• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অধিকাংশ মানুষ

ধর্ষণের কালো থাবা সর্বত্র


এসএম সাব্বির খান অক্টোবর ১০, ২০২০, ০১:২৯ পিএম
ধর্ষণের কালো থাবা সর্বত্র

ঢাকা : আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আশঙ্কা ক্রমাগত গ্রাস করে নিচ্ছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। চরম সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা আর মানসিক সঙ্কটে ভুগছে দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে যাদের শিশু বা যুবতী মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে ওই সব পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন।

শুধু তাই নয়, নিরাপত্তাহীনতার কালো গ্রাসের আতঙ্কে ভুগছে গোটা নারী সমাজই। একের পর এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় অনেকেই ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে রাস্তাঘাটে কোথাও নেই কোনো নিরাপত্তা। এমনই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত এমন একের পর ঘটনা, বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজের সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর প্রতিদিনই যেভাবে সামনে আসছে একাধিক ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা; তাতে এই নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা সত্য বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সর্বশেষ পরিস্থিতির দিক তাকালে দেখা যাবে একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

বৃহস্পতিবার  দাগনভূঞার সালাম নগর গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে শেখ ফরিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ফরিদ ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের কেয়ারটেকার।

সূত্র জানা গেছে, নির্যাতিত ওই নারীর স্বামী বিদেশে থাকায় প্রায়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার কলহ ও বিরোধ হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি ফরিদকে অনুরোধ করেন। বিরোধ মেটানোর আশ্বাস দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালে ভিকটিমকে সালাম নগর জাদুঘরে আসতে বলেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা। ওই নারীর বয়ান শোনার ফাঁকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান তিনি। ওই সময় নিজেকে রক্ষা করে বাইরে বের হয়ে স্থানীয়দের বিষয়টি জানান ভিকটিম।

বিশিষ্ট মহলের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এ ধরনের কর্মকান্ডে সম্পৃক্তরা যেমন সরকারকে বিতর্কিত করছে তেমনি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপট তৈরি করে অনিশ্চিত সংঘাতের দিকেও ঠেলে দিচ্ছে গোটা দেশকেই।

দাগনভূঞার সালাম নগর গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে শেখ ফরিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ফরিদ ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের কেয়ারটেকার।

সূত্র জানা গেছে, নির্যাতিত ওই নারীর স্বামী বিদেশে থাকায় প্রায়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার কলহ ও বিরোধ হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি ফরিদকে অনুরোধ করেন।

বিরোধ মেটানোর আশ্বাস দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালে ভিকটিমকে সালাম নগর জাদুঘরে আসতে বলেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা। ওই নারীর বয়ান শোনার ফাঁকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান তিনি।

এদিকে, ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকায় তিন শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বাড়ির মালিককে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক জয়ন্ত কুমার সাহা। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম হেলাল উদ্দিন শেখ (৫৭)। তিনি আশুলিয়ার তৈয়বপুরে নিজ বাড়িতে বাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ফয়েজউদ্দিন।

তিনি আশুলিয়ায় বাড়ি করে বসবাস করছেন। অপরদিকে সিলেটের বালাগঞ্জে এক কিশোরীকে (১৫) তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কিশোরীর মামা বাদী হয়ে ৫ অক্টোবর বালাগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

মামলায় উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের নশিওরপুর গ্রামের লকুছ মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (২৫) ও একই গ্রামের ফজর আলীর ছেলে রাজন মিয়াকে (১৯) অভিযুক্ত করা হয়ছে।

এছাড়া অপর এক খবরে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বাসায় ফেরার পথে গৃহবধূকে (২২) রিকশা থেকে নামিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধূকে উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও থানার মৌলভীপুকুরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এমন একের পর এক বেপরোয়া ঘটনা উদ্বেগ প্রকাশ করে অনেকেই বলছেন, পাড়া বা মহল্লার অলি গলিতে বখাটে ছেলেদের উৎপাত বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়।

এছাড়া মহল্লায় হাই স্পিডে চালানো বাইকারদের অনেকেই বখাটের খাতায় নাম লিখিয়েছে। মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে শিস দিয়ে উত্ত্যক্ত করে। কখনো কখনো প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না মিললে টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। বিধবা মহিলারা একা বাড়িতে থাকলে বখাটে যুবকরা কুপ্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। তাদের ওই প্রস্তাবে রাজি না হলে গণধর্ষণ করে ফেলে রেখে যাচ্ছে, নয়তো হত্যা করছে।

