• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যায় মাদ্রাসা কমিটির সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৬, ২০১৯, ১০:২৩ এএম
নুসরাত হত্যায় মাদ্রাসা কমিটির সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই

ঢাকা : নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর এডিসি এনামুল করিমের দায়িত্বে অবহেলার কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। মামলার তদন্তে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট)  এ তথ্য জানিয়েছে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

তিনি জানান, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসা কমিটির সভাপতি এনামুল করিমের দায়িত্বে কোনো অবহেলা পায়নি পিবিআই এর তদন্ত কমিটি। হাইকোর্টে এমন প্রতিবেদন দাখিল করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত)। তবে তার নাম জানাতে পারেননি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ন্যায়বিচার পেতে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি)  এনামুল করিমের কাছে গিয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি ও তার মা শিরিন আক্তার। কিন্তু ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সে সময় নুসরাতের বিরুদ্ধে ‘নাটক’ সাজানোর অভিযোগ করেন তিনি।

এ ছাড়া নুসরাতের মৃত্যুর আগে তার মা শিরিন আক্তারকে হুমকি দিয়ে এডিসি বলেছিলেন, ‘আপনারা প্রিন্সিপাল সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, তা প্রমাণ করতে না পারলে আপনাদের বিরুদ্ধে প্রিন্সিপালের লোকজন ৫০ লাখ টাকার মানহানি মামলা করবে।’

জেলার সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এমন কথায় মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন নুসরাত। শিরিন আক্তার আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষের কক্ষে আমার সামনে নুসরাত অজ্ঞান হয়ে গেলে তার মুখে পানি ছুড়ে মেরেছিলেন সোনাগাজী থানার এসআই ইকবাল।’

অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার লোকজনের দেওয়া আগুনে পুড়ে নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর গত ১৮ এপ্রিল তার মা পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

জবানবন্দিতে শিরিন আক্তার বলেন, ‘৪ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে আমি, আমার মেয়ে রাফি, ছেলে নোমান, মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিসহ ফেনী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পিকে এনামুল করিমের অফিসে গিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগটি জানাতে চাই। তখন এডিএম বলেন, এখন কেন এসেছেন? আপনারা তো মামলা করে ফেলেছেন। মামলার করার আগে আসতেন, তা হলে দেখতাম কী করা যায়। এখন মামলায় যা হবে তা-ই হবে।

তখন রাফি এডিসিকে বলেন, আপনি আমার বাবার মতো। আপনি আমার কথাগুলো শোনেন। রাফি মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে তার অভিযোগটি জানানোর চেষ্টা করেন এডিসিকে। তখন এডিসি বলেন, প্রিন্সিপাল তো খারাপ, তা সবাই জানে। তুমি তার কাছে গেছ কেন? উত্তরে রাফি বলেন, আমি তো ইচ্ছা করে যাইনি। পিয়নকে দিয়ে প্রিন্সিপাল আমাকে ডেকে নিয়ে গেছেন। তখন এডিসি বলেন, গেছই যখন, তখন হজম করতে পারলে না কেন? তোমার বাবাকে মাদ্রাসায় বসানোর জন্য এ রকম নাটক সাজিয়েছ?’

এদিকে জবানবন্দিতে দেওয়া নুসরাতের মায়ের এসব তথ্য অস্বীকার করে এডিসি এনামুল করিম গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘ছি! আমি এসব কিছু বলিনি। আমি তো মামলা করায় তাদের ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। তারা যেন বিচার পান, সে কথা বলেছিলাম।’

এডিসি ছাড়াও নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষ নিয়ে সোনাগাজী থানার এসআই ইকবাল হোসেনের কর্মকাণ্ডের কথা। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আমি শিরিন আক্তার (৪৬)। স্বামী একেএম মুসা মানিক। গ্রাম চরচান্দিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ড, সোনাগাজী পৌরসভা। আমি গৃহিণী। নুসরাত রাফি আমার একমাত্র মেয়ে। তা ছাড়া আমার ৩ ছেলে আছে। রাফি তৃতীয় সন্তান।

৬ মাস আগে বেলা ৩টার দিকে রাফি মাদ্রাসা থেকে বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করছিল। আমি তাকে একাধিকবার জিজ্ঞেস করলে জানায়, ওইদিন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তাকে ক্লাসরুমে খুঁজতে গিয়ে পাননি। কিছুক্ষণ পর রাফি সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার পর অধ্যক্ষ তাকে দেখে কথা আছে বলে থামান। এ সময় রাফি অধ্যক্ষকে বলে, তার সঙ্গে কোনো কথা নেই। তখন সিরাজউদ্দৌলা রাফির ওড়না ধরে টান দেন। এ ঘটনায় রাফি কান্নাকাটি করে বলে আমাকে জানায়।’

‘কিছুদিন আগে আলিম টেস্ট পরীক্ষার সময় রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজ তার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তার কথামতো কাজ করার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে পরীক্ষার ফি দেওয়া লাগবে না বরং আরও টাকা দেওয়া হবে বলে জানান। অধ্যক্ষ ওইদিন রাফিকে বলেন, তুই তো অন্য ছেলেদের সঙ্গে কথা বলিস। আমার সঙ্গে কথা বললে সমস্যা কোথায়? প্রতিউত্তরে রাফি অধ্যক্ষকে বলে যে, আপনি হলেন আমার শিক্ষক, বাবার মতো। অন্য ছেলেদের সঙ্গে আপনার কি তুলনা হয়?

‘ওই ঘটনার পর গত ২৭ মার্চ বেলা ১১টার দিকে আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাসায় ফেরার আগ মুহূর্তে আমার ছেলে নোমানের কাছে জানতে পারি, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা এবার রাফির গায়ে হাত দিয়েছে। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার ছোট ছেলে রায়হানকে নিয়ে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায় আসি এবং অধ্যক্ষের রুমে যাই। অধ্যক্ষকে তার রুমে পেয়ে আমি বলি, কোন সাহসে তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছ?

এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে অধ্যক্ষ আমাকে বলে, তুমি কোন সাহসে অফিসে ঢুকেছ? এটা অফিস রুম। তখন আমি বলি, এটা অফিস রুম নয়, এটা ব্যভিচারের রুম। তখন অধ্যক্ষ একজনকে ফোন দেন এবং কিছুক্ষন পর সোনাগাজী থানা থেকে এসআই ইকবাল আসেন। এসআই এসে জিজ্ঞেস করেন, এখানে কী হয়েছে? আমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে দেখিয়ে বলি যে, তাকে জিজ্ঞেস করেন। তখন আমাকে দেখিয়ে অধ্যক্ষ বলে যে, এরা আমার অফিসে এসে হামলা করছে নাটক সাজিয়ে।

শিরিন আক্তার আরো বলেন, আমি পুলিশকে বলি, ওনাকে জিজ্ঞেস করেন আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে কেন? এ কথা বলার পর অধ্যক্ষ হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে অন্যরকম ভান দেখান।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!