• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কমছে না পণ্যমূল্য, নিষ্ফল সরকারি উদ্যোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৩:৩৯ পিএম
কমছে না পণ্যমূল্য, নিষ্ফল সরকারি উদ্যোগ

ঢাকা : সরকারের নানা উদ্যোগেও কমছে না পেঁয়াজ, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় গত ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে দেশের বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গত মঙ্গলবার হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়লে ৩৫ টাকার লবণ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এ ছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটের অজুহাতে পর্যাপ্ত মজুত সত্ত্বেও চালের মূল্যও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের মধ্যেও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বহীনতা এবং নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন তারা। এতে সরকারের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মনে করেন ভোক্তারা।

নিত্যপণ্যের সার্বিক মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রোববার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ভবনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক বসেন সংশ্লিষ্টরা।

এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, শিল্প ও কৃষি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রধান এবং ব্যবসায়ী নেতারা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘নিত্যপণ্যের বছরব্যাপী চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক  বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

তিনি বলেন, সংকট মোকাবেলায় জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে। এ পেঁয়াজ চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমদানি খরচ কেজিপ্রতি ৩২ টাকা পড়বে। কিন্তু খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি হবে।

এ ছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। সবমিলিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ঘাটতি মেটাতে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানীকৃত পেঁয়াজের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আসে ভারত থেকে। কিন্তু ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় আমাদের দেশের বাজারে দাম নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় বড় বড় ব্যবসায়ীকে পেঁয়াজ আমদানি করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। তারা আমাদের কথামতো মিসর-তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে এক মাস সময় লাগবে, প্রথম অবস্থায় আমরা তা বুঝতে পারিনি। তাই তাৎক্ষণিক সংকট মেটাতে উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিমানে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য অনেক বেশি পড়বে। কিন্তু ভোক্তাপর্যায়ে আমরা এ পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করব।

হুহু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কমে ২০০ টাকার নিচে আসে। এতে সরকারের ইমেজ অনেকাংশে ক্ষুণ্ন হয়। বিয়েতে উপহার হিসেবে পেঁয়াজ দেওয়ারও খবর আসে। বিমানে পেঁয়াজ আমদানির পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। অস্বাভাবিক বাড়ার পর কিছুটা কমে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৮০ এবং নিম্ন মানের ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রিও হয়।

কিন্তু গত শুক্রবারের পর থেকে আবারো বাড়তে শুরু করে পেঁয়জের দাম। শনিবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ২০-৩০ টাকা। এতে ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ২০০ এবং নিম্নমানের ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বৈঠক শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সোজা মেসেজ, কেউ পণ্য মজুত করে অহেতুক দাম বাড়ালেই তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ভোক্তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, দেশে লবণ, তেল, চিনি, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না। দেশে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। ভবিষ্যতে নিত্যপণ্যের দাম আর বাড়বে না।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে, তবে নৈতিকতার দিক খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে কোনো জিনিসের ঘাটতি নেই।

কিন্তু যদি কেউ অনৈতিকভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পেঁয়াজের কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের সব তথ্য নেওয়া হচ্ছে।

কারা পেঁয়াজ আমদানি করেছেন, তারা কোথায় বিক্রি করেছেন এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত, চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো ট্যাক্স নেই। আর আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে আমরা চাল আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছি। প্রয়োজনে এটা আবার কমিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজসহ যেসব পণ্য আমদানি হয়েছে সেগুলোর তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। কোন পণ্য কতটুকু আমদানি হয়েছে, সেটা কখন, কীভাবে বিক্রি হয়েছে সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ আমদানির বিষয় সার্বিকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে পেঁয়াজের পাশাপাশি বাজারে চালের দামও বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। কেজিতে দু-এক টাকা দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে।

তবে মোটা চালের নয়, সরু চালের দাম বেড়েছে। কারণ এখন আমাদের লোকজন সরু চাল বেশি খায়। খাদ্যপণ্য পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আগামীতে কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বছরব্যাপী চাহিদা, বাংলাদেশে পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

আগামীতে নিত্যপণ্যের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তা মোকাবেলা করা হবে, বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!