• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ পথে ভারত থেকে আসছে বিপুল সংখ্যক গরু


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২, ২০২০, ১১:৩২ এএম
অবৈধ পথে ভারত থেকে আসছে বিপুল সংখ্যক গরু

ঢাকা : কোরবানির ঈদে ভারতীয় গরু আসবে না। সরকারের এমন ঘোষণায় করোনাকালেও দেশীয় খামারিরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু চোরাই পথে বাংলাদেশে গরু ঢুকে পড়ায় লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। 

খামারিরা জানান, করোনাকালে এমনিতে তাদের ঘরে ভাতের টান পড়েছে। কোরবানির ঈদকে ঘিরে স্বল্পসংখ্যক গরুকে মোটাতাজা করে কিছু লাভের আশা করছেন তারা। কিন্তু ভারতীয় গরু এদেশে আসলে দেশীয় খামারিদের পথে বসতে হবে। 

অবৈধ পথে হলেও সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে উল্লেখ করে কয়েকজন খামারি বলেন, গবাদিপশুর রোগবালাইসহ পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে এমনিতে এখন গরুতে লাভ থাকছে না। তার ওপর ঈদের আগে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে গবাদিপশু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে দেশীয় খামারিরা।

অতিসম্প্রতি লালমনিরহাটের পাটগ্রামে এক গরু পাচারকারী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পাচার হয়ে আসা গরুগুলোকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাটিফিকেট দিয়ে বৈধ করে বাজারে বিক্রি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বেশ কিছু ভারতীয় গরু উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ভারতীয় গরুর একটি চালান আটক করা হয়। যদিও পুলিশ প্রশাসন বলছে যে কোনো মূল্যে ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে হবে। অন্যদিকে পরীক্ষা ছাড়াই ভারতীয় গরু অবাধে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে উত্তরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ব্যবসায়ীরা ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আনা শুরু করেছে। ভারত সরকার কর্তৃক বাংলদেশে গরু রপ্তানি নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে। দুই পারের ব্যবসায়ীরা অবৈধ পথে এসব গরু কেনা বেচা করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও নগদ লাভের আশায় গরু আনা হচ্ছে ভারত থেকে।

গত ২৫ জুন ভোররাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শাহ আলম নামে এক বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এলাকার লোকজন জানান, প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফের গুলি উপেক্ষা করে ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমিত আকারে হলেও গরু আসছে। তাদের ধারণা ঈদের আগে প্রচুর ভারতীয় গরু আমদানি হবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরের সীমান্ত এলাকা লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী, আউলিয়ারহাট, বাউরা, রসুলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার গোরকমন্ডপ, ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, নীলফামারীর ডিমলা, চিলাহাটি, দিনাজপুরের হিলি, জয়পুরহাটের টেপরা, চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কোরবানির ঈদকে ঘিরে গরু এনে জড়ো করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ গরু আমদানি করা হচ্ছে এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে। কয়েকদিনের মধ্যেই আমদানির সংখ্যা ৪ গুন বাড়বে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা। একজন গরু ব্যবসায়ী জানান, প্রতি হাটে পুলিশ, বিজিবিকে গরু প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হয়। গত এক সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাঁচ শতাধিক গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কুড়িগ্রামের পরিচালক লে. কর্নেল মো. জামাল হেসেন জানান, ঈদ সামনে রেখে গরু চোরাচালান যাতে না বাড়ে এ জন্য সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি। পাচার রোধে সিজারলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই ধরনের কথা জানান, বিজিবি বুড়িমারী ক্যম্পের কমান্ডার সুবেদার ওমর ফারুক।

এ ব্যাপারে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টচার্য জানান, সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলায় কিছু ভারতীয় গরু উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এবারের ঈদকে ঘিরে ভারতীয় গরু যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য সীমান্ত এলাকায় বিজিবিকে সতর্ক করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!