• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আজই রাষ্ট্রদোহ মামলা হচ্ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২১, ২০১৯, ১০:৩৪ এএম
প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আজই রাষ্ট্রদোহ মামলা হচ্ছে

ঢাকা : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া প্রিয়া সাহার তথ্য ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছে সরকার। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার প্রিয়ার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। 

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন এক ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দিয়েছেন, রোববার (২১ জুলাই) আদালত খোলার পরপরই প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবেন।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে প্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বক্তব্যের জন্য প্রিয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে অভিহিত করে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, প্রিয়ার বক্তব্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। 

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল সকালে এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, গত ১৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহা নামে এক বাংলাদেশির কথোপকথনের ভিডিও বাংলাদেশ সরকারের নজরে এসেছে। সেখানে প্রিয়া সাহাকে বাংলাদেশ থেকে তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কথা বলতে দেখা গেছে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেছেন, তাঁর জমি মুসলমান মৌলবাদীরা দখল করে নিয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা যাতে বাংলাদেশে থাকতে পারে সে জন্য তিনি ট্রাম্পের সহযোগিতা চেয়েছেন। ধর্মীয় স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিতে গত ১৬ থেকে ১৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আয়োজিত মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নেন প্রিয়া সাহা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যে ডাহা মিথ্যা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার তার তীব্র প্রতিবাদ এবং সর্বোচ্চ কড়া ভাষায় তাঁর মন্তব্যের নিন্দা জানায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যৎ কোনো উদ্দেশ্য থেকে বাংলাদেশকে হেয় করতে প্রিয়া সাহা মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প সাজিয়েছেন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আলোকবর্তিকা, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীরা বহুকাল ধরে শান্তিতে বসবাস করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ নাগরিককে (রোহিঙ্গা) সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের মানবিক আচরণ ও মহানুভবতা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।’

গত ১৬ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতা বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রিয়া সাহা উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এরপর তিনি বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।

এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতার স্বরূপ এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। এ সময় ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’

ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রকাশ করে। এর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশিরা নানা ধরণের মন্তব্য করছেন।

ইতিমধ্যে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রিয়া সাহার নালিশকে চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেয়া ওই নারীর অভিযোগ সত্য নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে-অপরকে শ্রদ্ধা করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রিয়া সাহার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেলে হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সঙ্গে কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে ফোন রেখে দেন।

তবে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা তার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এ বিষয়ে তিনিই ভালো ব্যাখা দিতে পারবেন।’

প্রিয়া সাহা কিভাবে হোয়াইট হাউজের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন এই প্রশ্নে তিনি বলেন,‘প্রিয়া সংগঠনের ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজন। তাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সেখানে পাঠানো হয়নি। ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি কিভাবে সাক্ষাত করেছেন তা আমি জানি না।’

প্রিয়া সাহার বেসরকারি সংস্থা সংস্থা ‘শারি’-এর কার্যালয়ের অন্যান্য সদস্যরাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

সোনালীনিউজ/এএস
 

Wordbridge School
Link copied!