• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
শিক্ষক লাঞ্ছনার মামলা

ভেজা চোখে শ্যামল কান্তি, সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি


আদালত প্রতিবেদক অক্টোবর ২৩, ২০১৮, ০৭:৪৮ পিএম
ভেজা চোখে শ্যামল কান্তি, সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি

ঢাকা : নারায়ণগঞ্জে স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবস ও লাঞ্ছনার মামলায় এমপি সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। আদালতে মঙ্গলবার এ মামলায় চার্জ গঠনের দিন ধার্য ছিল।

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম এমদাদুল হক তাকে অব্যাহতি দিয়ে আসামি অপুর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সংসদ সদস্য বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার কবির বাবুল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, এ ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্তে সেলিম ওসমানের নাম উঠে আসে। অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়ায় সেলিম ওসমান এবং অপুর বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল প্রতিবেদন দেওয়া হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি দিয়ে অপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

আদালতের এই আদেশের ব্যাপারে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে জানান, সরকারের কাছে তিনি সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করেছিলেন।

তিনি বলেন, মামলাটি আমি করিনি। তাই মামলা সম্পর্কে আমার কোন ধারণাও নেই। আমি কখনো আদালতেও যাই নি। তাই এই সুযোগে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান খালি মাঠে গোল দিয়েছেন। একজন প্রধান শিক্ষককে এভাবে প্রকাশ্যে নির্যাতন ও অপমান করায় সরকার আমার পক্ষ হয়ে মামলা করেছিল। তবে আমি ন্যায়বিচার পাইনি।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হতাশা ব্যক্ত করে শ্যামল কান্তি বলেন, ‘আর কি প্রতিক্রিয়া থাকবে? দু:খ প্রকাশও করতে পারছি না, আবার কিছু বলতেও পারছি না। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে দিলাম। তবে মনে একটা কষ্ট থেকেই গেল!

তিনি বলেন, উনি এম.পি মানুষ। উনার ক্ষমতা বেশি। সরকার উনার পক্ষে। আর আমি একজন সাধারণ শিক্ষক মাত্র। তাই আমি এ ব্যাপারে কোন প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিনি। প্রতিবাদও করিনি। সরকার যা ভালো বুঝে, তাই করুক। সেলিম ওসমানের জন্য জন্য দোয়া করি। উনি যেন আবার এম.পি হতে পারেন। মন্ত্রী হতে পারেন।

আদালতের এই আদেশের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি আবুল জাহের বলেন, সাংসদ সেলিম ওসমান যে নির্দোষ, এটা আল্লাহর রহমতে এবং সকল মানুষের দোয়ায় সত্য হিসেবে প্রমানিত হয়েছে।

তিনি মনে করেন, ঘটনার দিন সাংসদ সেলিম ওসমান না থাকলে হাজারো ধর্মপাণ মানুষের ক্ষোভ এবং আক্রমনে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের মৃত্যু হতে পারতো। বিচক্ষণ সেলিম ওসমান কৌশলে লোক দেখানো শাস্তির মাধ্যমে শিক্ষকের প্রাণ বাঁটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে জেলা জাতীয় পার্টির এই নেতা দাবী করেন।

উল্লেখ্য, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ২০১৬ সালের ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান। পরে শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।

এ ঘটনায় সেলিম ওসমান জড়িত কি না, সে বিষয়ে পরে ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে হাইকোর্ট প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠান। ১৪ মে সেলিম ওসমান এই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!