• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
দুর্নীতির বিশদ চিত্র জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে দুদকের চিঠি

ওয়াসার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ০৭:১২ পিএম
ওয়াসার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি

ঢাকা : রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিনের কার্যক্রম থেকে শুরু করে চলমান ও বাস্তবায়িত সব প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাসকিম এ খানের নিয়োগ নিয়েও অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এমডির দেশে ও বিদেশে একাধিক ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে। রয়েছে একাধিক বাড়ি ও জমি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ-সংক্রান্ত একটি বিশদ নথি হাতে এসে পৌঁছেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ওয়াসার কর্মকাণ্ডে বিশদ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। সে তথ্য প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে (এলজিআরডি) পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, দুদক থেকে একটি চিঠি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আমরা সেটিসহ ঢাকা ওয়াসাকে একটি চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য-উপাত্ত দিতে বলেছি। পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতি পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। কী বিষয়ে কথা বলতে চান। এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে দুদকের চিঠির কার্যক্রম হিসেবে ওয়াসার অনিয়ম এবং এমডি হিসেবে আপনার নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে এমডি বলেন, আমি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। যদি চেয়ে থাকে তবে আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি।

‘আপনার দেশে ও বিদেশে একাধিক ব্যাংক হিসাব রয়েছে কি না প্রশ্নে এমডি বলেন, যারা চিঠি দিয়েছে তাদের সব বলা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ঢাকা ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র খুঁজতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পক্ষে ওয়াসাকে গত ৪ আগস্ট একটি চিঠি দেওয়া হয়। মূলত ওয়াসার এমডিকে দেওয়া ওই চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ তুলে ধরা হয়। চিঠি দেওয়া হয়েছে দুই অভিযুক্ত পরিচালককে। এরা হলেন পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম ও পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন।

চিঠিতে দীর্ঘদিন ওয়াসার এমডি থাকা প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও দুদক প্রশ্ন তুলেছে। সম্প্রতি ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলে বিতর্কের জন্ম দেন।

দুদক থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, যোগ্যতা ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে ঢাকা ওয়াসায় এমডি হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন তাকসিম এ খান। তাই তার নিয়োগসংক্রান্ত সব নথি দিতে হবে। তার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার চুক্তিপত্রের কপিও চেয়েছে দুদক।

দুদকের বরাত দিয়েছে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়, তাকসিম এ খানের দেশে ও বিদেশে একাধিক ব্যাংক হিসাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। তাই এ-সংক্রান্ত সব জানাতে হবে। দুদকের অনুসন্ধানে তার ঢাকায় জমি ও বাড়ি কেনার তথ্যও উঠে এসেছে।

দুদক এলজিআরডি মন্ত্রণালয়কে বলছে, ঢাকা ওয়াসায় অর্থের বিনিময়ে পদোন্নতি, অর্থের বিনিময়ে আউটসোর্সিং করে লোকবল নিয়োগ, বাণিজ্যের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন বরাদ্দ হয়।

এছাড়া ওয়াসার এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের আওতায় গৃহীত কর্মকাণ্ডে অনিয়ম হয়েছে। পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প-১ এ গুরুতর দুর্নীতির তথ্য এসেছে। এছাড়া পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পও দুদকের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ।

জানা গেছে, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রধান বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরে এলেই আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ওয়াসার দুর্নীতিবিষয়ক তথ্য নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, কমিটির সুপারিশ মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরে এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক বলেন, আপনি যেসব অভিযোগের কথা বললেন আমি এসব অভিযোগের ব্যাপারে একটি অক্ষরও অবগত নই। আমি এসব জানি না। এগুলো নিয়ে আমি কাজ করি না। এসবই প্রশাসনিক বিষয়। আমি তথ্য আদান-প্রদান করি। বিজ্ঞান দিয়ে থাকি এবং প্রয়োজনে সংবাদের প্রতিবাদ দিয়ে থাকি।

বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রাহক সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার চেষ্টা করলেও ঢাকা ওয়াসার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবায় এখনো ব্যাপক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিশেষ করে, সার্বিকভাবে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার নিম্নমানের কারণে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সেবাগ্রহীতার অসন্তুষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অধিকতর কার্যকর ও সেবাধর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে ১৩ দফা সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। সম্প্রতি এ তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।

গবেষণায় দেখা যায়, আগের তুলনায় ঢাকা ওয়াসার উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অর্জন ও উদ্যোগ রয়েছে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনা; রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি; ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিলের তথ্য জানা এবং মোবাইল ফোন ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল বিলিং সিস্টেম চালু করা; সার্বক্ষণিক অভিযোগ গ্রহণে হটলাইন স্থাপন; কমিউনিটি প্রোগ্রাম ও কনজ্যুমার রিলেশন বিভাগ গঠন; ৮০টি ওয়াটার এটিএম বুথের মাধ্যমে খুচরা পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা; ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতেও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ। তবে প্রতিষ্ঠানটির নানা কার্যক্রম পরিচালনায় এখনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতির পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি  বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি নিশ্চিতে ওয়াসা বোর্ডের কার্যকারিতায়ও ঘাটতি রয়েছে।

এছাড়া ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিতে সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আইনের কার্যকর প্রয়োগেও ঘাটতি লক্ষণীয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি উৎপাদন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে সক্ষমতার ঘাটতি বিদ্যমান। সূত্র : বাংলাদেশের খবর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!