• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের সহযোগিতায় পা ধরে ক্ষমা চেয়ে সেই মাকে ঘরে তুললেন ছোট ছেলে


জেলা প্রতিনিধি মে ১৯, ২০১৯, ০৪:০১ পিএম
পুলিশের সহযোগিতায় পা ধরে ক্ষমা চেয়ে সেই মাকে ঘরে তুললেন ছোট ছেলে

মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলেরা!” শিরোনামে সোনালীনিউজসহ বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলেদের হাতে মারধরের শিকার সেই মায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে ১২ দিন পর ঘরে তুলেছেন ছোট ছেলে। 

সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা মেট্রোপটিলটন পুলিশের উপ-কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল ও ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলামের ।

বৃদ্ধা মায়ের কষ্টের কথা শুনে চুপ থাকতে পারেননি ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তারা স্থানীয় বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই আমজাদ হোসেন ও হাবিবুর রহমান হাবিবকে দায়িত্ব দেন সেই মাকে ও তার ৩ ছেলেকে খোঁজার। 

শনিবার সারাদিন অনেক খোঁজাখুজি করে রাতে থানায় সেই মায়ের বড় ছেলে খলিলুর রহমান ও ছোট ছেলে খাজিজুল রহমানকে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ সময় মায়ের পায়ে পরে ক্ষমা চেয়ে আগামী সোমবার লাহিড়ী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ২০ শতক জমি ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন জমি লিখে নেওয়া ছোট ছেলে খাজিজুর রহমান। 

রোববার সকালে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ ছোট ছেলে খাজিজুল রহমানের হাতে সেই মাকে তুলে দেন।

সেই মায়ের নাম সালেহা বেগম (৯০) তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচ দোয়াল গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দীনের স্ত্রী। তার তিন ছেলের মধ্যে বড় খলিলুর রহমান, মেজো আব্দুল ও ছোট খাজিজুল রহমান।

সেই মা বলেন, বিয়ের পর ৩ ছেলের জন্ম হওয়ার কয়েক বছর পরই মারা যায় তার স্বামী। স্বামী শেষ সম্পত্তিটুকু আগলে অনেক কষ্টে বড় ছেলে খলিলুর রহমান, মেজো ছেলে আব্দুল ও ছোট ছেলে খাজিজুল রহমান নামে ৩ ছেলেকে লালন-পালন করি। পরে একে একে তিন ছেলেকে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের পর কোন ছেলেই আমার ভোরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। ১ মাস আগে স্বামীর শেষ সম্বল ২০ শতক জমিটুকুও জোড় করে ছোট ছেলে খাজিজুল রহমান টিপসই দিয়ে লিখে নেয়। 

১২ দিন আগে প্রথমে ছোট ছেলে খাজিজুল রহমান মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে বড় ছেলে খলিলুর রহমান ও মেজো ছেলে আব্দুলও মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। ছেলেদের মারধরে শিকার হয়ে ওই বৃদ্ধা মা কারও কাছে আশ্রয় না পেয়ে ১০ দিন ধরে ভিক্ষা করে খেয়ে না খেয়ে সরকারি অফিসের বারান্দায় রাত্রিযাপন করে আসছিলেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে মায়ের ২০ শতক জমি লিখে নেওয়া ও তাকে মারধরের কথা স্বীকার করে খাজিজুল রহমান। এ সময় এসআই আমজাদ হোসেন ওই ছেলেকে মারধর করার কথা বললে পুলিশের হাত ধরে তাকে মারতে নিষেধ করেন ওই মা। ছেলেকে মারধর সহ্য করতে পারবেন না বলে তাকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন মা। 

পরে সোমবার লাহিড়ী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করে নেওয়া ২০ শতক জমি ফিরিয়ে দিবেন ও নিয়মিত মায়ের দেখাশুনা করবেন এমন শর্তে বৃদ্ধা মাকে পুলিশ ছোট ছেলে খাজিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধা মাকে ঈদের শাড়ী, খাদ্য সামগ্রী ও নগদ টাকা তুলে দেওয়া হয়। 

খাজিজুল রহমান বলেন, ভুল বুঝে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম। এ কয়দিনে মায়ের অভাব বুঝতে পেরেছি। আর মাকে কষ্ট দিবো না। মায়ের সম্পত্তি মায়ের নামে লিখে দিবো।

ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধা মাকে ঘরে তুলেছে ছোট ছেলে। সেই সঙ্গে সোমবার জমি ফেরতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ। বাকি দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে থানায় আসলেও ছোট ছেলে পলাতক ছিল। বড় ছেলেও মায়ের দেখাশুনা করার কথা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে একজন এসআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মায়ের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। 

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!