• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা আ.লীগের


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৫, ২০২০, ০৩:৪৮ পিএম
বিজয়ের লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা আ.লীগের

ঢাকা : ঢাকার জোড়া সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় দলটি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো দলের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়া এবং সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে দুই সিটির নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা।

প্রার্থীদের জয়ের লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা নিয়ে শিগগিরই মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ ঢাকা মহানগরের দুই অংশের নেতা এবং মূল দল ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এ তথ্য জানায়।

সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কোনোভাবেই হারা যাবে না, এমন পরিকল্পনা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মাঠে নামতে নির্দেশ আছে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সব ভোটারের ঘরে ঘরে নেতাদের পৌঁছাতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে নির্দেশও দিয়েছেন।

নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচনের মাঠে নেতাকর্মীদের নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলের দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে ঢাকার দুই অংশের নির্বাচন সামলানোর দায়িত্বও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে নানা চিন্তাভাবনা চলছে।

এমনকি সদ্য বিদায়ী খ্রিস্টীয় বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। নির্বাচনের বিষয়ে দলের আরো কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলও শিগগির অনুষ্ঠেয় দলীয় শীর্ষ কোনো বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, জাতির পিতা ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের আয়োজন চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে।

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে তার জন্মশতবর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হোক, এমনটা ক্ষমতাসীনরা চান না।

রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন হবে সার্বজনীন, সে লক্ষ্যেই প্রস্তুতি চলছে। ফলে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবার অনেক সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র বলছে, বিএনপি ইতোমধ্যেই ভোট নিরপেক্ষ হবে না বলে মাঠ গরম করছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়েও তারা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলে বিএনপিসহ অন্যরা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই।

তাই আওয়ামী লীগ ভোটের আগেই জনমনে এমন একটা ধারণা জন্ম দিতে চায়, তারা শুরু থেকেই বেশ গোছালো হয়ে ও পরিকল্পনা নিয়ে দুই সিটির নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই আওয়ামী লীগ নিজ প্রার্থীদের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের সন্দেহ দূর করতে প্রচারে কোনো ঘাটতি না রাখার পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামবেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর তুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচার যাতে বেশি হয়, মাঠে নামার আগে তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দলীয়প্রধানের নির্দেশও আছে। এবারের নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ‘অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক’ সৃষ্টির বিষয়েও আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকবে।

গত নির্বাচনের মতো ভোটের দিন মাঝপথে বিএনপি ভোট ‘বর্জনের’ ঘোষণা দিয়ে এ নিয়ে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করতে চাইলেও এর যথাযথ জবাব দেওয়ার জন্যও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তুত থাকবেন। এ লক্ষ্যে কৌশলও ঠিক করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে নানা তৎপরতাও থাকলেও নির্বাচন সামলানোর জন্য এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কমিটি করা হয়নি। তবে দু’একদিনের মধ্যে কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য দুটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়।

দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ডিএসসিসির আর উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ ডিএনসিসির জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। আমুর নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন।
তোফায়েলের সঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন।

মাহবুব-উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনেই গুরুত্ব দিয়ে অংশ নেয়। ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন এর ব্যতিক্রম নয়। এ জন্য দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।’

নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে জনপ্রিয় মুখ ও সামাজিকভাবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন বছরে ‘শুদ্ধ আওয়ামী লীগের’ পা রাখার মাসেই দলটি মুখোমুখি হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের।

২০২০ সাল শুরুর আগেই দল ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে নতুন করে সাজিয়ে বিতর্কমুক্ত করার কার্যক্রমের বাস্তবায়িত হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!