• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তাসলিমার হাতে সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে বিদেশেও


নিজস্ব প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৭, ২০২১, ১১:১৫ এএম
তাসলিমার হাতে সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে বিদেশেও

সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে বিদেশেও, ফাইল ছবি

ঢাকা: বাবা সব সময় চাইতেন তার মেয়েরা স্বনির্ভর হোক। মূলত তার অনুপ্রেরণাতেই সেলাইয়ের কাজ শেখা। তবে সেলাই শিখলেও শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। কলেজে পড়াশোনার সময়ই বিয়ে হয়ে যায়। এরপর দুই বাচ্চা। তবে সব সময়ই নিজে কিছু করার তাগিদ অনুভব করতেন। অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে পুঁজি করে এখন স্বাবলম্ব্বী তাসলিমা আলম। শুধু নিজেই স্বাবলম্ব্বী নন, কর্মসংস্থানের পথ করে দিয়েছেন আরও অনেক নারীর।

ঝিনাইদহের সদর উপজেলায় বেড়ে ওঠা তাসলিমার। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। এসএসসি পরীক্ষার পর বাবার ইচ্ছাতে সেলাইয়ের কাজ শেখেন তাসলিমা। তবে সেলাই শিখলেও এটাকে কাজে লাগাতে পারেননি তখন। কলেজে পড়াশোনার সময় বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুরে, স্বামী বেসরকারি চাকরিজীবী। এরপর আর পড়াশোনা করা হয়নি। তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে দুই মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন ঢাকাতে। তবে দুই মেয়ে, সংসার সব কিছু মিলিয়ে স্বামী শফিউল আলম হিমশিম খাচ্ছিলেন। সে সময় তাসলিমার মনে হয় এবার একটা কিছু শুরু করা দরকার। নিজের কিছু করার অদম্য ইচ্ছা থেকেই শুরু করেছিলেন ২০১৭ সালে ৬ হাজার টাকায় কেনা একটি সেলাই মেশিন দিয়ে।

সফলতার পেছনের গল্প বর্ণনা করতে গিয়ে তাসলিমা বলেন, সেলাই মেশিন কিনলেও ঘরে নিজেদের আর বাচ্চাদের কাপড় বানাতাম। এরপর একদিন পরিচিত এক আপু তার কাপড় বানাতে দেন জোর করেই। সেখান থেকেই শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতি মাসে ঘরে বসেই তার উপার্জন ৩০-৪০ হাজার টাকা। একে একে কিনেছেন আরও চারটি মেশিন। তার তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন আরও চারজন নারী।

তিনি বলেন, 'একজন-দুইজন করে আশপাশের বাসার সবাই কাপড় সেলাই করতে দেন। প্রথমে দিনরাত এক করে কাজ করতাম, কারণ কাপড়গুলো তো ডেলিভারি দিতে হবে। কিন্তু যখন বেশি অর্ডার আসা শুরু হলো, তখন আর নিজের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হলো না। আশপাশের কেউ সেলাইয়ের কাজ জানে কিনা খুঁজতে লাগলাম। পরে কয়েকজনকে পেয়েও গেলাম। কাজের ওপর ভিত্তি করে আমি প্রতি সপ্তাহে তাদের পেমেন্ট দিই। দেখা যায় মাস শেষে প্রতিজন এখান থেকে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা উপার্জন করছেন।'

এ কাজে স্বামী শফিউল আলমের উৎসাহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার স্বামী বাইরে কাজ করতে দেননি। ঘরে বসে সেলাই করার কথা যখন তাকে বলি তিনি আমাকে সেলাই মেশিন কিনে দেন। ঘরেই যখন সেলাই শুরু করলাম, তখন আমার কাজ দেখে তিনিই বেশি খুশি হয়েছেন। এখন আমার কাজে ঘরে-বাইরে সমানভাবে তিনিই সহযোগিতা করছেন।' তাসলিমার হাতে সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। জানালেন, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে অর্ডার নিয়ে সে অনুযায়ী কাপড় সেলাই করে পাঠাচ্ছেন বিদেশেও। অনেকের কাছেই তিনি এখন অনুকরণীয়। নারীদের স্বাবলম্ব্বী হতে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণও। এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে ৭-৮ জন সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

সেলাই নিয়ে স্বপ্নের কথা জানালেন তাসলিমা। দুই মেয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান। বললেন, 'প্রতিষ্ঠানটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন ভবিষ্যতে আমার দুই মেয়ে এটাকে কাজে লাগাতে পারে। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা যেন এই প্রতিষ্ঠানেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

সোনালীনিউজ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!