• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকে নারীর বড় চ্যালেঞ্জ সময়ানুবর্তিতা


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২২, ২০২১, ০৩:৫৯ পিএম
ব্যাংকে নারীর বড় চ্যালেঞ্জ সময়ানুবর্তিতা

ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে ২০১৭ সালে ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের পথচলার পর পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত তিনি। কেতাবী নাম শাহিদা কামরুন হলেও তিনি সমধিক পরিচিত চয়নিকা সাথী নামে। তার পথচলা ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে—

সোনালীনিউজ : সাফল্যগাথা রচনার পেছনের গল্প।

শাহিদা কামরুন : জীবনে চলার পথে নারী হওয়ার কারণে অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে, সমাজের অনেক বিধি-নিষেধের বেড়াজাল ভাঙতে হয়েছে—তবু থেমে থাকিনি কখনো। পড়াশোনা অবস্থাতেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি, কর্মজীবী নারী হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই করেছি। এই লড়াইয়ে সবসময় পাশে পেয়েছি পরিবার, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের। তাদের ভালোবাসা আমাকে প্রতিনিয়ত লক্ষ্যে স্থির থাকতে সহায়তা করেছে। পরিবারের ভালোবাসা যেকোনো মানুষের সফলতার পথ সুগম করে দেয়, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়। পরিবারের ইচ্ছে ছিল বিসিএস ক্যাডার হব। বাংলাদেশ ব্যাংক ছিল আকাশছোঁয়া স্বপ্নের নাম তাই সেন্ট্রাল ব্যাংকার হব ভাবিনি কখনো! প্রথম চেষ্টায় পারিনি, দ্বিতীয় চেষ্টায় হয়েছি সফল।

সোনালীনিউজ : সাফল্যের মূলমন্ত্র।

শাহিদা কামরুন : হার না মেনে ‘নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকা’ই আমার সাফল্যের মূলমন্ত্র।

সোনালীনিউজ : কাস্টমার সার্ভিসে কাজের গুরুত্বপূর্ণ দিক।

শাহিদা কামরুন : ধৈর্য, কর্মসচেতনতা ও উত্তম আচরণ কাস্টমার সার্ভিসে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। যিনি আমার কাছে ব্যাংকিং সেবা নিতে আসবেন তিনি যেন আমার ও আমার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সুউচ্চ ধারণা নিয়ে ফিরে যেতে পারেন এটা নিশ্চিত করা আমার দাায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি।

সোনালীনিউজ : নারী হিসেবে ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা।

শাহিদা কামরুন : পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সংসার ও কর্মজীবনের পথচলায় কোনো না কোনো বাধা আসবে এটা মেনেই আমাদের পথ চলা। তবে আমার সৌভাগ্য, কর্মজীবনে কাজের ক্ষেত্রে নারী হিসেবে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। যখন যে দাায়িত্ব পেয়েছি সঠিকভাবে পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো কাজে ত্রুটি পেলে সুন্দরভাবে সঠিকটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভালো কাজে সবসময় প্রশংসা পেয়েছি।

সোনালীনিউজ : ব্যাংকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে।

শাহিদা কামরুন : প্রতিষ্ঠান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদার মনোভাব এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশই পারে ব্যাংকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে।

সোনালীনিউজ : নারী হিসেবে ব্যাংকার পেশায় চ্যালেঞ্জ।

শাহিদা কামরুন : ব্যাংকের কর্মপরিবেশ ও কর্মপরিধি অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। ব্যাংকার পেশায় নারী হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমার কাছে মনে হয় সময়ানুবর্তিতা রক্ষা করে চলা। কেননা, সংসার ও কর্মজীবন একসাথে সামলাতে গিয়ে অনেক নারীকেই দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়। যন্ত্রের মতো কাজ করে যেতে হয়। আমার আর একটি চ্যালেঞ্জ হলো কর্মজীবনের কাজ নিয়ে পড়াশোনা করা। যেহেতু আমি সাহিত্য ঘরানা থেকে ব্যাংকিং জগতে এসেছি, তাই আমাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় জানতে ও শিখতে হয়।

সোনালীনিউজ : আপনার পরিবার তো প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত।

শাহিদা কামরুন : আমার স্বামী কৈশোরকাল থেকেই লেখালেখির সাথে যুক্ত। লেখালেখি ও লেখকদের প্রতি ভালোবাসার সূত্র ধরে ২০০৮ সাল থেকে প্রকাশনা কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ নামে আমাদের পারিবারিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে স্বমহিমায়। প্রকাশনার কাজ করতে গিয়ে অনেক তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভালো-মন্দ লেখা ও লেখক যাচাই করার সুযোগ হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়েছে। বিগত সালের করোনা অতিমারি আমাদের অনেক পিছিয়ে নিয়ে গেলেও চেষ্টা চলছে উত্তরণের।

সোনালীনিউজ : নারীদের উদ্দেশে বার্তা।

শাহিদা কামরুন : অসীম ধৈর্য, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও নৈতিক শিক্ষা অন্তরে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে নিজের লক্ষ্যে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রক্তচক্ষু ও লক্ষ্যচ্যুৎ করার বিভিন্ন ফাঁদ এড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে স্বপ্নপূরণের পথে।

সোনালীনিউজ : আপনার সাফল্য যেভাবে নারীদের উৎসাহিত করবে।

শাহিদা কামরুন : অজপাড়াগাঁয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হিসেবে বিভিন্ন পাওয়া-না পাওয়াকে সঙ্গী করে, সমাজের নানা কটূক্তিকে উপেক্ষা করে, সংসার সামলে, নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এই যে নিজের স্বপ্নকে ছুঁতে পারা—আমি মনে করি, এটাই অন্য নারীদের সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহ জোগাবে।

সোনালীনিউজ : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

শাহিদা কামরুন : ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো ব্যাংকিং পেশা সংক্রান্ত উচ্চতর ডিগ্রিলাভ করা, যাতে  পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

সোনালীনিউজ : ক্যারিয়ার নিয়ে তরুণদের উদ্দেশে বার্তা।

শাহিদা কামরুন : বর্তমান তরুণ সমাজ প্রযুক্তিনির্ভর। এরা নিজেদের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে প্রযুক্তির সাথে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চারপাশের বাহ্যিক জগতের সাথে, পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করার অনীহা কাটিয়ে উঠতে হবে। বইপড়ায় মনোযোগী হতে হবে। নিজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে চিনে নিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

সোনালীনিউজ : ব্যাংকার হতে চাওয়া নারীদের জন্য পরামর্শ।

শাহিদা কামরুন : যে নারীরা ব্যাংকার হতে চান তাঁদের বলতে চাই আগে পরিশ্রমী মনোভাব নিয়ে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে ব্যাংকিং পেশা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করুন। তারপর ভয়কে জয় করে নির্ধারণ করুন নিজের সফলতার সীমানা।

সূত্র : বাংলাদেশের খবর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!