• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অর্ধাহারে-অনাহারে চলে যাদের দিন


মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি ডিসেম্বর ১১, ২০১৭, ০৯:৪৯ এএম
অর্ধাহারে-অনাহারে চলে যাদের দিন

ঝালকাঠি: জেলার রাজাপুরের বড়ইয়া ও পালট গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশুরা হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহে কাতর হয়ে পড়েছে। পরিবারের অভিভাবকরা শিশু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন শীতজনিত রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য।

সূত্র মতে- এ জেলায় প্রতিবন্ধী রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। যদিও এ পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ১০ হাজারের কিছু বেশী। জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে রাজাপুরেই প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশু। এর মধ্যে বড়ইয়া ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় দেড় হাজারেরও অধিক প্রতিবন্ধী মানুষ। বিষখালি নদী তীরবর্তী এ ইউনিয়নের বড়ইয়া ও চর পালট গ্রামের পরিবারগুলো অধিকাংশই জেলে হওয়ায় এ উপজেলার মধ্যে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সেখানে। বর্তমানে শীতে এসব প্রতিবন্ধীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পবিরারের বোঝা এ প্রতিবন্ধীরা অনেকেই ভাতাও পাচ্ছেন না।

এ দুই গ্রামে নেই কোন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ও। বিষখালি নদী তীরবর্তী প্রত্যেক জেলে পরিবারে জন্ম নেয়া এ অবহেলিত প্রতিবন্ধীরা আজও পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে আছে। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারেই আছে একাধিক প্রতিবন্ধী। তার মধ্যে অনেকেই মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা পালট বড়ইয়া প্রতিবন্ধী সমিতির হিসাব মতে এই গ্রামে ২ হাজারেরও বেশি প্রতিবন্ধীদের বাস। এদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সংখ্যাই বেশি।

প্রতিবন্ধীদের স্বজনরা জানান, জন্মের ৩/৪ মাস পর হঠাৎ জ্বর হয়েই এরা হয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী। কেউ শারিরিক, কেউ মানুষিক আবার কেউ বাক প্রতিবন্ধী। পালট-বড়ইয়া গ্রামের এই প্রতিবন্ধীরা অত্যন্ত অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত এসব পরিবারগুলোতে যেখানে নিজেদের খাবার জোটেনা সেখানে এই প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঁঝা হয়ে আছে। তবে প্রতিবন্ধীদের হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনে সরকারি ভাতা পান।

বেসরকারিভাবেও কখনো কোন সাহায্য জোটেনি এই জনগোষ্ঠীর। এত বেশি প্রতিবন্ধী থাকার সঠিক কোন কারণ এখনো জানা না গেলেও স্থানীয়রা মনে করেন নদী তীরবর্তী গ্রাম হওয়ায় এমনটা হতে পারে। এ দুই গ্রামে এতো বেশি প্রতিবন্ধী থাকা সত্ত্বেও নেই কোন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।

গ্রামবাসীর দাবি প্রতিবন্ধীদের সঠিকভাবে সহযোগীতা ও বিদ্যালয় স্থাপন করে এ জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে গড়ে তোলা। এখনও এই বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধীরা শিক্ষা, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরনের সুযোগ খুবই সীমিত। জেলায় সরকারি ভাবে অন্ধদের জন্য একটি স্কুল, একটি প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষন কেন্দ্র এবং বেসরকারি সংগঠন সুইড বাংলাদেশ এর পরিচালনায় একটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল রয়েছে এছাড়া ব্যাক্তি উদ্যোগে চারটি স্কুল চালু থাকলেও সরকারি সহায়তা অর্থাৎ এমপিও ভুক্ত রয়েছে একটি।

বাকিগুলো চলছে শিক্ষক কর্মচারীদের সেচ্ছাশ্রমে। এসব স্কুলের প্রয়োজনীয় উপকরন জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিচালকরা। অসহায় প্রতিবন্ধীদের সহযোগীতায় সরকারী ভাবে কোন উদ্যোগ নেই ঝালকাঠির প্রতিবন্ধী গ্রামগুলোতে।

অর্ধাহারে-অনাহারে যাদের দিন চলছে, তাদের পাশে দাড়ানোর মত যেন কেউ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিবন্ধীতায় ছেয়ে যাবে পুরো গ্রামগুলো। যা ডেকে আনবে চরম মানবিক বিপর্যয়। আর তা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই সরকার এসব প্রতিবন্ধীদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসবে, এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

ঝালকাঠি সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমীন সেখ জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজারের কিছু বেশী প্রতিবন্ধীকে নিবন্ধীত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২৬০ জনকে ভাতা দেয় হয়। জেলায় মোট প্রতিবন্ধীর তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই নগন্য। যে কয়টি রয়েছে সেগুলোও সরকারি সহায়তা বঞ্চিত। প্রতিবন্ধী পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সরকার এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!