• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির চ্যালেঞ্জ অধিক প্রার্থী


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৯, ২০১৮, ০২:০৮ পিএম
বিএনপির চ্যালেঞ্জ অধিক প্রার্থী

ঢাকা : নির্বাচনি প্রক্রিয়া গুছিয়ে আনতে জোটের দলগুলোর সঙ্গে আসান ভাগাভাগির বিষয়ে শেষ সময়ে দরকষাকষি করছে বিএনপি। দলটির সংসদীয় আসনগুলোর বিপরীতে প্রার্থীর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কথা বললেও শরিকরা চান তাদের চাওয়া যেন পূরণ হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮০টিতে দলীয় মনোনয়নের জন্য ৮০০ প্রার্থীকে প্রত্যয়নপত্র (চিঠি) দিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে গত দুই দিন ও রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ছিল উৎসবমুখর। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া প্রায় সব আসনেই একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো আসনে তিন-চার জনকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূলত প্রথম পছন্দের প্রার্থীকেই চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে যদি কোনো আইনি জটিলতা না তৈরি হয়।

তবে যে কারণে একই আসনে একাধিক প্রার্থী দেয়া হয়েছে : ১. বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো; ২. মামলার কারণে প্রার্থিতা বাতিল হলে আসন শূন্য না রাখা; ৩. জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে চ‚ড়ান্তভাবে আসন সমঝোতা না হওয়া; ৪. ঋণখেলাপির কারণে কারও প্রার্থিতা বাতিল হলে যেন আসন শূন্য না থাকে। ৫. দলবদল করতে না দেওয়া।

এদিকে, বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রতিটি সংসদীয় আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহা ও আব্দুস সালাম আজাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গীবাড়ী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে, বিএনপির দুটি মোর্চায় রাজনৈতিক দল রয়েছে ২৭টি (জোটের ২৩ দল+ঐক্যফ্রন্টের ৪ দল)। এর বাইরেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক আমলা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজ মিলিয়ে বেশ কয়েকজনকে মনোনয়ন দিতে চান।

আসন ভাগাভাগির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে সংখ্যা নয়, জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে শরিকদের কাছ থেকে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আসন ছাড় দেয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন ভাগাভাগিতে দুটি বৃহৎ জোটের শরিকদের সন্তুষ্ট রাখা বিএনপির বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, ‘উইনেবল’ প্রার্থী হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে আপত্তি নেই তাদের। তবে সমঝোতা না হলে চ‚ড়ান্ত দরকষাকষির সময় আরও দুই-তিনটি আসনে ছাড় দিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ দলীয় জোটের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আমরা বরাবরই আস্থা দেখিয়েছি। গত নির্বাচনে অনেককে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আমরা বিএনপি নেত্রীর প্রতি আস্থা দেখিয়েছি। এ জন্য অনেককে জেল-জুলুমের শিকারও হতে হয়েছে। তাই প্রত্যাশা করি বিএনপি আর যাই করুক ২০ দলীয় জোট, যারা দুর্দিনের সঙ্গী তাদের সঙ্গে বেইমানি করবে না।’ ‘একটি কথা স্পষ্ট, বিএনপির আদর্শের সঙ্গে এই জোটের বেশির ভাগ শরিক দলেরই আদর্শ কাছাকাছি। তাই তাদের খুশি রেখেই আসন ভাগাভাগি করবে বিএনপি, এটাই বিশ্বাস।’

অপরদিকে, নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির ধূম্রজাল ততই বিস্তৃত হচ্ছে। নির্বাচন, ভোট এখন ‘কৌশল’ রাজনীতিতে আটকা। সরকার চাইছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, তবে সে নির্বাচনে বিরোধীপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থাকুক। এ কারণে নানা কৌশলের ফাঁদে বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টকে ফেলতে চাইছে সরকার। বিশেষত ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের শেষ পর্যন্ত কী হাল হয়, তাই নিয়ে ধন্দে দেশবাসী।

সরকারের কৌশলের জাল ছিঁড়তে বিএনপিও এখন মরিয়া। টানা এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি এখন ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকা’ মনে করছে। ফলে চলমান সংকট উত্তরণে সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করছে দলটি। নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ মেনে প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার একটি পাতানো নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে, ২০১৪ সালের মতো। এবার ভিন্ন কৌশল নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় আসতে চাইছে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে চাই।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তা সরকারের মধ্যে দিনদিন হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণেই সরকার জুলুম আরও বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে বিএনপির শতশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপিকে মাঠছাড়া করতেই সরকার নিপীড়ন করছে।’

‘আমরা মনে করছি, সামনের দিনে সরকার আরও নির্যাতন চালাবে। ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এসময় আরও অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন, কারও কারও মনোনয়ন বাতিল হতে পারে। আশঙ্কা করছি, গুম হয়ে যেতে পারেন নেতারা। এ কারণেই আমরা প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে বলেছি।’

এছাড়া বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গতকাল আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে তাতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আপাতত নির্বাচনে অযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল বিএনপির সিনিয়র নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকেও সাজা দেয়া হয়। দেশে ফিরেই গ্রেফতার হন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন। সূত্র জানিয়েছে, মামলা আর গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে আছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক নেতাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচন কমিশন বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থিতা বাতিল করে দিতে পারে। অনেকের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করে দিতে পারে। আবার কেউ কেউ ভয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি আসনে প্রার্থী রাখতেই বিএনপির আট শতাধিক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিএনপির এ কৌশলে সায় দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টও। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। তিনি বলেন, ‘আমরা জোট করেছি বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে। মানুষ পরিবর্তন চাইছে। আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এ কারণেই নানা কৌশল নিয়ে আমাদের এগোতে হচ্ছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছে।’

‘সরকারের আচরণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যকার আলোচনার মধ্য থেকেই’- যোগ করেন মোস্তফা মহসিন মন্টু।

প্রসঙ্গত, গত দুদিনে ২০ দলীয় জোটের শরিকসহ প্রায় ৮০০ প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেয় বিএনপি। প্রতিটি আসনের একাধিক প্রার্থী রাখায় মনোনয়নের চিঠি নিয়ে রয়েছে অসন্তোষও। তবে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী কে হচ্ছেন তা ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত জানা যাচ্ছে না। ওই দিনই প্রতীক বরাদ্দের জন্য ইসিকে শেষ চিঠি দেবে বিএনপি।

প্রথম দিনে বরিশাল, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রত্যয়নের চিঠি ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর বিভাগের অনেকে মনোনয়নের চিঠি পান। দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের প্রার্থীদের প্রত্যয়নের চিঠি দেয়া হয়।

প্রার্থী মনোনয়নে ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচিত প্রার্থী এবং পুরনো নেতাদেরই প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থী পরিচিতি পেয়ে যারা দলের মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন, তাদেরও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অবশ্য ঢাকায় অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!