এসব ঘটনার নেপথ্য নায়করা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় অধিকাংশ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। দু’-একটা ঘটনা ভাইরাল হলেই কেবল অপরাধীরা আইনের আওতায় আসছে। কিছুদিন জেলহাজতে কাটিয়ে আবার বের হয়ে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

সচেতন মহলের অভিযোগ, ঘর থেকে নারীরা বের হলেই ধর্ষণ, হয়রানি ও লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা তাড়া করছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে শিশুদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে মিলছে লাশ। বখাটেদের অপরাধের প্রতিবাদ করলেও ঘটছে নানা বিপত্তি। নিরপরাধ মানুষ হচ্ছে খুন, হয়রানি ও মামলা হামলার শিকার। আইনের জালে পড়ার ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদও করে না। মুখ বুজে সহ্য করায় এতে পার পেয়ে যাচ্ছে বখাটেরা।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতন চালায় এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা।

গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই নারীর নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় দেশ এখন উত্তাল হয়ে উঠেছে।

গত সোমবার রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক বিধবাকে দলবেঁধে গণধর্ষণ করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে ঘরের পেছনে ফেলে পালিয়ে যায় এলাকার বখাটেরা। পরে ওই নারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় হাসপাতাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে দশম শ্রেণীর ছাত্রী নিলা রায়কে গত ২১ সেপ্টেম্বর চাকু মেরে হত্যা করে সাভারের বখাটে যুবক মিজান।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের বখাটেরা। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত রোববার জয়পুরহাট পৌর এলাকার হাজীপাড়া মহল্লার ১২ বছরের এক শিশুকে আখক্ষেতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে এলাকার বখাটে ফারুক।

গত মঙ্গলবার মাগুরার শ্রীপুরে ভাতিজিকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটে শিহাব ও তার লোকজন চাচা মশিউর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে। শুধু সিলেটের এমসি কলেজ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, মাগুরার শ্রীপুর, জয়পুরহাট কিংবা লক্ষ্মীপুরের রামগতি নয়, সারা দেশে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলেই কেবল নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অধিকাংশ ঘটনাই প্রভাবশালীদের নানা হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করতে সাহস পায় না।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৮৯ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৯২ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে এবং ধর্ষণের পর লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন।

এ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৯২ জনকে। গত মাসেও প্রায় একশতটি ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর গত ৮ দিনে অর্ধশতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এটা শুধুমাত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি করা সমীক্ষা। ধারণা করা হচ্ছে, গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি এমন সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, দেশে অবাধ যৌন স্বাধীনতার একটা চর্চা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষের ভেতরে কোনো নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠেনি। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার মানসিকতা এখনো তৈরি হয়নি। নাস্তিক্য মতবাদ ও পশ্চিমা সংস্কৃতি গ্রাস করছে। তা ছাড়া দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তো আছেই। আবার আইনের ফাঁক গলিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এসব কারণেই ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আগে ধর্ষণকে একটি সামাজিক অপরাধ হিসেবে দেখা হতো। যার কারণে সমাজের কেউ এ ধরণের অপরাধ করলে এলাকার মাতব্বর, মেম্বার-চেয়ারম্যান ও আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিচার করা হতো। এখন সেই বিচার আর হয় না। আলেম-ওলামাদের ফতোয়া দেয়াতো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবক্ষয় হয়েছে।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব মো: গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, প্রথমত, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এই ব্যর্থতার কারণে তারা মনে করছেন, অপরাধকরলেতো সাজা হবে না। ক্রমান্বয়ে তারা অপরাধ বেশি করছে। দেশে আইনের শাসন নেই। এ জন্য সমাজের মানুষ নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হয়েছে, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ষিক্ষার বড় অভাব রয়েছে। আধুনিকতার নামে আমরা ধর্মীয় ষিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছি, তথাকথিত নাস্তিক্যবাদ আমাদের কাঁধে ভর করছে।

দেশীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার বর্তমান পর্যায় থেকে বর্তমানে শিশুরা যৌনতার উপস্থাপন দেখেও  অযাচিত শিক্ষা নিচ্ছে। এতে তাদের মানসিকতার ওপর প্রভাব পড়ছে বলেও মনে করেন তিনি। এইসব থেকে মুক্ত হতে হলে দেশের সব পেশাশ্রেণীর মানুষকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্রকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যথায় অচিরেই আমরা একটি অসভ্য সমাজে পরিণত হবো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!