• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গোঁয়ার্তুমি

অচল হয়ে পড়লো মার্কিন সরকার


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮, ০১:০৪ পিএম
অচল হয়ে পড়লো মার্কিন সরকার

ঢাকা : দুই দিন পরেই বড়দিনের উৎসব। তার আগেই ফের অচল (শাটডাউন) হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। চাকা গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের হাতে কানাকড়িও নেই। তাই ক্রিসমাসের ছুটির মৌসুমে শনিবার থেকে ঝাঁপ বন্ধ হতে শুরু করেছে মার্কিন সরকারি দফতরগুলোর। ফলে রীতিমতো বিপদের মুখে ৮ লাখ সরকারি কর্মচারী।

এখন তাদেরকে হয় বেতন-মাইনে না নিয়ে মাসের পর মাস কাজ করে যেতে হবে। না হলে হারাতে হবে চাকরি। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৪০ বছরের মধ্যে এক বছরে তিনবার শাটডাউন হল সরকার। তৃতীয় অচলাবস্থা কবে নাগাদ কাটবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোঁয়ার্তুমির কারণে সামনের দিনগুলোর জন্য সরকারি বাজেট অনুমোদন করতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা। এ কারণে সরকারের ২৫ ভাগ কর্মচারীর বেতন বন্ধ হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে নাসার বেশির ভাগ কর্মীকে।

মাইনে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা), বিচার বিভাগ ও কৃষি দফতরগুলোর কর্মীদেরকে। ক্রিসমাসের ছুটির মৌসুমের গোড়া থেকেই বেতন না পাওয়া বা চাকরি যাওয়ার আশঙ্কায় কার্যত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন ৮ লাখেরও বেশি কর্মচারী। সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে হোয়াইট হাউসের ১৭শ’ কর্মচারীর অর্ধেককেই।

মার্কিন অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর। তার আগেই বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সমঝোতার অভাবে কখনও কখনও কংগ্রেস তা পাস করতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনার তহবিল জোগান দিতে হয়।

অস্থায়ী এই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুই কক্ষের অনুমোদনসহ প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের অপরিহার্যতা আছে। গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষেই আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের সব বিভাগ সচল রাখতে প্রয়োজনীয় ১৩০ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দের একটি বিল অনুমোদন পেয়েছিল। সে সময় হোয়াইট হাউসের পক্ষে ইঙ্গিত দেয়া হয়, বিলটি অনুমোদন করা হবে। তবে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ট্রাম্প বিলটিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানান।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা বৃহস্পতিবার বাজেট বরাদ্দ বিলে দেয়াল নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ যুক্ত করার বিষয়টি অনুমোদন করে।

প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হওয়ার পরপরই ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার জানিয়েছিলেন, সিনেটে বিলটি পাস হবে না। ট্রাম্প বলেছিলেন, দেয়াল নির্মাণ প্রশ্নে বরাদ্দ না পেয়ে যদি অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে তিনি ‘গর্ববোধ’ করবেন। তবে শুক্রবার তিনি সব দায় চাপান ডেমোক্র্যাটদের ওপর।

এক টুইটার পোস্টে ট্রাম্প বলেন, বাজেট পাস করতে ‘সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দরকার। তবে তারা সম্ভবত সীমান্ত নিরাপত্তা ও দেয়াল নির্মাণ প্রশ্নে বরাদ্দের বিরোধিতা করবেন, যদিও এর অপরিহার্যতা তারা বোঝেন।

তিনি হুমকি দেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা নেতিবাচক অবস্থান নিলে সরকারে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে এবং তা হবে দীর্ঘমেয়াদি। জনগণ উন্মুক্ত সীমান্ত আর অপরাধ চায় না।’ পরে ওভাল অফিসে তিনি বলেন, সরকারে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা না করার ব্যাপারটা এখন ডেমোক্র্যাটদের হাতে। আমি আশা করব অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে না তবে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার মুখোমুখি হতে আমরা প্রস্তুত।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তিন-চতুর্থাংশ কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ বরাদ্দ করা আছে। বাকি এক-চতুর্থাংশের বাজেট ফুরিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা ঠেকাতে শুক্রবার নতুন বাজেট বরাদ্দ ছিল অপরিহার্য। দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছাতে এদিন দুই পক্ষের আইনপ্রণেতারা আলোচনায় বসেন। সমঝোতার অভাবে সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। সৃষ্টি হয় ‘অচলাবস্থা’।

হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা ও উভয় পার্টির কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও শনিবার দিনের প্রথম ভাগেই বন্ধ হয়ে যায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কার্যক্রম। তৃতীয় দফার অচলাবস্থার মুখে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, উগ্র ডানপন্থীদের দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতি নিজের অঙ্গীকার প্রমাণ করতেই ট্রাম্প ওই অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!