• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা, বন্যা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ

ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে সরকার


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২১, ২০২০, ০৩:৫৮ পিএম
ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে সরকার

ঢাকা : ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করছে সরকার। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ, ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা ও কোরবানির পশুর হাট নির্বিঘ্ন করা।

প্রথমত, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে মানুষের জীবন-জীবিকা আগের মতো স্বাভাবিক করে তোলা।

দ্বিতীয়ত, দেশের অন্তত ২০টি জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের মানুষকে কর্মমুখী করে জীবনের চাকা ঘোরানোর ব্যবস্থা করা।

তৃতীয়ত, পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট নির্বিঘ্ন করে কেনাবেচার সুব্যবস্থা করা, যাতে ব্যবসায়ীরা পশু বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পারেন। অন্যথায় খামারি ও ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হতে পারে। অবশ্য এই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ার পরই নড়েচড়ে বসে সরকার।

এরপর ১৮ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে এ দেশের প্রথম রোগী মৃত্যুবরণ করার পরই সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু সরকারের সবক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার কারণে সাধারণ ছুটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য খাতের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্রও জনগণের সামনে চলে আসে।

শেষমেশ সাধারণ মানুষের দু’বেলা দুমুঠো খাবার নিশ্চিত করতে ও জীবন- জীবিকা স্বাভাবিকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই গত ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক হতে চললেও ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।

উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মাথায় নিয়ে মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস কার্যক্রম ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখনো প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন আর আক্রান্তের সংখ্যাও দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণের মধ্যে আবার অন্তত ২০টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে সরকারকে। ঢাকাসহ মানিকগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানি প্লাবিত হয়ে শত শত গ্রাম ডুবে গেছে।

এর আগে ঘূর্ণিঝড় আমফানের ভয়াবহ আঘাতে খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার কয়েকটি এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে ডুবে আছে।

বন্যা ও আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষকে ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব পরিবারকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়ে জীবনের চাকা গতিশীল করা সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এ দিকে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির মাত্রা আরো ব্যাপক হারে ছড়িয়ে ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। পশুর হাটের কেনাবেচাও নির্বিঘ্ন করতে হচ্ছে পশুব্যবসায়ীদের স্বার্থে।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের খামারি শিল্প ও পশুব্যবসায়ীরা বড় ধরনের মুনাফা অর্জন করে থাকেন। কিন্তু ঈদের আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকলেও এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির হাট। বিক্রেতারা চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকলেও ক্রেতাশূন্য রয়ে গেছে।

অনলাইনে গরু কেনাবেচার সুযোগ থাকলেও সেখানে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ক্রেতাদের। কারণ অনলাইনে কেনাবেচার ওপর এখনো আস্থাশীল হয়ে উঠতে পারেননি এদেশের মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে খামারি ও পশুব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেছেন, এক দিকে করোনা সংক্রমণ অপর দিকে বন্যা, তার পাশাপাশি কোরবানির পশুর হাট- এই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকার জনমানুষের জন্য কাজ করছে। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি মানুষের সুরক্ষায় সরকার গ্রহণ করছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রতিদিন অসহায় কর্মহীন মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফেরার ছবি আসছে পত্রিকার পাতায়।

তিনি বলেন, জাতীয় জীবনে এমন চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমাদের প্রয়োজন পারস্পরিক শেয়ারিং এবং কেয়ারিং। জাতি হিসেবে আরো কঠিন সময় আমরা পার করেছি পারস্পরিক মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে। আমাদের মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে। আমাদের নেতৃত্বে আছেন মানবিক নেত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রতি আস্থা রাখুন। অমানিশার এ সময় কেটে যাবে। সবকিছু অচিরেই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!