• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
উদ্দেশ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮, ০১:৩৪ পিএম
পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে দেশের পোশাক খাতে একটি মহল অসন্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। পোশাক খাতের নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করেই সরকারবিরোধী বিশেষ মহলটি এই চক্রান্ত করছে।

কুচক্রী মহলটিকে শনাক্ত করতে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। একইসঙ্গে পোশাক খাতকেও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক খাতে যেন কোন অস্থিতিশীলতা দেখা না দেয়, তা কঠোরভাবে নজরদারি করতে সাত সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে এ কমিটি তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারি করবে। এ ছাড়া এক সপ্তাহ পর পর সভা করে পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গঠন করা কমিটিতে বাণিজ্য সচিব ছাড়াও রয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএয়ের সভাপতি ও শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক।

গার্মেন্টস সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি আগের তুলনায় দুই হাজার ৭০০ টাকা বাড়িয়ে নতুন ননূনতম মজুরি করা হয়েছে আট হাজার টাকা। যা গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে। আগে এই মজুরি ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা।

জারি করা গেজেটে বলা হয়েছে, সুপারিশকৃত নতুন বেতন কাঠামো চলতি ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হবে। গেজেট অনুসারে নতুন বেতন কাঠামো ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে ডিসেম্বর মাসের যে বেতন উত্তোলন করবেন, তা নতুন বেতন কাঠামো অনুসারেই পাবেন।

গার্মেন্টস শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাজেই এ বেতন কাঠামো নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে এখন আর কোনও ধরনের বিরোধ না থাকলেও সেই পুরনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল দেশের পোশাক শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের নামে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে। যেন নির্বাচনের আগে এ নিয়ে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। এতে বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে। এই হীন উদ্দেশ্যেই ষড়যন্ত্রকারীরা মাঠে কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বানচাল করা। দেশের তৈরি পোশাক খাত একটি স্পর্শকাতর খাত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের বায়ারদের নজর রয়েছে এদিকে। তাই এই খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলে অসাধু চক্রটি সহজে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বিশ্বের নজরে আনতে সক্ষম হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পোশাক খাতের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের মজুরি আগের তুলনায় গড়ে ৫১ শতাংশ বাড়লেও বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসেন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন চান না, তারা বিভিন্নভাবে নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন বলে আমরা লক্ষ্য করছি।’

সূত্রমতে, বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই সরকার এই খাতে কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, নির্বাচন শেষে বিজয়ী দলের নেতৃত্বে নতুন সরকারের শপথ ও দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ নজরদারি চলবে। ইতোমধ্যেই তৈরি পোশাক খাত অধ্যুষিত অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, চট্টগ্রাম ও টঙ্গী এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানাগুলো নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। একইসঙ্গে ‘শ্রমিক নেতাদের’ গতিবিধিও নজরে রাখছেন দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তৈরি পোশাক খাতকে কেন্দ্র করে সরকার গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটিও একই কাজ করছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক সভায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থা স্থানীয় প্রশাসন পোশাক শিল্পের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশ অর্জিত হয় এই পোশাক খাত থেকে। দেশের এ অর্জনকে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। রফতানি আয়ের  গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

একইসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিজিএমইএ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে- এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স পরিস্থিতির উন্নয়নে গঠিত রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশনস সেল (আরসিসি)-এর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ এবং অসমাপ্ত রেডিয়েশন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত কোনও লোক কোনও কারণে যেন কর্ম-পরিবেশ বিঘ্নিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা সংস্থা বা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট থাকবে।
প্রত্যেক জেলার জন্য বিজিএমইএ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক পরিস্থিতি জানাবে। বিজিএমইএ পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নিয়মিত পরিশোধের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। সাত শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য শিল্পাঞ্চল পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর তাদের নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এ খাতের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলেছে। সেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই দেশের প্রধান রফতানি খাত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও কম্প্লায়েন্স প্রতিপালন বিষয়ে কোনও সমস্যা নেই। বর্তমানে এ শিল্পে সুন্দর কর্মপরিবেশ বিরাজ করছে।’

জানা গেছে, নজরে আনা কারখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় রয়েছে প্রায় দুইশো। দেড়শ কারখানা রয়েছে চট্টগ্রামে। এ ছাড়া বাকি কারখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ অন্যান্য এলাকায়। অসন্তোষপ্রবণ এ সব এলাকায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ ছাড়াও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করছেস। নিয়মিত নজর রাখছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাই মন্ত্রণালয় সেই কাজটি করছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু নজরদারি নয়, প্রয়োজন হলে অ্যাকশানেও যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খরা রক্ষায় প্রয়োজনে যেকোনও কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছ পা হবে না সরকার। যেকোনও মূল্য নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হতে দেবে না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!