• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁক শিরক নয়


মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮, ০৪:৪১ পিএম
তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁক শিরক নয়

ঢাকা : তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে আমরা অতিমাত্রায় প্রান্তিকতার শিকার। কেউ তো তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁককে সরাসরি শিরক বলে দিচ্ছে। আবার কেউ তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁকের ওপর অতিমাত্রায় বিশ্বাস ও ভক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁককে রোগের প্রতিষেধক মনে করছে। এক্ষেত্রে আমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করব।

মূলত তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁক এমন বিষয় যা সরাসরি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। জাহিলি যুগে বিভিন্ন শিরক মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করার প্রচলন ছিল। রসুল (সা.) উক্ত শিরক প্রথার পরিবর্তে পবিত্র কোরআন দিয়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন। সাহাবায়ে কেরামকেও শিক্ষা দিয়েছেন।

যেমন তিনি বলেন, ‘কেউ অসুস্থ হলে সে যেন এ দোয়াটি পড়ে ঝাড়ফুঁক করে। দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আজহিবিল বা’সা, ওিফ আনতাশ্ শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফাউকা, শিফাআন্ লা ইউগাদিরু ছাকামাক।’ (আবু দাউদ শরিফ : চিকিৎসা অধ্যায়)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-এর অভ্যাস ছিল, তিনি রাতে শোয়ার আগে সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। কোনো বর্ণনামতে, সুরা কাফিরুনও পড়তেন। এরপর হাতে ফুঁ দিয়ে সর্বাঙ্গে মুছে দিতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন তখন এতই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি নিজের পবিত্র হাত পর্যন্ত উঠাতে পারছিলেন না। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাতের বেলা আমার মনে পড়ল, এ সময় রসুল (সা.) মুআওয়াজাতাইন পড়ে নিজের হাতে ফুঁ দিয়ে সারা শরীর বোলাতেন।

তাই আমি নিজেই মুআওয়াজাতাইন পড়ে রসুল (সা.)-এর হাতে ফুঁ দিয়ে তার পবিত্র হাত সর্বাঙ্গে বুলিয়ে দিলাম। কারণ আমার হাত তার পবিত্র হাতের বিকল্প হতে পারে না। তাই এমনটি করলাম। এসব হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ঝাড়ফুঁক করা রসুল (সা.)-এর সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও ঝাড়ফুঁকের প্রমাণ পাওয়া যায়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু সাহাবিকে এ দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আউজুবি কালিমাতিত তাম্মাতি মিন শারির মা খালাকা, ওয়াল্লাহু খাইরুন হাফিজান ও হুয়া আরহামুর রাহিমিন।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দোয়াটি পড়ে ফুঁ দিলে কোনো জাদু প্রভাব ফেলবে না।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘আমি আমার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে তারা তা পড়ে ফুঁ দিতে পারে এবং এর উসিলায় আল্লাহর হেফাজতে থাকতে পারে। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান, যারা নিজেরা পড়তে পারত না, তাদের জন্য দোয়াটি লিখে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম।’

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে বলা হয়েছে যে, কোরআন মানবজাতির জন্য শিফাস্বরূপ। সুতরাং কোরআনে বর্ণিত দোয়াগুলো দ্বারা তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁক করা নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ওলামায়ে কেরামের বিশিষ্ট একটি দল এ মত পোষণ করেছেন। তাছাড়া আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ওলামায়ে কেরামের যুগ পরম্পরা আমলও শরিয়তের একটি দলিল। যাকে আমরা ‘ইজমায়ে উম্মত’ বলি।

লেখক : মুফতি ও গবেষক

Wordbridge School
Link copied!