• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠিকাদারি দ্বন্দ্বেই খুন হন আ.লীগ নেতা টুকু


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৬, ২০১৬, ১০:৩৮ এএম
ঠিকাদারি দ্বন্দ্বেই খুন হন আ.লীগ নেতা টুকু

রাজশাহী প্রতিনিধি

জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক জিয়াউল হক টুকুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি ঠিকাদারি কাজের অর্থের ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে সুপরিকল্পিতভাবে টুকুকে হত্যা করা হয় বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

খুনের ঘটনার পর আটক দুই ব্যক্তিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, টুকুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। টুকুকে হত্যার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ভাড়াটে খুনি নয়নকে। ঢাকার কিলিং গ্রুপের সদস্য নয়ন অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় টুকুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর কৌশলে পালিয়ে যাওয়া নয়ন নামের দুর্ধর্ষ ওই সন্ত্রাসী ফোনে রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আরো দুজন পলাতক রয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ টুকুর স্থানীয় দুই বন্ধু রবিউল ইসলাম ও জসিম উদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

আটক দুই আসামির বরাত দিয়ে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মো. সামসুদ্দিন বলেন, রবিউল ও জসিম আগে থেকেই টুকুর চেম্বারে বসে ছিলেন। পরে একই মাইক্রোবাসে তার চেম্বারে আসেন নয়ন, তরিক এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। মাইক্রোবাস থেকে নয়ন ও তরিক নেমে টুকুর চেম্বারে গেলেও অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেননি।

তবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই মাইক্রোবাসে টুকুকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে তিনজন পালিয়ে যান। তারাই প্রচার করেন, টুকু তার নিজের রিভলবার পরিষ্কার করার সময় অসাবধানতাবশত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

তিনি বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। টুকু টেবিলের ওপর তার লাইসেন্স করা রিভলবার রেখে রুটি-মাংস খাচ্ছিলেন। আর নয়ন তার সামনে বসে ছিলেন। খাওয়া শেষে চেয়ার থেকে উঠে ঘোরার পরপরই পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নয়নকে আটকের পর সেখানে কী হয়েছে, তা জানা যাবে বলেও জানান পুলিশ কমিশনার।

এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি কাজ পায় আওয়ামী লীগ নেতা টুকুর মেসার্স প্রমিনেন্ট কনস্ট্রাকশন। এ কাজে তার সঙ্গে পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয় ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি নিয়ে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টুকুর কয়েক কোটি টাকার দেনা-পাওনা ছিল। এ নিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল টুকুর।

টুকু ১০ দিন আগে ঢাকায় গিয়ে তার পাওনা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর দুদিন আগে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে নয়নকে রাজশাহীতে বিশেষ কিলিং মিশনে পাঠানো হয়। দুদিন থেকে নয়ন রাজশাহীতেই অবস্থান করছিলেন। আর এ নয়ন হলেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিলিং গ্রুপের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। মূলত টুকুর হত্যা মিশন সুপরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করার জন্যই তাকে রাজশাহী পাঠানো হয়। তার ভাই সিজান কিছুদিন আগে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ঢাকায় নিহত হন।

এদিকে জিয়াউল হক টুকুকে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এনামুল হক। তিনি জানান, টুকুকে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। পিঠের দিকে যে ফুটো আছে, তা তুলনামূলক ছোট। এ ছাড়া বুকের হাড়ের ভেতরের অংশে গুলির জখম পাওয়া গেছে। এ থেকে বিষয়টি বোঝা যায় যে, টুকুকে পিঠের সাইড থেকে গুলি করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলিতে টুকুর ফুসফুসের নিচের অংশ জখম হয়।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!