• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভালো নেই এরশাদ


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২২, ২০১৯, ০১:০৮ পিএম
ভালো নেই এরশাদ

ঢাকা : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চিকিৎসার জন্য আবারো সিঙ্গাপুরে গেছেন।

সম্প্রতি সাবেক এই সামরিক শাসকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এবং মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে তিনি দ্বিতীয় দফায় সিঙ্গাপুরে গেলেন চিকিৎসার জন্য।

এর ঠিক আগে আগে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং জেনারেল এরশাদের ভাই জিএম কাদের জানিয়েছেন, তার ভাই বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ তিনি (এরশাদ) খুবই দুর্বলতায় ভুগছিলেন। তিনি আস্তে আস্তে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছিলেন। এখানকার চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছিলেন সেটা কাটাতে, কিন্তু সেটার প্রগ্রেস আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।

তিনি জানান, সেজন্যই সিঙ্গাপুরে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সেখানে আরো একবার পাঠানো হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, তার বর্তমান অবস্থা এখনো আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। তবে রোববার (২০ জানুয়ারি) যে অবস্থায় তিনি গেছেন, সোমবার (২১ জানুয়ারি) সকালে তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে আমাকে জানানো হয়েছে।

জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভালো আছেন, সুস্থ্য আছেন। সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসা চলছে। আশা করি তিনি দ্রুতই সুস্থ্ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।

সোমবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি তুলে ধরেন।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি থাকাকালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে গেছেন, উপজেলা পদ্ধতি প্রণয়ন , রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ করে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে দেশে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে তার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শুধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলেই দেশে দুর্নীতি তুলনামূলকভাবে কম ছিলো। মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ছিলো, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এ সময় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দেশের হতদরিদ্র মানুষের কথা বলেতে জাতীয় পার্টি কখনই পিছপা হবে না। গঠনমূলক সমালোচনা এবং সংসদীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে গণমানুষের পক্ষে অবস্থান নেবে জাতীয় পার্টি। সাধারণ মানুষের পক্ষে থেকে ৮০ ভাগ জনসমর্থন অর্জন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনের লক্ষ্য আছে জাতীয় পার্টির।

এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, সম্পদকমণ্ডলীর সদস্য শফিউল্লাহ শফি, সুলতান মাহমুদ, এম এ রাজ্জাক খান, হাসিবুল ইসলাম জয়, গোলাম মোস্তফা, সৈয়দা পারভীন তারেক, ডা. সেলিমা খান, নিগার সুলতানা রানী সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কাকরাইল অফিসে এরশাদের সুস্থতা কামনা করে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইলে খতমে শেফা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এরশাদের শরীর ভালো না, খুব খারাপ : একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় পার্টির পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারিরীক অবস্থা ভালো না, খুব খারাপ।

শনিবার (১৯ জানুয়ারি) তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় আনা হবে। এরপর রোবাবার (২০) জানুয়ারি দুপুর ১২টা বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে সিঙ্গাপুর নেয়া হবে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এরশাদের যোগদানের বিষয়টি অনিশ্চিত।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির যুগ্ম-যুব বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ স্বপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বুধবার (১৬ জানুয়ারি) স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। স্যারের শরীর ভালো নেই, আগামীকাল বাসায় যাবেন এবং পরশুদিন তার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা রয়েছে।

স্বপন বলেন, স্যার আমাদের বললেন, ‘আমার শরীর ভালো না, তোমরা আমাকে নিয়ে কোনো দুঃশ্চিন্তা করো না। তোমরা সবাই আমার জন্য দোয়া কোরো’।

তিনি আরো বলেন, স্যারের (এরশাদের) স্মরণশক্তি ঠিক আছে, সবাইকে চিনতে পারেন, সেলফোনও রিসিভ করেন, আবার হাঁটতেও পারেন।

এদিকে শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়,  জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর অবর্তমানে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালে পার্টির বর্তমান কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (এমপি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। চিঠিতে বলা হয়, পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক এই নিয়োগ প্রদান করা হলো। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এর কিছুক্ষণ পর এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের অবর্তমানে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালীন সময়ে পার্টির বর্তমান কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এই নিয়োগ প্রদান করেছেন। যা এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই এরশাদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনের আগে গত ১২ ডিসেম্বের সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন এরশাদ। ফিরেছেন নির্বাচনের ৪ দিন আগে (২৬ ডিসেম্বর)।

জাতীয় পার্টির এই নেতা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে জেনারেল এরশাদের হার্টের ভালভে একটি অপারেশন হয়েছিল। এছাড়া তিনি লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন, যে কারণে তার হজমেও সমস্যা হচ্ছিল। এর বাইরে তার রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সমস্যা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন জিএম কাদের।

জেনারেল এরশাদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে গেছেন তার ছোট ভাই হুসেইন মোর্শেদ এবং তার স্ত্রী। এছাড়া সঙ্গে আছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী।

অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা : গত কয়েকদিন ধরে এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে। কোনো কোনো খবরে সাবেক রাষ্ট্রপতি বাকশক্তি এবং চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলেও জানানো হয়েছে। তবে জিএম কাদের এসব খবর সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, তিনি (জেনারেল এরশাদ) অসুস্থ এবং খুবই দুর্বল, সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন সেটা একেবারেই মিথ্যা কথা।

তবে দুর্বলতার কারণে রোববার এরশাদকে হুইলচেয়ারে করেই তার বাসা থেকে বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে। অন্য সময়ে বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলে যান, কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি।

এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে কেন এত আলোচনা : গত দেড় মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলেন। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন অর্থাৎ ডিসেম্বরের ১০ তারিখে তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন।

ওই সময়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যা নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তিনি - ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে নির্বাচনের আগে ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন এরশাদ। তার আগে নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রায় দুই সপ্তাহ তিনি সিএমএইচে চিকিৎসা নেন।

জেনারেল এরশাদের অসুস্থতা বরাবরই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত বিষয়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। পরে দলটির নেতৃবৃন্দ এবং এরশাদ নিজেও সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে স্ব-ইচ্ছায় তিনি সেবার হাসপাতালে যাননি।

গত কয়েকদিনে সাবেক এই জেনারেলের অসুস্থতার খবর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি মূলত ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচে চিকিৎসা নেন, তবে তার চিকিৎসার বিস্তারিত প্রায় কখনোই প্রকাশ করা হয় না।

১৯৩০ সালে জন্ম নেয়া হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১ ফেব্রুয়ারি ৯০ বছর বয়সে পা দেবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!