• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য

কেউ কথা রাখেননি


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক মে ৯, ২০১৯, ১০:৩৫ পিএম
কেউ কথা রাখেননি

ঢাকা : পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এই মাসটিকে কেন্দ্র করে বেশকিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। এরমধ্যে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, খেজুর ও চিনিসহ নানা পণ্য রয়েছে। আর এসব পণ্যকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। প্রায় পাল্লা দিয়ে একই সঙ্গে দাম বেড়েছে মাছ, মাংস, সবজি এবং ফলমূলের। রমজানকে কেন্দ্র করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা। এছাড়া অন্য নিত্যপণ্যগুলোতেও কেজি প্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে। এরপরও পর্যাপ্ত পণ্যের মজুদ আর বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে একাধিকবার বক্তব্য এসেছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির তরফে। তবে বাজারের বাস্তব পরিস্থিতি দেখে ক্রেতা সাধারণকে মাথায় রেখে ‘কেউ কথা রাখেননি’ চিত্রই ফুটে উঠেছে।

রমজান উপলক্ষ্যে সরকার মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না  বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় মাংস বিক্রেতাদের অনিয়মের এ চিত্র। রাজধানীর মহাখালী ও কারওয়ান বাজারে দেশি গরুর মাংস নির্ধারিত দামের বাইরেও ২৫ থেকে ৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কল্যানপুর নতুন বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০০ টাকা কেজি। রোজার শুরুতে গরুর মাংসের এই উর্ধমুখী দামে হতাশ ক্রেতারা। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে ৫২৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কল্যানপুর ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সিটি করপোরেশনের ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে কোথাও ১০০ টাকা বেশি দরে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রোজা শুরুর আগেই ক্রেতা সাধারণের মধ্যে শুরু হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিন্তা। অন্যদিকে প্রতিবছর সরকারের পক্ষ থেকেও রোজায় বেশি চাহিদা এমন পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শুরু করে নানা তোড়জোড়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ঘোষণা ছিল-পণ্যের দাম বাড়বে না রোজায়। এমনকী প্রধানমন্ত্রীরও আহ্বান ছিল রোজায় কম মুনাফা করার।

কিন্তু রোজা শুরুর আগেই বেশ কিছু পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, খেজুরসহ অন্যান্য ফলের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রোজা উপলক্ষে মাংসের দামও গতবছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেব তথ্যমতে রোজায় চাহিদা বেশি থাকে এমন প্রায় সব দ্রব্যের দাম আগের থেকে বেড়েছে। তবে এই অবস্থার মধ্যেও গত সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজারে সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। একইসঙ্গে তিনি ব্যবসায়ীদের সততার সঙ্গে ব্যবসা করার তাগিদ দিয়েছেন। আর ক্রেতাদের একসঙ্গে অনেক পণ্য না কিনে সংযমী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

রমজান মাস আসার বেশ আগে গত ২৭ মার্চ রোজা উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি, মজুত অবস্থা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানেও তিনি বলেন, ‘বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। আসন্ন রমজান মাসে কোনও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না, সরবরাহেও ঘাটতি থাকবে না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনও কারণও নাই।’

এরপর গতমাসের ১৮ তারিখ রমজানের প্রস্তুতিবিষয়ক সভায় তিনি একই কথা বলেন। রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত ১৭ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক ও অবৈধ মজুদ প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদারসহ প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, তেল ও আটা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গত ২৮ এপ্রিল বৈঠক করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একটুও বাড়বে না।’

কিন্তু গত দেড় মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, আদার দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে গরুর মাংসও। রোজায় ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলা। টিসিবির হিসাবে গত বছর এই সময়ে ঢাকায় পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকায়। এখন তার দাম বাজারে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার বাজারগুলোতে মশুর ডালের দাম মানভেদে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ১২০ টাকা। শুধু এক সপ্তাহে কেজিতে দশ টাকা দাম বেড়েছে মশুর ডালের। গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ ভাগ। রোজার আগে রসুনেরও দাম বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১২০ টাকায়। কয় মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে।

মানভেদে গত এক মাসের আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন ঢাকার বাজারগুলোতে। যা আগে বিক্রি হতো ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। ইফতারির আরেক অনুসঙ্গ চিনির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৫ টাকা বেড়ে গেছে। সাড়ে নয় ভাগ দাম বেড়েছে গত এক মাসে।

সিয়াম সাধনার মাস রোজায় খেজুর ও অন্যান্য ফল দিয়ে ইফতার করেন রোজাদাররা। যে কারণে ফলের চাহিদাও থাকে বেশি। ব্যবসায়ীরা খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের পসরা সাজিয়ে থাকেন এই সময়। তবে দামও বেশ চড়া। ক্রেতাদের অভিযোগ, শুধু খেজুর নয় অন্যান্য ফলের দামও বেড়েছে। তাদের অভিযোগ সরকারের সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বেশি নিচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!