• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক ও ৫ শূন্য আসনে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৪, ২০২০, ০৩:২৪ পিএম
চসিক ও ৫ শূন্য আসনে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

ঢাকা : শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে নির্ধারিত দিনে ভোটের আয়োজন হওয়া নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।

দেশে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, এর প্রভাব কীভাবে পড়ে ভোটের তারিখে এবং ভোটের দিন স্থগিত কিংবা পেছানো হয় কি-না, সেসব নিয়ে চিন্তিত রাজনৈতিক দলগুলো।

নির্ধারিত দিনে ভোটের আয়োজন হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা। নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভোটারদের মাঝেও চলতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে ভোট হওয়া নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।

ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে আগামী ২১ মার্চ এবং বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে এবং চসিক নির্বাচনে ২৯ মার্চ ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সূত্র জানায়, সংসদীয় আসনগুলোর উপনির্বাচন ও চসিক নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাইরাসটি সংক্রমণের আতঙ্কের মাঝেও এসব নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সংসদ সদস্য, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও করোনা আতঙ্কে ভুগছেন দলের অনেক নেতাকর্মী ও অনুসারী। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনি প্রচারণা বা সভাগুলোতে।

তবে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে দলের পক্ষ থেকে ইসিকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হবে। দলের ভেতরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আছে ও শীর্ষ নেতারা পরিস্থিতির গভীর পর্যবেক্ষণ করছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় সবার আগে মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা ও তাদের জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে দলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, দেশে মাত্র তিনজন আক্রান্ত হলেও করোনার প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে রাজনীতিসহ প্রায় সবক্ষেত্রে। একের পর এক সঙ্কুচিত ও বাতিল করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি বিভিন্ন আয়োজন।

ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকানোর আগাম সতর্কতা হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ৩০ মার্চ গুরুত্বপূর্ণ জাপান সফরসহ মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্যের বিদেশি সম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।

গত ৮ মার্চ দেশে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর আর কেউ আক্রান্ত না হওয়ায় পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত স্বস্তিকর। তবে একের পর এক বিভিন্ন দেশে নতুন করে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া থেমে নেই। দেশের ভেতর অনেককে নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় (হোম কোয়ারেন্টাইন) রাখা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণকে গত বুধবার বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। রোগটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও বলা হচ্ছে ‘উচ্চ ঝুঁকির দেশ’। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে স্বভাবতই কিছু আতঙ্ক ও উদ্বেগ আছে। তাই চসিক ও পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্দিষ্ট সময়ে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জানান, ‘নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনার মধ্যে চলতি মাসে পাঁচটি সংসদীয় আসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট সামনে রেখে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ইসি। নতুন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তখন কমিশন এ বিষয়ে আলোচনা করবে। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দলীয় সূত্র বলছে, করোনা আতঙ্কের মধ্যেও নির্বাচনি প্রচারণা থেমে নেই। প্রচারণায় জনসমাগম ও ভিড় এড়িয়ে চলছেন প্রার্থীসহ নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের দলবল নিয়ে প্রার্থীরা

ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার বদলে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো, অনলাইন ও টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা এ মুহূর্তে বেশি করছেন। সব দলের নেতাকর্মীরা ভিড় এড়িয়ে চলছেন।

তবে চসিক নির্বাচনে মেয়র পদের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আশা করছেন, করোনার প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না। এর প্রভাবে নির্বাচন পেছানোর আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম।

ইসি সূত্র জানায়, পাঁচটি সংসদীয় আসন ও চসিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি যেভাবে চলছিল, সেভাবেই চলছে। এখনো নির্বাচন পেছানোর বা স্থগিত করার বিষয়ে কোনো আলোচনা ইসিতে হয়নি। সার্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে ইসি। করোনা নিয়ে ইসির অনেকের মাঝেও আতঙ্ক আছে। কারণ নির্বাচনে ব্যাপক জনসমাগম হয়। ইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভোটের সঙ্গে জড়িত থাকেন। করোনা ছোঁয়াচে রোগ। সে ক্ষেত্রে সবার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই নির্বাচনের বিষয়ে ইসির ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করেন অনেক কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, গত ২৭ ডিসেম্বর ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৩; ৯ জানুয়ারি মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে বাগেরহাট-৪; ১৮ জানুয়ারি আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ এবং ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসন শূন্য ঘোষিত হয়। তারা সবাই সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!