• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দায় সামলাতে হিমশিম ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০১:১০ পিএম
দায় সামলাতে হিমশিম ব্যাংক

ঢাকা : আমদানি ব্যয় সামাল দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। গ্রাহকের হয়ে আমদানির ঋণপত্র-এলসি খুললেও নানা সঙ্কট থেকে দায় পরিশোধ করতে পারছে না। অথচ বৈদেশিক লেনদেন বিধিমালা মোতাবেক ১২০ দিনের মধ্যে আমদানির দায় পরিশোধ করার কথা।

সূত্রগুলো বলছে, অনেক ব্যাংক সেটি করছে না। এমন অভিযোগ আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলো থেকে। ফলে দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দিয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে।

রোববারের (১৩ জানুয়ারি) মধ্যে ব্যাংকগুলোকে মোট দায়ের তথ্য উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেছেন, আমাদের কাছে দায় পরিশোধ করার মতো বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ থাকলে পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না। অনেক ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। অপরদিকে অনেকের কাছে দায় পরিশোধ করার মতো ডলার নেই। ফলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করছে। কিন্তু তাতে খুব বেশি উন্নতি হবে না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলোতে ডলার জোগান দিয়ে থাকে। এই জোগান বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরাসরি দিতে হবে। কারণ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি বেশি নাজুক। অনেক বড় ব্যাংকও গ্রাহকের ঋণপত্রের দায় পরিশোধ করতে পারছে না।

সূত্রগুলো বলছে, ঋণপত্রের দায় পরিশোধ না করাতে দেশের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বড় গ্রুপ অস্বস্তিতে রয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে তাগাদা দিতে শুরু করেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বার বার তাদের আশ্বস্ত করে বিদায় করছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এ ব্যাপারে শনিবার (১২ জানুয়ারি) জানান, আমরা সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। তাদের মোট আমদানি দায়ের তথ্য আজকের মধ্যে নির্ধারিত ফরম্যাটে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। সেটি পেলে পর্যালোচনা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে।    

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ব্যাংকগুলোর এমন দায়ের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকার ওপর। এর মধ্যে সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পণ্য কেনার ঋণপত্র রয়েছে। বৈদেশি লেনদেন বিধিমালা মোতাবেক আমদানির ১২০ দিনের মধ্যে রফতানিকারককে তার পাওনা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু সেটি অনেক ব্যাংক করছে না। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ছে। তাই তাদের বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে। কোনো ধরনের গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ রয়েছে, আমদানির আড়ালে বিদেশে অর্থপাচার করছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাংলাদেশে যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে তা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি অর্থনীতির জন্য বিস্ময়কর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন চিঠিতে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করা হয়।  

বড় আকারের আমদানির কারণে স্থিতিশীল হচ্ছে না বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯টি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার মূল্যের আমদানি হয়। এর মধ্যে শুধু মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৪৫৬ ডলার। অর্থাৎ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমদানির ২৫ শতাংশ। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি, যেখানে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরেও একই প্রবণতা অব্যাহত আছে। গত জুলাই-নভেম্বরে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। অথচ মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানির যে চিত্র আমরা পাই সেটি অস্বাভাবিক। কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময় বিষয়টি আলাপ করলেও কোনো পক্ষই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে এখন দায় পরিশোধ করতে পারা যাচ্ছে না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইদানীং আমাদের সামগ্রিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ঘাটতি বেড়েছে। একই সঙ্গে চলতি হিসাবেও বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বেড়েছে। রফতানি, প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক সাহায্য বাড়লেও ঘাটতি কমছে না। এর বড় কারণ অনিয়ন্ত্রিত আমদানি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বিভিন্নভাবে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। নির্বাচনের বছরে পাচার আরো বেড়ে গেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!