• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকসু নির্বাচন বিতর্কমুক্ত রাখতে চায় আ.লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০২:৫০ পিএম
ডাকসু নির্বাচন বিতর্কমুক্ত রাখতে চায় আ.লীগ

ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আসন্ন নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিতর্কে না জড়াতে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সহযোগী ছাত্রদলসহ সব দলের সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তফসিল ঘোষণার আগেই বলা হয়েছে। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে নানা কারণে বন্ধ থাকা এ নির্বাচনে সব দলের ছাত্রসংগঠনের অংশ নেওয়ার মধ্য বিতর্কমুক্ত রেখে একে গ্রহণযোগ্য করে দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ।

সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের অল্প সময়ের মধ্যেই উপজেলা পরিষদ ও ডাকসু নির্বাচন করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট কয়েকটি বাম ও ইসলামি দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে নানা দাবি-দাওয়া থাকলেও দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ও প্রায় সব দলের ছাত্রসংগঠনের এতে অংশ নেওয়ার বিষয়গুলোকে আওয়ামী লীগ দল ও সরকারের জন্য ইতিবাচক মনে করছে। দেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে খ্যাত এ নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুসংহত ও নেতৃত্ব তৈরির জন্য অপরিহার্য বিবেচনায় ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেকে মনে করেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, স্বৈরশাসক আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখা ছাত্রলীগ এবারের ডাকসু নির্বাচনেও জয়ী হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষা খাতসহ সার্বিক উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের নানা দাবি পূরণ হওয়ার মূল্যায়নে ছাত্রলীগ নির্বাচনে জয়ী হবে বলে তাদের ধারণা।

অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত আবাসিক শিক্ষক, সহকারী আবাসিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহাবস্থান নেই বলেও দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্রলীগের ‘একক আধিপত্য’ বলেও অভিযোগ। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আরো জোরেশোরে তোলার চেষ্টা করে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো। তবে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে এখন এক ধরনের সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা মনে করেন।

ডাকসু নির্বাচনে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগের প্যানেল ঘোষণার এক দিন পর সংগঠনটির একাংশের নেতারা আলাদা প্যানেল ঘোষণা করেন। নতুন এই প্যানেলের নাম দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিষদ’। আলাদা প্যানেল দেয় ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ একটি অংশ। আলাদা প্যানেল ঘোষণা করলেও এ নিয়ে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ক্যাম্পাসে না ঘটে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেদিকে সতর্ক। পদবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্যানেল দিলেও আলোচনা করে সমাধানের আশা ছাত্রলীগের।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন- ‘ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ বিজয়ী হবে।’ তিনি বলেন, ‘এবারের মার্চে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের মধ্যে যে ঐক্য স্থাপিত হয়েছে, আমি বিশ্বাস করি ১৯৬৭-৬৮ সালের মতো ছাত্রলীগ বিজয়ী হয়ে ডাকসুকে নেতৃত্ব দেবে।’

সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘বিলম্বে হলেও দীর্ঘদিন পর আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন করে যাত্রা শুরু হবে। তাই আমি মনে করি, ডাকসুর  ভিপি হবে এমন একজন, যিনি সবার জন্য কাজ করবেন, নির্দিষ্ট কোনো দলের হয়ে নয়।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ২৮ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়নি। এত বছর পর সেই নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনে করে, দ্বিতীয় সংসত হিসেবে খ্যাত ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে ও নেতৃত্ব তৈরির জন্য অপরিহার্য। একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে সুন্দর সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সব ছাত্র সংগঠন।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!