• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেন স্বেচ্ছায় নির্বাসনে তারকারা?


এন ডি আকাশ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯, ১২:১৬ পিএম
কেন স্বেচ্ছায় নির্বাসনে তারকারা?

শবনম, সূচন্দা, শাবানা, ববিতা,অঞ্জু ঘোষ,

ঢাকা: তারা এখন কেউ সেভাবে চলচ্চিত্রে নেই। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় গিয়েছেন নির্বাসনে। চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মনে করছেন চলচ্চিত্রে কাজ নেই বলেই তারা স্বেচ্ছায় গিয়েছেন নির্বাসনে। অথচ ষাটের দশক থেকে  রুপালি পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বেশ কজন জনপ্রিয় নায়িকা। নানা খেতাবেও ভূষিত হয়েছেন এই সব খ্যাতিমান তারকারা। এখন তারা চলচ্চিত্রে নেই। কেন গেছেন, কোথায় আছেন সেসব তারকা। কেনই বা নির্বাসনে তারা।

শবনম : ষাটের দশকে এহতেশাম চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন ঝর্ণা বসাককে। তাকে শবনম নামে নায়িকা করে নির্মাণ করেন ‘চান্দা’ ছবিটি। প্রচুর দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। সেখানকার চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে ফেরেন। সর্বশেষ ওই দশকেই কাজী হায়াৎ-এর ‘আম্মাজান’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর তার কথায় মানসম্মত গল্প আর চরিত্রের অভাবে অভিনয় থেকে দূরে সরেন তিনি। গত বছর পাকিস্তানের একটি টিভি মেগা ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। এখন বাসায় ধর্মকর্ম আর সংসারের কাজকর্ম নিয়েই কাটছে শবনমের অবসর সময়।

রোজিনা : ১৯৭৬ সালে কালিদাসের ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন রোজিনা। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। ২০০০ সালের শুরুতে মতিন রহমানের ‘রাক্ষুসী’ ছিল তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি। পারিবারিক কারণে দাপুটে এ অভিনেত্রী মিডিয়ার অন্তরালে চলে যান। বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে আছেন। আমেরিকায় প্রবাস জীবন শুরু করলেও বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। ২০১৯-২০২০ মেয়াদে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটির জুরি বোর্ডের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন রোজিনা।

সুচন্দা : ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দা আশির দশকে এসে হঠাৎ করেই বড় পর্দা থেকে বিদায় নেন। যদিও ২০০৫ সালে নির্মাণ করেন জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘হাজার বছর ধরে’। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেত্রী, প্রযোজক ও পরিচালক। চলচ্চিত্রের সার্বিক অবস্থা মন্দ হওয়ায় স্বেচ্ছায় এই জগৎ থেকে দূরে রয়েছেন।

শাবানা : ষাটের দশকে প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমানের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন রত্না।  ১৯৬৭ সালে এহতেশামের ‘চকোরী’ ছবিতে শাবানা নামে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়, ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আজিজুর রহমানের ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিটিতে ছিল তার শেষ অভিনয়। এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান এবং আমেরিকা প্রবাসী হন। বলে জানান তিনি। বর্তমানে ছেলে-মেয়ে আর নাতিদের নিয়ে সময় কাটছে দর্শকনন্দিত এই অভিনেত্রীর।
 
ববিতা : ষাটের দশকে জহির রায়হানের হাত ধরে ‘সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন ববিতা।  সর্বশেষ ২০১৪ সালে নার্গিস আক্তারের ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ছবিতে শেষ অভিনয় করেন তিনি। এরপর গল্পের মানহীনতার অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান তিনি। এখন সমাজকল্যাণমূলক কাজ নিয়েই দেশ-বিদেশে ব্যস্ত রয়েছেন। ববিতার একমাত্র পুত্র কানাডার ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। ববিতা বছরের বেশির ভাগ সময় কানাডায় তার পুত্র ও প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন। দেশে থাকলে গুলশানের বাড়িতে ছাদে বাগান পরিচর্যা নিয়েই সময় কাটে তার। মাঝে-মধ্যে দেশে আসেন তিনি। মূলত ধর্মকর্ম ও সংসার নিয়েই কাটছে বিউটিকুইনখ্যাত শাবানার অবসরের দিনকাল।


কবরী : ষাটের দশকে প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে চট্টগ্রামের মেয়ে মিনা পাল আসেন চলচ্চিত্র জগতে। অভিনয় করেন এই নির্মাতার ‘সুতরাং’ ছবিতে। এই ছবিতেই তার ফিল্মি নাম রাখা হয় কবরী। এরপর একটানা ২০০০ সালের প্রথম পর্যন্ত জনপ্রিয়তা নিয়ে অভিনয় করেন। ‘আয়না’ শিরোনামের একটি ছবিও পরিচালনা করেন। এরপর রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং এমপিও নির্বাচিত হন। বর্তমানে সংসার ও সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়েই সময় কাটছে এই অভিনেত্রীর।

অঞ্জু ঘোষ : ‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত প্রতিভাবান অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরীর হাত ধরে ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্রে আসেন অঞ্জু। ‘সওদাগর’ দিয়ে তার অভিষেক। এরপর অভিনয় করেন ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘পদ্মাবতী’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আশীর্বাদ’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘আশা নিরাশা’, ‘পদ্মগোখরা’র মতো সফল চলচ্চিত্রে। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিটি তার অভিনয় জীবনের সেরা ছবি। আশির দশকের শেষ ভাগে কলকাতা পাড়ি জমান তিনি। এরপর টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন। একই সঙ্গে যাত্রাপালাও করেন। প্রায় ২৭ বছর পর দেশে ফিরে আবার কলকাতায় চলে যান। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সাঈদুর রহমান সাঈদের ‘মধুদা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ঢাকায় আসেন এবং এক সপ্তাহ থেকে কলকাতা চলে যান। চলতি সপ্তাহে এই ছবির শুটিংয়ে অংশ নিতে আবারও ঢাকায় আসবেন তিনি।


সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!