে, লাক্সারি বক্সের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে আর্জেন্টিনার জয়ে বুনো উল্লাস করে, আবার কখনো মেসিদের গোল ও জয়ে দু’হাত প্রসারিত করে সত্যিকারের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। এমন হাজারো মুহূর্ত উপহার দেওয়া ফুটবল ঈশ্বরের দেখা হয়তো দৃশ্যত মিলবে না খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডে। তবে আকাশি-সাদার অনুসারীরা জানে ও বিশ্বাস করে, তিনি আছেন, তিনি ঠিকই থাকবেন।

দূর আকাশ থেকে হয়তো চেঁচিয়ে মেসিকে অভয় দেবেন, ‘আমি আছি তোমার পাশে; আমাকে ছাড়িয়ে যাও। আর্জেন্টিনাকে আমার নয়, তোমার আর্জেন্টিনা বানাও।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!